রবিবার ● ২৩ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ, সাজলো ‘রোজ গার্ডেন প্যালেস’
৭৫ বছরে আওয়ামী লীগ, সাজলো ‘রোজ গার্ডেন প্যালেস’
বজ্রকণ্ঠ নিউজঃ
একটি স্বাধীন দেশের জন্য দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের সূচনা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রচনার সূতিকাগার এই দলটির ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জয়ন্তী’ আজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ নিয়ে এসেছে দলটি। যেখান থেকে লড়াই-সংগ্রামের সূচনা শুরু হয়, সেই ভবনটি হলো ‘রোজ গার্ডেন প্যালেস’।
ঐতিহাসিক এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ও নানা আয়োজনের পাশাপাশি নতুন করে সাজানো হচ্ছে ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন প্যালেস।
ঐতিহাসিক এ ভবনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন। রাজধানীর টিকাটুলীর কেএম দাস লেনে অবস্থিত এই বাড়িটিতেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেম এর নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কে এম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্রাসাদে “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ” প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সভাপতি হন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেয়া হয় এবং নাম রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।
শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর টিকাটুলীর কেএম দাস লেনে অবস্থিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ঐতিহাসিক ভবনটি ঘুরে দেখা যায়, ভবনে নতুন রঙের প্রলেপ করা হয়েছে। চারপাশে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন আলোকসজ্জার বাতি, ব্যানার ও পোস্টার।
এছাড়া আওয়ামী লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি ঘিরে রাখা হয়েছে বিভিন্ন আয়োজন। লেজার শো থেকে শুরু করে শিল্পকলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন প্যালেসে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে শেষ।
আলোকসজ্জা ও লেজার শোর কাজের তদারকি করা ‘মেইনস্প্রিং’য়ের সিনিয়র ম্যানেজার প্রতীক চৌধুরী বলেন, আমরা পুরো ভবনটা প্রজেকশন করছি। এখানে ভিজুয়ালি আওয়ামী লীগের ইতিহাস তুলে ধরবো। এ ছাড়া শিল্পকলার সাংস্কৃতিক আয়োজনও আছে।
স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের উদারপন্থি নেতারা নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। তখন তারা মোঘলটুলিতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবছিলেন।
কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলটি গঠিত হওয়ার জন্য কোনও অডিটরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহ্বান জানান। সেখানেই ২৩ জুন বিকালে ২৫০-৩০০ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ রাখা হয়। দেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।
রোজ গার্ডেনে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর মওলানা ভাসানীকে একটি নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করার দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে ৪০ জনের একটি কমিটি ঘোষণা করেন। সেই কমিটির সভাপতি হন মওলানা ভাসানী।
সহসভাপতি করা হয় আতাউর রহমান খান, আহমেদ আলী খান, আলী আমজাদ খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খান। সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে আটক থাকলেও, আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয় তাকে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিল তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল।
দীর্ঘ এই চলার পথে আওয়ামী লীগের সামনে এসেছে নানা বাধা-বিপত্তি, দুর্যোগ-দুর্বিপাক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা থেকে শুরু করে, সামরিক জান্তাদের রোষানল, নিষেধাজ্ঞা, হামলা-মামলাসহ কণ্টকাকীর্ণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বারবার হোঁচট খেয়ে দলটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন যতটুকু শক্তিশালী, তা যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য ঈর্ষণীয়। আওয়ামী লীগ মানেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল ধারা। বাংলাদেশের কাদা-মাটি গায়ে মাখা খেটে খাওয়া মানুষের কাফেলা। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য ও অর্জনের নাম আওয়ামী লীগ। এদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগের ভূমিকা প্রত্যুজ্জ্বল।
বিষয়: #আওয়ামী #গার্ডেন #প্যালেস #রোজ #লীগ #সাজলো