মঙ্গলবার ● ৯ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাংলাদেশিদের কিডনি পাচার, ভারতীয় চিকিৎসকসহ গ্রেফতার ৪
বাংলাদেশিদের কিডনি পাচার, ভারতীয় চিকিৎসকসহ গ্রেফতার ৪
বজ্রকণ্ঠ নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ ও ভারতে অবৈধভাবে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় পুলিশ। তার নাম বিজয়া কুমারী (৫০)। এছাড়াও তিন বাংলাদেশিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। গত সপ্তাহে দিল্লি পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এই পাচার চক্র দরিদ্র বাংলাদেশিদের অর্থের লোভ দেখিয়ে দিল্লির আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে আসত। সেখানে চক্রের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকরা তাদের কিডনি অপসারণ করতেন। ডা. বিজয়া কুমার যে চক্রটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই চক্রের অধিকাংশ সদস্য বাংলাদেশি নাগরিক। পুলিশ এখন এই চক্রের অন্যদের খুঁজছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী আরও জানা গেছে, ডা. বিজয়া কুমার দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থিত নয়ডা উপশহরের ‘যথার্থ’ নামের একটি হাসপাতালে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ জন ব্যক্তির কিডনি অপারেশন করেছেন। অপারেশনগুলো মূলত বাংলাদেশের দরিদ্র নাগরিকদের কিডনি অপসারণের জন্য করা হয়েছে। এই অপারেশনগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার বাসিন্দা রাসেল এবং সুমন মিয়া ও ইফতি নামের তিন বাংলাদেশি এবং ত্রিপুরার বাসিন্দা রতিশ পাল তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে আগ্রহী কিডনিদাতাদের মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দিল্লিতে আনতেন। তারা কিডনিদাতাদের চার-পাঁচ লাখ রুপি দিতেন, কিন্তু কিডনিগ্রহীতাদের কাছ থেকে নিতেন ২৫-৩০ লাখ রুপি।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এ চক্রটি দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে নয়াদিল্লির কিছু বড় হাসপাতালে নিয়ে যেত। সেখানে চক্রের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকরা তাদের কিডনি অপসারণ করতেন। কিডনিদাতা ও কিডনিগ্রহীতা দুজনই বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক দেখানোর জন্য চক্রটি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভুয়া নথি দিত। এই কিডনি পাচার চক্রটি ভুয়া নথি তৈরি করে সেই নথি বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দিয়ে অপারেশন পরিচালনা করত। পুলিশ এসব ভুয়া নথি উদ্ধার করেছে।
ভারতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে কয়েকজন কিডনিদাতাকে রাখা হয়েছিল। সেখানে কিডনিগ্রহীতাদের সঙ্গে কিডনিদাতাদের সাক্ষাৎ হয়। গ্রেফতারের সময় রাসেলের কক্ষ থেকে একটি ব্যাগে নয়টি পাসপোর্ট, দুইটি ডায়েরি ও একটি রেজিস্টার খাতা পাওয়া যায়। ডায়েরিতে দাতা ও গ্রহীতাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেনের তথ্য লেখা ছিল। এই চক্র দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশি রোগীদের দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রলোভন দেখিয়ে বিজয়া কুমারী ও তার সহযোগীদের কাছে নিয়ে আসতেন।
ডা. বিজয়া কুমার প্রায় ১৫ বছর আগে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সেখানে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ও কিডনি প্রতিস্থাপন সার্জন হিসেবে কাজ করতেন। নয়ডার ‘যথার্থ’ হাসপাতালেও ভিজিটিং কনসালটেন্ট ছিলেন তিনি।
এদিকে অ্যাপোলো হাসপাতাল বিজয়া কুমারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের কথা জানিয়েছে। হাসপাতালটির বক্তব্য, অন্য আরেকটি হাসপাতালে তার কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কিডনি চক্রের সঙ্গে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের কোনো যোগসূত্র নেই।
হাসপাতালের অতিরিক্ত মেডিকেল সুপারিটেন্ডেন্ট সুনীল বালিয়ান বলেন, বিজয়া কুমারী যেসব ব্যক্তির কিডনি অপসারণ করেছেন, তাদের কেউই ওই হাসপাতালের রোগী ছিলেন না। ভিজিটিং কনসালট্যান্ট হিসেবে বিজয়া কুমারী রোগী ভর্তির জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করতে পারতেন। যে ১৫-১৬ জন বাংলাদেশির কিডনি তিনি অপারেশন করেছেন, তাদের সবাইকে তার সুপারিশের ভিত্তিতেই ভর্তি করা হয়েছিল।
অন্যদিকে যথার্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিজয়া কুমারী তাদের হাসপাতালের স্থায়ী কর্মী ছিলেন না। তিনি শুধু তার নিজের রেফারেন্সে আসা রোগীদের ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতেন।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো ভারতেও অর্থের বিনিময়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে স্বেচ্ছায় অঙ্গ দানের ক্ষেত্রে আইনগত অনুমতি রয়েছে। সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
বিষয়: #কিডনি #গ্রেফতার #চিকিৎসকসহ #পাচার #বাংলাদেশি #ভারতীয়