শনিবার ● ১৫ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আজ পহেলা আষাঢ়
আজ পহেলা আষাঢ়
আজ পহেলা আষাঢ়। জ্যৈষ্ঠের খরতাপে যখন চৌচির প্রকৃতি, ঠিক সেই সময় স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে আষাঢ়। ভরাবাদলে যেন যৌবন ফিরে পায় প্রকৃতি। গাছ-লতাপাতায় আসে নতুন প্রাণের সঞ্চার, গাছে গাছে শোভিত হয় হাজারো ফুল। প্রকৃতি ধুয়েমুছে হয়ে ওঠে সবুজ। পুরো প্রকৃতি সেজে ওঠে এক অপরূপ সাজে।
বর্ষা হঠাৎ যেমন যেমন আনন্দের, তেমনি বেদনার। বর্ষার নির্মম অব্যাহত অঝোর ধারা কখনো জনজীবনে ছন্দপতন নিয়ে আসে। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষদের পীড়ার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তাদের দিন এনে দিনাতিপাতে যথেষ্ট বিড়ম্বনা এনে দেয় বর্ষা।
কিন্তু নগরজীবনে আষাঢ়ের বৃষ্টি আশীর্বাদের বদলে বয়ে আনে দুর্ভোগ। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আর ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টি হলে সড়কে জমে হাঁটু পানি, কোথাও কোথাও কোমর পানি। নর্দমার নোংরা পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে যায়। চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আষাঢ় শব্দটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় আসে।
কালিদাস, বিদ্যাপতি, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, নজরুল, ফররুখ আহমেদ, সুফিয়া কামাল, আল-মাহমুদ প্রত্যেকেই কবিতায় বর্ষা বন্দনা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি,/পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে/আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।’ বর্ষা নিয়ে উচ্ছ্বসিত নজরুল লিখেছেন, ‘হৃদয়-যমুনা আজ কূল জানে না গো,/ মনের রাধা আজ বাধা মানে না গো।/ডাকিছে ঘর-ছাড়া ঝড়ের বাঁশি/অশনি আঘাত হানে দুয়ারে আসি’, গরজাক গুরুজন ভবনবাসী— আমরা বাহিরে যাব ঘনশ্যাম দরশে।’
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘এই জল ভালো লাগে;-বৃষ্টির রূপালি জল কত দিন এসে/ধুয়েছে আমার দেহ-বুলায়ে দিয়েছে চুল-চোখের উপরে/তার শান্ত স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে,-আবেগের ভরে।’
বর্ষা মানবমনে সঞ্চার করে অনন্ত বিরহ-বেদনা-সুখ। মনকে উদ্ভাসিত করে অপার সৌন্দর্যলোকে। বর্ষার এক চোখে অশ্রু, অন্য চোখে হাসি। বর্ষা আমাদের মনকে প্রয়োজনের জগৎ থেকে নিয়ে যায় অনন্ত অভিসারে অন্য কোথাও।
বর্ষায় কবি মন যাত্রা করে চির সৌন্দর্যের অমরাবতীতে। পরিচিত জগৎ-সংসারের বন্ধন তখন তুচ্ছ হয়ে যায়। মনে পড়ে প্রিয় বেদনার কথা।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে জন্যই হয়তো বলেছেন- ‘এমন দিনে তারে বলা যায়,/এমন ঘনঘোর বরষায়।’ কিংবা, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’
বিষয়: #আষাঢ়