

সোমবার ● ২১ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » মৌলভীবাজারে আটঘর উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের আর্থিক দূর্ণীতি ঢাকতে সাজানো মামলা
মৌলভীবাজারে আটঘর উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের আর্থিক দূর্ণীতি ঢাকতে সাজানো মামলা
জিতু তালুকদার :: মৌলভীবাজার সদরের নাজিরাবাদ ইউনিয়নস্থিত আটঘর উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক ও পদাধিকার বলে ম্যানেজিং সম্পাদকের আর্থিক অনিয়ম ধামাচাপা দিতে মামলা করা হয়েছে বিদ্যালয়ের এডহক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। অভিভাবকদের পক্ষে ৪ জন অভিভাবক কর্তৃক মামলাটি (নং- ৭২/২০২৫ইং (স্বত্ত্ব) দায়ের হয়েছে মৌলভীবাজার সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে।
বাদ পড়া এডহক সভাপতি ও নতুন এডহক সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগপূর্বক, নতুন সভাপতিকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সভাপতি নিয়োগের দাবীতে দায়েরী এ মামলায়, হোসেনপুর গ্রামের মোতাহির মিয়া, আটঘর গ্রামের সাজন মিয়া, লুৎফা বেগম ও আমিনুল ইসলাম। মামলাটিতে এডহক সভাপতি মোঃ হুমায়ুন কবির, মোঃ মুজিবুর রহমান, এডহক অভিভাবক প্রতিনিধি মোঃ জরিফ মিয়া, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, সিলেট এর বিদ্যালয় পরিদর্শক, চেয়ারম্যান, মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জেলা প্রশাসক, কৌশলগতভাবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পদাধিকার বলে এডহক সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া এবং সহকারী শিক্ষক ও এডহক শিক্ষক প্রতিনিধি মোঃ শহিদুল ইসলামকে বিবাদী করা হয়েছে।
জানা গেছে- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, সিলেট এর বিদ্যালয় শাখার ২৪/০২/২০২৫ইং তারিখের ৩৭.১৪.৯১০০.০০০.৪০০.৫৭.০০০৭.২৫.৪৩৭নং স্মারকে এলাকার নাগরিক ও অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোঃ মুজিবুর রহমানকে সভাপতি করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট এডহক ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু, এর পরদিন ২৫/০২/২০২৫ইং তারিখে মোঃ মুজিবুর রহমানকে বাদ দিয়ে শাবিপ্রবির সিনিয়র ক্যাটালগার, বিদ্যালয় এলাকার নাগরিক ও শিক্ষানুরাগী মোঃ হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি করে ৪ সদস্যবিশিষ্ট নতুন এডহক ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। মোঃ হুমায়ুন কবির এ সংক্রান্ত পত্র পেয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে স্থানীয় অনেকের উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। কিন্তু, এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক আর সভাপতির ফোন রিসিভ করেন না। প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগের অপেক্ষায় থাকাবস্থায় তিনি মৌলভীবাজার সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের অন্তর্বতীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ ও কারণ দর্শানোর নোটিশ পান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহিন মিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়, স্বেচ্ছাচারিতা, লাম্পট্য ও বিভিন্ন অনিয়মের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের কিছুদিন পর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, উক্ত বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের ভাইয়ের কন্যাকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে শ্বশুরগোষ্ঠির আশ্রয় প্রশ্রয়ে চলছে তার অনিয়ম-দূর্ণীতি-স্বেচ্ছাচারিতা। তার কুপ্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় দীর্ঘ ৫ বছর দায়িত্ব পালণকারী এক শিক্ষিকাকে তিনি চাকুরীচ্যুত করেন। এ ঘটনায় শিক্ষিকা বিচারপ্রার্থী হয়েও বিচার পাননি।
রাষ্ট্রবাদী গুরুতর মামলাও ছিলো প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহিন মিয়ার বিরুদ্ধে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, বেসরকাির মাধ্যমিক- ২ শাখা, বাংলােদশ সচিবালয়, ঢাকা’র সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইছমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত বিগত ১৫/১২/২০২০ইং তারিখের ৩৭.০০.০০০০.০৭৩.৪১.১৩৬.১৭-৪৩৮নং স্মারকে ১) মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং ২) চেয়ারম্যাান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোড, সিলেট বরাবর বিতরণ এবং ৩৭.০০.০০০০.০৭৩.৪১. ১৩৬.১৭-৪৩৮/১(৪)নং স্মারকে ১) সিনিয়র সিস্টেম এনািলস্ট, আইিসিটি অধিশাখা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ২) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক- ২ অনুবিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ৩) শেখ রায়িব মিয়া গং (ম্যানেজিং কমিটির সদস্য), আটঘর উচ্চ বিদ্যালয়, সদর, মৌলভীবাজার বরাবর নির্দেশ প্রেরণ করা হয়েছিলো। কিন্তু, রহস্যজনকভাবে তা আলোর মুখ দেখেনি।
