বুধবার ● ১৭ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » সুনামগঞ্জে আমির হোসেন রেজার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করলেন সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ১১ মেম্বার
সুনামগঞ্জে আমির হোসেন রেজার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করলেন সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ১১ মেম্বার
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন পরিষদের ১১ জন নির্বাচিত ইউপি সদস্য। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ২য় দফায় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী মান্নানের কাছে লিখিতভাবে এই অনাস্থা দাখিল করেছেন তারা। বুধবার বিকেল ৩টায় শহরের শহীদ জগৎজ্যোতি পাঠাগার লাইব্রেরী মিলনায়তনে অনাস্থা প্রস্তাবের কথা জানান দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল হাই। এসময় ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আফসান পারভেজ,২নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ গিয়াসউদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল হাই, ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ খুর্শিদ মিয়া, ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য ফিরোজ মিয়া,৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো.মঙ্গল মিয়া, ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মুর্শেদ মিয়া,সংরক্ষিত ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সদস্যা মোছাঃ তানজিনা বেগম, সংরক্ষিত ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সদস্যা মোছাঃ সাহেনা আক্তার, সংরক্ষিত ৭,৮,৯ নং ওয়ার্ডের সদস্যা মাজেদা আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউপি সদস্য ও সদস্যারা বলেন,২০০৪ সালে সুরমা ইউনিয়নের সাবেক সদস্যগণ সর্বসম্মতিক্রমে স্বৈরাচার চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্তাপন করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে একাধিকবার প্রার্থী হয়েও দূনীতি ও অসদাচরণের কারণে উক্ত আমির হোসেন রেজা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারেননি। একাধিকবার তাকে দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সদস্যপদ এবং সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি কোনদিনই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেননি এবং প্রতিবারই দলীয় প্রার্থী ও নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় দল থেকে তাকে চিরতরে বহিষ্কার করা হয়।
মেম্বারগন বলেন,গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন সকল নাগরিকগণের সুবিধাজনক জায়গায় স্থাপন করবেন মর্মে প্রতিশ্রæতি দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পরও নির্বাচিত হন উক্ত আমির হোসেন রেজা। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি তার পূর্বের পরিষদের বিভিন্ন তহবিলের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন উগ্র, সন্ত্রাসী ও দূর্নীতিবাজ প্রকৃতির লোক হন। সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলা,দূর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও ইচ্ছাকৃত কুশাসন পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। আমরা নির্বাচিত মেম্বার ও মহিলা মেম্বারদের সাথে দুর্ব্যবহার ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য সহ আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা ঐ চেয়ারম্যানের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। বিভিন্ন সময় আমাদেরকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে এবং তার ভাতিজা র্যা বের হাতে গ্রেফতারকৃত চোরাকারবারী শিহাব ও তার বাহিনীর দ্বারা ভয়ভীতিসহ প্রাণে হত্যার হুমকি দেন এবং বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দে জোরপূর্বকভাবে আমাদের দস্তখত নিয়ে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল ও টাকা আত্মসাৎ করেন। ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদী, প্রতিভু মঈনপুর নিবাসী শিপু মিয়া ও তার বাহিনীর দ্বারা সুরমা নদীতে চাঁদাবাজি করিয়ে মোটা অংকের টাকা পকেটস্থ করেন। সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গা হতে মাটি কেটে নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটতরাজ করলে সদর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারি কর্মকর্তা মোঃ নূর আলী উক্ত চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজাসহ তার বাহিনীর ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা নং-২০ (জিআর ৪৭/২৪) তারিখ ১৪/০২/২০২৪ইং দায়ের করেন। এই মামলায় সদর থানার এস আই রিয়াজ উদ্দিন উক্ত আমির হোসেন রেজা ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জসীট দাখিল করেন।
