বুধবার ● ১৯ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাইশের ভয়াল বন্যার পুনরাবৃত্তির ভয়, ছাতকে মানুষের চোখে ঘুম নেই
বাইশের ভয়াল বন্যার পুনরাবৃত্তির ভয়, ছাতকে মানুষের চোখে ঘুম নেই
আনোয়ার হোসেন রনি, ছাতক সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ জেলার দুই উপজেলার ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।বৃষ্টিপাত ছাড়াই নদ নদী সুরমা,চেলা বটের নদীতে ভোর থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে পাহাড়ি ঢলের পানি। সুরমা নদীর পানি ছাতক দোয়ারাবজার মল্লিকপুর পয়েন্ট সুরমা নদীর বন্যা পানির স্রোতে পাকা সড়ক ভেঙ্গে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার বা ২.২৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।অবিরাম বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এবার বানভাসীদের মানুষের ঈদের আনন্দ মাটি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গেল বারের মতো ভয়াল বন্যার আশঙ্কা।
গত সোমবার (১৭ জুন) ঈদের দিন ভোরেই সুরমা নদীর পানি উপচে ছাতক শহরে প্রবেশ করে। বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার মধ্যেই মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করতে পারলেও অনেকেই যথাসময়ে পশু কোরবানি করতে পারেননি। বৃষ্টি থামার পর দুপুর থেকে পানি কিছুটা কমতে শুরু করে।
মঙ্গলবারও (১৮ জুন) সারাদিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়। তবে এতে সাময়িক সময়ের জন্য মানুষের মনে স্বস্তি ফিরলেও তা স্থায়ী হয়নি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস তাদের জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে আনতে পারছে না। পূর্বাভাসে বলা আগামী কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কার কথা শুনে ২০২২ সালের ভয়াল বন্যার পুনরাবৃত্তির আতঙ্ক নিয়ে নির্ঘুম রাত পার করেছেন ছাতক দোয়ারাবাজারে মানুষ।
আবহাওয়া পূর্বাভাসের বিভিন্ন মডেল বলছে,গত বুধবার (১৯ জুন) ভোরেই আবারও শুরু হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায়ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে বেশী। এতে ছাতক দোয়ারাবাজার বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ২০২২ সালের ১৭ জুন ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল ছাতক দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ বেশিরভাগ এলাকা। গভীর রাতে চোখের পলকেই তলিয়ে যায় পুরো গ্রাম শহর হাট বাজার।
একতলা বাড়ির বাসিন্দারা সাঁতরে বেরিয়ে উঁচু ঘরবাড়িতে আশ্রয় নেন। যারা নিচু ঘরে ছিলেন, তারা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে বানের পানি, বিষাক্ত পোকা মাকড় ও সাপের কামড়ের ভয় নিয়ে বিভীষিকাময় সময় পার করেছেন। ভেসে চলে যায় বহু গবাদিপশু। এখনো সেই দুঃস্মৃতি তাড়া করে ছাতক দোয়ারাবাজারে মানুষকে, বৃষ্টি হলেই বড় বন্যার ভয়ে তারা শিউরে ওঠেন।
উপজেলার উত্তর খুরমা ইউপির আলমপুর,দাহার গিলাছড়া মোহনপুর,তেরাপুর মৈশাপুর তকিরাই নোয়াগা্ও গ্রামে প্রতিটি ঘরে ঘরে পানি উঠেছে। এসব গ্রামে হাস মুরুগ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
এসব গ্রামে খোজ খবর কেউ নিচ্ছেন না বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন।
গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাও ইউপির গোবিন্দনগর গ্রামের রজব আলী, আইয়ুব আলী রফিক আলীর বসত তিনদিন ধরে ঘরে পানি উঠেছে। ঘরে শুকানো খাবার নেই। এখনো কোন জনপ্রতিনিধি তাদের দেখতে আসেনি। রাতে তাদের পরিবারের কেউ ঘুমানি ।
ছাতকে পৌর শহরের কাঁচাবাজারে হাঁটুর উপরে পানি। পশ্চিমবাজার, মধ্যবাজারে বন্যার পানি উঠছে। বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শহরে ঢুকছে পানি। হুট করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে শহরবাসী। নদীর পাড়ের বাসিন্দারা ঘরে থাকার মতো অবস্থা না থাকায় ঘরবাড়ি চেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন।
অনেকে ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে হাজার পরিবার উঠেছেন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা সকল নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্বাঞ্চলের মানুষের বসত ঘরে পানি উঠে গেছে। ছাতকে সুরমা নদী পানি বিপদসীমার ১৫৫ সে.মি বা ৫.০৯ ফুট উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার আশংকা করছে প্রশাসনও।
অপরদিকে পাহাড়ি ঢল নেমে আগে থেকেই প্লাবিত ছিল ছাতক,দোয়ারাবাজার ৪ শতাধিক গ্রাম, ৩ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্টান,২০টি হাটবাজার। প্রায় সব কয়টি উপজেলাতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ও তবে বেশী এফেক্টেড হয়েছে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলাবাসীরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, ছাতকে বিপদসীমার ১৫৫ সে.মি বা ৫.০৯ ফুট উপর দিয়ে সুরমার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক দোয়ারাবাজারে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে, সেজন্য পানি বিপদসীমার উপরে থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জের ছাতকে ৯৫ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ছাতক উপজেলা নিবাহী কমকতা গোলাম মোস্তফা মুন্না যুগান্তরকে জানান, আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে শুকনো খাবার, ওষুধপত্র বা স্যালাইন পৌঁছানো ব্যবস্থা করা হয়েছে। রান্না করা খাবারও বিতরণ করা হবে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেননি, তাদের নৌকা বা বিভিন্ন পরিবহন দিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ও ১৩টি ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌর সভার মেয়র সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়াই বন্যায় যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম বাড়ানো না হয়, সেজন্য মহাজন ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করে বলেছি, দুঃসময়ে-দুর্যোগে মানবকল্যাণই বড়। তারা যেন নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, গত কয়েকদিন ধরে সুনামগঞ্জ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে সুনামগঞ্জের কিছু পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। বিশেষ করে ছাতক,দোয়ারাবাজার সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় আমরা ৫১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। যাদের প্রয়োজন তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রিতদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি আরও বলেন, ছাতক, দোয়ারাবাজার,সদর বেশী এফেক্টেড।
এছাড়া জেলা প্রশাসক ও ইউএনও স্থানীয়দের উদ্দেশে সরকারি ফেসবুক পোস্টে তারা বলেছেন, সুনামগঞ্জে অতিবৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পানি আরও বাড়তে পারে। আতঙ্কিত হবেন না, সতর্ক হোন। নিরাপদ স্থানে থাকার চেষ্টা করুন। এই দুর্যোগের সময়ে একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। সবাই মিলেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
বিষয়: #ঘুম #চোখ #ছাতক #বন্যা #বাইশের #ভয়াল #মানুষ