মোঃ শাহিন মিয়া যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি বিদ্যালয়ের কমবেশী ৯৬ লাখ টাকার কোন হিসাব প্রদান করছেন না। এ নিয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে আসন্তোষ রয়েছে। সম্প্রতি সরকারী বরাদ্দ ২ লাখ টাকা দিয়ে শ্বশুরগোষ্ঠিকে নিয়ে বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট শুরু করলে স্থানীয়রা আপত্তি করায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শেষমেষ ঈদুল ফিতরের পরে ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে মিমাংসার শর্তে স্থানীয় ইউপি মেম্বার উভয়পক্ষকে শান্ত করলেও, বিষয়টি এখনও মিমাংসা হয়নি। এককথায়- তিনি শ্বশুরগোষ্ঠির আশ্রয় প্রশ্রয়ে বিদ্যালয়টিকে তার পৈত্রিক সম্পত্তির মতো ভোগ-ব্যবহার করে আসছেন।
এমতাবস্তায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এডহক সভাপতি বিদ্যালয়ের আর্থিক হিসাব এবং সার্বজনীন সভা আহবান করতে বলায়, তার আর্থিক নয়ছয় ও অনিয়ম-দূর্ণীতি-স্বেচ্ছাচারিতা ধরা পড়ে যাবার ভয়ে, শ্বশুরগোষ্ঠির সহায়তায় প্রথমে ১৫ জনের স্বাক্ষর নিয়ে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর নতুন সভাপতিকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সভাপতি নিয়োগের আবেদন করান। পরবর্তীতে উপবৃত্তি দেয়ার নামে ৩ জনের স্বাক্ষর নিয়ে শ্বশুরগোষ্ঠির লুৎফা বেগমসহ ৪ জনকে বাদী করে নতুন সভাপতির বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দায়ের করান।
আটঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের এসব ঝামেলা সম্পর্কে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিনসহ ওয়াকিবহাল ১৯ জনের সাথে কথা এ প্রতিনিধির হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জন বলেছেন- আগেরদিন মোঃ মুজিবুর রহমানকে এবং পরদিন তাকে বাদ দিয়ে হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি অনুমোদন দেয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় বিভাজন-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় আমরা এ দুজনকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সভাপতি নিয়োগের জন্য শিক্ষাবোর্ডে লিখিত অনুরোধ করেছি। বাকী ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জনই এসব ঝামেলার জন্য প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহিন মিয়াকে দায়ী করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মোঃ মুজিবুর রহমান বলেছেন- শিক্ষাবোর্ড আমাকে সভাপতি নিয়োগের পরদিন আমাকে বাদ দিয়ে হুমায়ুন কবিরকে সভাপতি করেছে। আমার কোন দোষ থাকলে সেটা উল্লেখপূর্বক অবগত করে আমাকে বাদ দেয়া উচিৎ ছিলো। শিক্ষাবোর্ডের এ আচরণে আমি অত্যন্ত লজ্জিত হয়েছি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ সম্পর্কে আমি শুনিনি এবং জানিনা।
নতুন সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেছেন- আমার আগে মুজিবুর রহমানকে সভাপতি নিয়োগের বিষয়টি আমি পরে জেনেছি। আমাকে সভাপতি নিয়োগের পর আমি বিদ্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। পরবর্তীতে আমি প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের বিগত ৭ বছরের আর্থিক হিসাব প্রস্তুত করার এবং সকল শিক্ষার্থীর অভিভাবক, সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, নতুন এডহক কমিটির সদস্যবৃন্দ ও এলাকাবাসীকে নিয়ে ৪ এপ্রিল শুক্রবার একটি সার্বজনীন সভা আহবান করার অনুরোধ করে করেছিলাম। কিন্তু, এরপর থেকে তিনি আর আমার ডাকে সাড়া দেন না। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টায় থাকাবস্থায় আমি আদালতের নোটিশ পাই।
মামলার বাদী ৪ জনের মধ্যে লুৎফা বেগম ছাড়া অপর ৩ জনই উক্ত মামলা সম্পর্কে জানেন না। প্রধান শিক্ষক তাদের শিক্ষার্থীদেরকে উপবৃত্তি দেয়ার কথা বলে এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ও কাগজে তাদের স্বাক্ষর নিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহিন মিয়ার বক্তব্য গ্রহণরত অবস্থায় তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর বার বার ফোন করলেও তিনি আর রিসিভ করেনননি।
