সোমবার ● ১ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য ডাইরি » রাঙিয়ে_দিয়ে_যাও
রাঙিয়ে_দিয়ে_যাও
সিনথিয়া আক্তার তিথি :
“পালিয়ে যা মিথু”
নিজের মামিমার মুখে কথা টা শুনে কিছুই বুঝতে পারলো না নাহ মিথিলা। হুট করেই মাঝ রাতে কেনো তাকে তার মামী পালিয়ে যেতে বললো বোধ হলো নাহ তার। এদিকে তার মামিমা তাকে আবার তারা দিয়ে বললো,
~মিথু রে তাড়াতাড়ী পালিয়ে যা গ্রামের সকলে সেই দিনের ঘটনা জাইনা গেছে । ওরা তোরে তাই খুঁজতে আইতেছে মা, পালিয়ে যা তুই।
মামীর কথা শুনে ঘুম ঘুম ভাব উবে গেল। ভয়ে আতকে উঠলো সে। মামীমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো সে।
~আমি তো কোনো কিছুই চিনি নাহ মামিমা কই যামু আমি? আমি কি কইরাই বা চলমু?
মামী মিথিলার হাতে একটা ব্যাগ ও চিরকুট দিয়ে বললেন,
~এই হানে কিছু টাকা আছে আর তোর মায়ের গহনা আর একটা ফোনও আছে এইগুলো নিয়ে এহনি এই কাগজে লেখা ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা দিবি।
মিথিলা কান্না করতে করতে বলল,
~তোমারে ছাড়া কেমনে থাকমু আমি মামিমা? আমি যামু নাহ।
মামিমা মিথিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
~আল্লাহর দোহাই লাগে মিথু, এখনি এইহান থেকে চইলা যা । ঐ বাড়ির সবাই অনেক ভালো তোর অনেক ভালোবাসবো দেখিস। ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হইবো তোর লগে।
বলেই মিথিলার মাথাই ওড়না ভালো মতো দিয়ে, তার দিকে হাত ধরে পিছনের দরজার সামনে টেনে এনে বললো,
~ওরা আসার আগে চলে যা মারে। নাইলে অঘটন ঘইটা যাইবো।
মিথিলা মামিমাকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে বাগ কাধে নিয়ে পেছনের দিক দিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা বাস স্ট্যান্ডে গেলো। এই সময়ও কিছু কিছু গাড়ি পাওয়া যাই। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একটা বাস পেলো সে, বাসে উঠেই হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে। চোঁখের কর্নিশ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।
এইখান থেকে শুরু হবে মিথিলার নতুন জীবন। তাকে এবার হয়তো একাই লড়াই করে বাঁচতে হবে। মামিমার মতো কেউ আর তার পাশে দাঁড়াবে নাহ।
জীবনটা কিভাবে যেনো চোখের পলকেই বদলে গেলো। তার সুন্দর হাসি খুশি জীবন টা কি থেকে কি হয়ে গেল কয়েক দিনের ব্যবধানে।জীবন মানেই হয়তো এটা, ভাগ্যের কোনো এক প্রান্তে এসে আচমকাই তার মোড় ঘুরে যায়। মোড় গুলো তাকে খুব চিকন সরু পথের মতো। তাতে হাঁটতে হাঁটতে পরে গেলেই জীবনে হেরে যাবে আর যদি বুদ্ধির সাথে হাঁটো, সবকিছুর মোকাবিলা করো তাহলে এই জীবনের আসল বিজয়ী তুমি।
_______________________________
মিথিলা মামীমার দিয়া ঠিকানায় পৌঁছায় সকাল আট টায়। অচেনা কারোর বাড়িতে থাকতে হবে ভাবতেই অস্বস্তি হতে থাকে তার। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। বাড়িটা বিশাল জায়গা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে। দেখতে অনেক টা আগের আমলের বাড়ি গুলোর মতোই। বাড়ির সামনে অনেক বড় একটা বাগান আছে।
অনেক দ্বিধা নিয়েই মিথিলা বাড়িতে প্রবেশ করলো। বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই একজন মাঝ বয়সী মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো।
~কে তুমি মা? তোমায় তো চিনতে পারলাম নাহ?
মিথিলা অনেকটা সময় নিয়ে উত্তর দিলো,
~আমি মিথিলা আমাকে আমার মামীমা অর্থাৎ বুশরা খাতুন পাঠিয়েছেন।
মিথিলার কথা শুনা মাত্রই সে মিথিলা কে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন
~ওহ তো তুমিই সে যার কথা আমার বুশরা আমাকে বলেছে? তুমি তো দেখতে ভারী সুন্দর ঠিক তোমার মায়ের মতো।
মিথিলা তার কথার উত্তরে জোর পূর্বক হাসলো, কিন্তু কিছুই বললো নাহ।
মহিলাটি রান্না ঘরে গিয়ে শরবত বানিয়ে দিলো মিথিলা কে তারপর বললেন,
~অনেক দূর থেকে এসেছো নিশ্চয় অনেক ক্লান্ত তাই যাও এখন রেস্ট নাও ঐ যে ওই সাইডের রুমটা তোমার জন্যে গুছিয়ে রেখেছি। আমি রান্না গুলো শেষ করি ততক্ষণে।
মিথিলা সত্যি খুব ক্লান্ত থাকায় শুধু আচ্ছা বলে দেখিয়ে দেওয়া ঘরের দিকে পা বাড়ালো। ঘরে গিয়েই নিজের ব্যাগ টা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। কাল রাতে দু’ চোঁখের পাতা একটুও এক করতে পারে নি সে।
লেখিকা:সিনথিয়া_আক্তার_তিথি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #দিয়ে #যাও #রাঙিয়ে