লিখিত বক্তব্যে ইউপি সদস্যরা আরো বলেন,চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা,আমাদের সাথে কোনপ্রকার সমন্বয় না করে এককভাবে তার নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে টি.আর প্রকল্পের ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা, কাবিখা প্রকল্পের বরাদ্দকৃত এক হাজার ৬ শত কেজি চাল এবং এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করিয়াছেন। বদমেজাজি,উগ্র, সন্ত্রাসী আমির হোসেন রেজা বিভিন্ন সময়ে ইউপি সদস্যা মোছাঃ তানজিনা বেগম, ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ আব্দুল হাই এবং ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ গিয়াস উদ্দিন কে প্রাণনাশের লক্ষ্যে নিজে উপস্থিত থেকে সন্ত্রাসী বাহিনী সহকারে হামলা করেন। যে কারণে উক্ত স্বৈরাচার চেয়ারম্যানের অন্যায় আচরণে আমরা ইউপি সদস্য ও সদস্যাগণ এবং আমাদের ইউনিয়নের ভূক্তভোগী নিরীহ নাগরিকগণ অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। গ্রামের নিরীহ নাগরিক আশিক মিয়াকে মারপিট করলে উক্ত আমির হোসেন রেজা ও তার ভাতিজা শিহাবের বিরুদ্ধে আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সদর জোনে সিআর-২২৪/২০২৪ নং মামলা দায়ের হয়। উক্ত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত গত ১২ জুন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। পরিষদের সকল সদস্য ও এলাকার কৃষকদেরকে বাদ দিয়ে উক্ত চেয়ারম্যান তার ভাই ভাতিজার দ্বারা বাপপুতের পিআইসি গঠন করে গত ৪ বছরে অপ্রয়োজনীয় পিআইসির নামে বরাদ্দ নিয়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা পকেটস্থ করেছেন। এবারের বন্যা ও ২০২২ সালের প্রবল বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ পুর্ব ও পশ্চিম সদরগড়,ইব্রাহিমপুর, জগন্নাথপুর ও মইনপুরসহ সুরমা নদী তীরবর্তি গ্রামগুলো। প্রতিবারই বন্যার্তদের মধ্যে যেসব চালসহ ত্রাণসামগ্রী সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয় চেয়ারম্যান রেজা তা কখনও বানভাসীদেরকে প্রদান না করে সরকারের বরাদ্দকৃত চাল বিক্রয় করে কালো টাকা পকেটস্থ করেন। গত ২০ জুন ধোপাজান নদীর পাড়ে র্যা বের উদ্যোগে ৫শত ভানবাসীদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরন করা হয়। চেয়ারম্যান রেজা ধোপাজান নদীর পাড়ের প্রকৃত বানভাসীদের উপেক্ষা করে পরিষদের সকল সদস্যদেরকে পাশ কাটিয়ে একাই তার গোত্রীয় লোকদের মাঝে র্যা বের দেয়া ত্রাণসামগ্রী ভাগিয়ে নেন। এসব কারণে আমরা সর্বসম্মতভাবে স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ আইন ২০০৯ইং এর ৩৯ ধারার বিধানমতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছি।
অনাস্থা প্রস্তাব স্বীকার করে বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে শহরের উকিলপাড়াস্থ দোকানঘরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে অনাস্থাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা বলেন, অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে পরিষদের মেম্বাররা জোটবেধে আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল বলেন,এক বছর আগেও সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন সদস্য তাদের চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। তখন আমি অভিযোগকারী সদস্যদেরকে চেয়ারম্যান এর সাথে সমন্বয় সমঝোতা করে দিয়েছিলাম। এবার ৯ জনের জায়গায় ১১ জনে উন্নীত হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এই অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করা হয়েছে। আবার চেয়ারম্যান মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) আমাকে জানিয়েছেন তিনি চেয়ারম্যানের পদ হতে ইস্তফা দিয়েছেন। সুতরাং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যই নির্বাহী অফিসারকে অনুরোধ করেছি।
বিষয়: #অনাস্থা #আমির #ইউনিয়ন #করলেন #জ্ঞাপন #পরিষদ #প্রতি #মেম্বার #রেজা #সুনামগঞ্জ #সুরমা #হোসেন