রবিবার ● ১৬ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » সিলেট » সুরমা, কুশিয়ারা ও সারী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
সুরমা, কুশিয়ারা ও সারী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
উজানে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ৪ দিনের ভারী বৃষ্টিতে বাড়ছে সুরমা-কুশিয়ারাসহ সকল নদ-নদীর পানি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টি ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত চলমান থাকায় সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর এ ঈদের খুশির সঙ্গে সিলেটবাসীর দুয়ারে কড়া নাড়ছে বন্যা আতঙ্ক।
শুক্রবার (১৪ জুন) দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমলেও সন্ধ্যার পর থেকে আবারো শুরু হয় বৃষ্টি। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার (১৫ জুন) বেলা ১২টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টির কারণে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্ট ও সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রোববার (১৬ জুন) দুপুরে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারী নদীর পানি তিন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপরে বইছে।
এদিকে পানি বাড়ায় তিন উপজেলায় শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢলের পানিতে ফের তলিয়ে গেছে গোয়াইনঘাট উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলো। গত ৪ দিনের অতিবৃষ্টি ও সীমান্তবর্তী ভারতের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
ইতোমধ্যে গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের শিমুলতলা পয়েন্ট সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বন্যা ঝুঁকিপ্রবণ রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাঁও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
পানিবন্দীদের জরুরি উদ্ধার কার্যক্রম এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৪৭টি উদ্ধারকারী নৌকা (রেসকিউ বোট) প্রস্তুত রেখেছে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে এবং সারিঘাট পয়েন্টে সারী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এছাড়া সুরমা নদীসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে বইছে। ভারী বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর সুরমা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর প্রধান সড়ক তলিয়ে গেছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬২ মিলিমিটার।
শনিবার (১৫ জুন) সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৫ মিলিমিটার। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১ মিলিমিটার।
কিন্তু রবিবার (১৬ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত কত মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তথ্য দিতে পারেনি আবহাওয়া অফিস।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মাহ মোহাম্মদ সজিব হোসাইন বলেন, সিলেটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির পেছনে আর বৃষ্টি না থাকায় বৃষ্টিপাত কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, সিলেটের সকল নদীর পানি বেড়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা ও সারী নদীর পানি কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ ও সারিঘাটে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে সিলেটের সবকটি নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে।
অপরদিকে পাঁচদিন সিলেট অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর ডেঞ্জার লেভেল ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। শুক্রবার এ পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৯ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হচ্ছে ১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। শুক্রবার এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১৩ দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার। শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১৪ দশমিক ৫২ সেন্টিমিটার।
কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির ডেঞ্জার লেভেল ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার। শনিবার এই পয়েন্টে পানি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার। শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবহিত হচ্ছে।
সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হল ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার।
শুক্রবার (১৪ জুন) এই পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ১০ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার।
শনিবার (১৫ জুন) দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১২ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার। সারিগোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হলো ১০ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার। শুক্রবার এ পয়েন্টে নদীর পানি ছিল ৯ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার।
শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার। পিয়াইন (ডাউকি) নদীর জাফলং পয়েন্টে ডেঞ্জার লেভেল হল ১৩ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। শনিবার এ পয়েন্টে পানি ছিল ৯ দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার।
শনিবার দুপুর ৩টায় এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঈদে সবাইকে বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, বর্ষাকালে সুরমা নদীর কানাইঘাট এলাকার ডেঞ্জার লেভেল ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।
শুক্রবার এ পয়েন্টে পানি ছিল ১১ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার।
শনিবার দুপুর ৩টায় এ পয়েন্টে পানি ১৩ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিষয়: #ওপরে #কুশিয়ারা #নদী #পানি #বিপৎসীমার #সারী #সুরমা