সোমবার ● ১ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » কেন কনজারভেটিভদের রঙ নীল ও লেবারের লাল?
কেন কনজারভেটিভদের রঙ নীল ও লেবারের লাল?
বজ্রকণ্ঠ নিউজ ডেস্ক:
যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ ভোটাররা তাদের টেলিভিশন, মেইলবক্স এবং সংবাদমাধ্যমে রঙের স্রোত দেখছেন। বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডের মতো, রাজনৈতিক দলগুলোও জানে, একটি স্পষ্ট রঙ ব্যবহার তাদেরকে সহজেই চেনাতে সাহায্য করে— হোক তা প্রচারণায় বা ভোটের সর্বশেষ ফলে।
৪ জুলাই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের নীল রঙের মুখোমুখি হবে লেবারের লাল রঙ। নির্বাচনে জেতার জন্য দল দুটিরই কেবল বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আরও ছোট দলগুলোর বিভিন্ন রঙের সমাহার রয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের রঙ কমলা, রিফর্ম ইউকের ফিরোজা এবং গ্রিন পার্টির রঙ সবুজ। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি হলুদ রঙ ব্যবহার করে, যেখানে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সিন ফেইন এবং ওয়েলসের প্লেইড কিমরি প্রায় কাছাকাছি সবুজ রঙ ব্যবহার করে।
লাফবরো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক যোগাযোগের অধ্যাপক ডমিনিক রিং বলেছেন, যদিও পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত দলগুলো প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এই রঙগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে, তবে প্রচারণায় রঙের গুরুত্ব প্রযুক্তি ও বিজ্ঞাপনের উন্নতির সঙ্গে ১৯৫০ থেকে ১৯৭০-এর দশকে বিকশিত হয়েছিল।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, রঙিন টেলিভিশনের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞাপন শিল্পে পরিবর্তন আসে। তাই রঙ এবং আরও উদ্ভাবনী নকশাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সময়ে দলগুলো বার্তা সরলভাবে তুলে ধরা শুরু করেছিল।
সাধারণ ব্র্যান্ড স্বীকৃতির বাইরেও, বিভিন্ন রঙ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মূল্যবোধ এবং মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত। যেমন, হলুদ সাধারণত উদারতাবাদ, কালো অরাজকতা বা ফ্যাসিবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। বিশেষত ব্রিটেনে, ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ ইউনিয়ন অব ফ্যাসিস্টস-এর অনুসারীরা ‘ব্ল্যাকশার্টস’ নামে পরিচিত ছিল।
লেবার পার্টির জন্য, শ্রমিক ইউনিয়ন, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট এবং ডেমোক্র্যাটি সোশ্যালিস্টদের সঙ্গে মৈত্রীপূর্ণ একটি দলের জন্য লাল রঙ ছিল স্বাভাবিক পছন্দ। ফরাসি বিপ্লবের পর থেকে লাল রঙ বামপন্থি রাজনীতির সঙ্গে ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিল। অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মৃত শ্রমিকদের রক্তের প্রতীক হিসেবে লাল রঙ ব্যবহার করা হয়।
বিশ শতকের শুরুতে লেবার পার্টির প্রতিষ্ঠার সময়, দলটি তাদের আনুষ্ঠানিক লোগো হিসেবে একটি লাল পতাকা ব্যবহার করেছিল।
রিং বলেছেন, শ্রম আন্দোলনের সঙ্গে রঙটি মূলগত ও প্রতীকী ছিল এবং সেই সময় থেকে এটি রয়েছে। লেবার পার্টির লোগোটি এখন লাল গোলাপের রঙের সঙ্গে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভ পার্টি ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাজ্যের পতাকার তিনটি রঙ — লাল, সাদা ও নীল — গ্রহণ করেছে। সম্ভবত এটি ব্রিটিশ মূল্যবোধের রক্ষক হিসেবে নিজেদের প্রচারের জন্য দলটি এই রঙ বেছে নিয়েছে। এই তিনটি রঙের মধ্যে, আল্ট্রামারিন নীল এর প্রধান রঙ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।যদিও দলের বর্তমান গাছের লোগোটি পূর্বসূরিদের তুলনায় ফ্যাকাশে। ঐতিহ্যগতভাবে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রঙ হিসেবে নীল রঙ দীর্ঘদিন ধরে ধন-সম্পদ এবং রক্ষণশীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
ছোট দলগুলোর মধ্যে রঙ পছন্দ কখনও কখনও তুলনামূলকভাবে সরল ছিল — গ্রিন পার্টির পরিবেশবাদের সঙ্গে স্পষ্ট সংযোগের কারণে সবুজ রঙ ব্যবহার করে। অন্যরা আরও বাস্তবিক ছিল। উদাহরণস্বরূপ, লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের কমলা রঙ, যা তৈরি হয়েছিল দুটি দল থেকে: লিবারেল পার্টি (হলুদ) এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (যা তখন লেবারের লাল রঙের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে দলটি বিচ্ছিন্ন হয়েছিল)।
তবুও যুক্তরাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম দল–লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের–২০১৯ এর নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কমলা রঙের আরেকটি সুবিধা ছিল। এটি অন্য কোনও দলের দ্বারা দখল করা হয়নি। ১৯৭০ এর দশকে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির গুরুত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, সংঘর্ষজনিত হলুদ রঙ থেকে সরে এসে লিব ডেমদের থেকে নিজেদের আলাদা করা সহজ হয়ে যায়।
১৯৯০ এর দশকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সক্রিয় রেফারেন্ডাম পার্টি (গোলাপি), ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি (বেগুনি)-এর রঙ হয়তো তাদেরকে রাজনৈতিক বাজারে আলাদা করতে সহায়তা করে।
কিছু রঙের ঐতিহাসিক সংযোগ আছে। কোনোটিই মতাদর্শের সঙ্গে অমোচনীয়ভাবে যুক্ত নয়। ইউরোপের অন্যত্র কমলা উভয় ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটদের এবং পূর্ব দিকে পোস্ট-সোভিয়েত বিদ্রোহ (ইউক্রেনের তথাকথিত ‘কমলা বিপ্লব’)-এর সঙ্গে যুক্ত। ইউরোপের অন্য দেশে ইসলামিক দলগুলির পরিবর্তে পরিবেশবাদী দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সবুজ রঙ। বাদামি রঙয়ের সঙ্গে নাৎসি গোষ্ঠীর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংযোগ রয়েছে। এটি কানাডার মারিজুয়ানা পার্টির লোগোতেও স্পষ্ট।
নীল এবং লাল যথাক্রমে ডানপন্থি ও বামপন্থি দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে বলে যে সাধারণ ধারণা প্রচলিত রয়েছে তাও সামঞ্জস্যহীন। যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাটরা নীল, আরও রক্ষণশীল রিপাবলিকানরা লাল।যদিও ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে টিভি নেটওয়ার্কগুলো বিপরীত রঙ ব্যবহার করত। ‘লাল রাজ্য’ এবং ‘নীল রাজ্য’-এর বর্তমান ধারণাটি ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পর্যন্ত প্রচলিত ছিল না।
অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে রঙয়ের প্রচারণার পরও ভোট দেওয়ার দিনে ভোটাররা যখন বুথে যাবেন, তাদের চূড়ান্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য বিভিন্ন রঙ প্রদর্শন করা হয় না। কারণ ব্যালট পেপারগুলো কালো ও সাদা রঙে মুদ্রিত হয়।
সূত্র: সিএনএন
বিষয়: #কনজারভেটিভ #কেন #নীল #রঙ #লাল #লেবার