শনিবার ● ৬ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » লাইফস্টাইল » ফেসবুক পেজে গৃহস্হালী কাজের জন্য সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট
ফেসবুক পেজে গৃহস্হালী কাজের জন্য সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট
মেয়েটার নাম আমিনা। Toronto এর স্হানীয় BCCB নামের একটা ফেসবুক পেজে গৃহস্হালী কাজের জন্য সহযোগিতা চেয়ে পোস্ট দিয়েছে। ফিলিপিনো ক্লিনাররা আজকাল যেমন ব্যস্ত, তেমনই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের কাজের। তাই বাঙালী এই মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করলাম। ফোনে সে ভীষণ আগ্রহ দেখালো, কিন্তু রাস্তাঘাট তো চেনে না। ঠিকানা চেক করে দেখি আমাদের বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের ড্রাইভ। আমি ফোনে বললাম তোমাকে নিয়ে আসবো এবং বাসের রুটটাও দেখিয়ে দিব। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে কল দিতেই যে বেরিয়ে এলো তাকে দেখে আমি অবাক। ফুটফুটে সুন্দর ২৫/২৬ বছরের একটা মেয়ে ; দামী জামা-কাপড় পরা ; বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে। পরে শুনলাম বাবা ভুমি অফিসে চাকরী করেন। শ্বশুর ব্যাবসায়ী। স্বামী বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তাদের একটা ৪ বছরের মেয়ে আছে। কানাডায় ভিসিট ভিসা নিয়ে এসে পলিটিকাল এ্যাসাইলাম আবেদন করেছে। জিজ্ঞেস করলাম কানাডা কেমন লাগছে। সহজ উওর “কানাডা দূর থেকে সুন্দর”। বললাম কেনো? বললো “ আপু যা শুনে এসেছিলাম তার কিছুই ঠিক না। Youtuber রা তাদের ভিউ বাড়ানোর জন্য যা বলে বা দেখায়, বেশীর ভাগই মিথ্যা। এদেশে রাস্তাঘাট গাছপালা সুন্দর, তাতে আমার কি! এখানে আসবার পর বাংলাদেশী উকিল তাদের মিথ্যা কেস সাজিয়ে সাদা উকিল ( Canadian Lawyer) দিয়ে কেস করিয়েছে ; যে গল্পের পুরোটাই মিথ্যা। তাদের পাসপোর্ট জমা রেখে বর্তমানে রিফিউজি হিসেবে আছে। সরকার তিনজনের জন্য মাসে ১১০০ ডলার দেয়। ক্রেডিট স্কোর, জব নেই বলে কেউ বাসা ভাড়া দিচ্ছিলো না। এক বাঙালী ভদ্রলোক দয়াপরবশ হয়ে তার বাড়ীর বেসমেন্ট ২৩০০ ডলারে ভাড়া দিয়েছে। বাচ্চাসহ তিন জনের খাওয়া খরচ অন্তত ৬০০, বিদুৎ বিল, যাতায়াত এসব তো আছেই। তারা শুনে এসেছিল কানাডায় নামার সাথে সাথে কাজ রেডী। আসবার পর স্বামী এক দোকানে ১০ ডলার ঘন্টা হিসেবে দিনে তিন ঘন্টা কাজ করে ; তারাও খারাপ ব্যবহার করে। চট্টগ্রামের উঠতি তরুন ব্যবসায়ী ঘন্টায় ১০ ডলারে কাজ করে ; মেজাজ যায় বিগড়ে। প্রতিদিন ফিরে যেতে চাইলেও রিফিউজি বিধায় পাসপোর্ট নেই। ফিরে যাবার পথ বন্ধ। আমিনা তাই আর কোন উপায় না পেয়ে মানুষের বাসায় ঝাড়ু , মোছা,বাথরুম পরিস্কার রান্নার কাজ খুঁজছে ; ভাবা যায়! নিজের চার বছরের ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে আসতে পারে না ; সবাই পছন্দ করে না। মনে পড়লো দেশে অনেক সময় বুয়ারা বাচ্চা বাইরে গ্যারেজে বসিয়ে কাজ করতো। এখানে ঠান্ডার দেশে তো সম্ভব না। অথচ এই বাচ্চাটা দেশে তার স্বচ্ছল দাদা-দাদীর চোখের মনি। এই দম্পতি ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, দুবাই বেড়িয়েছে ; আমাকে ছবি দেখিয়েছে। আজ অন্যের বাসায় কাজ করছে। এ দেশে সব কাজের সম্মান আছে সত্যি, তা বলে টাকার জন্য অন্যের বাথরুম ধোয়ার কাজ খুশী মনে কোনো বাংলাদেশী করবেনা, করতে পারেনা। মেয়েটার আদুরে মলিন মুখটা দেখে ওর মায়ের কথা মনে হোল। বেচারী যদি জানে তার আদরী কি কঠিন কাজ করছে শুধু বেঁচে থাকবার জন্য। যে পরিমান মানসিক অত্যাচার আর হতাশার মধ্যে দিয়ে এই তরুন দম্পতি যাচ্ছে, তাতে কোনদিন যদি অর্থনৈতিকভাবে গুছিয়ে উঠতেও পারে, তাদের সুন্দর সম্পর্ক, আত্মবিশ্বাস, স্বপ্ন- এসব বেঁচে থাকবেনা তা আমি মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। মেয়েটি আমাকে দু:খ করে বলছিল “কেউ সাহায্য করে না আপু”। কে সাহায্য করবে? এদেশে বেশীর ভাগ বাঙালী দিন আনে দিন খায়। ফেসবুকের ছবি দেখে তাদের আত্মীয়, বন্ধুদের ধারনা হয় তারা স্বপ্নের দেশে আছে। বাংলাদেশের বাবা মায়েদের ঘুস আর কালো টাকায় চলা কিছু ছেলেমেয়ে বাদে বেশীর ভাগই বেসমেন্টে ভাড়া থেকে মানবেতর জীবন যাপন করে। এটা তারা Social Media তে দেখায় না বিধায় আমরা দেখিনা। বিদেশের মোহে অন্ধকারে ঝাঁপ দেবার আগে একটিবার ভাবুন। রিসার্চ করুন। রিফউজি হয়ে জীবনকে মুল্যহীন করে ফেলার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, প্রয়োজনে অন্যের বাড়ীর বাথরুম পরিস্কার করার জন্য আপনি তৈরী? বাবা মা মারা গেলেও দেশে যেতে পারবেন না অনির্দিষ্টকাল ; বাংলাদেশের অভিজ্ঞতায় সম্মানজনক কাজ পাওয়া রীতিমত অসম্ভব ; কঠিনতম এ জীবন বেছে নেবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন ; স্বামী-স্ত্রী থাকলে দুজনকেই সমান আগ্রহী হতে হবে। নয়তো Blame Game এ জীবন আরো বরবাদ। এমন আমিনা টরোন্টময়। শুনলাম এক ২৭ বছরের যুবক মারা গেছে কিছুদিন আগে। ডলার যা দেশ থেকে এনেছিল তা শেষ। খাবার টাকা নেই। বাড়ীভাড়া দেবার টাকা নেই, জব নেই। Stress আর নিতে পারে নাই। কানাডা স্বপ্নের দেশ ছিল এক সময়।যখন আপনি এসেছিলেন পরিবার পরিজন নিয়ে ; এখন আর নেই। আমি কাউকে Discourage করছি না। তবে জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত আমিনাদের মতো না জেনে বা স্বল্প জ্ঞানে নেবেন না। এই হতাশাময় জীবন কারো কাম্য হতে পারে না। (গল্প নয়,সত্যি )
(সূএ:- দৈনিক কালবেলা পএিকার রিপোর্ট থেকে সংগৃহিত) S
বিষয়: #পোস্ট #ফেসবুক. পেজে. গৃহস্হালী. কাজ. হযোগিতা