শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » তৃতীয় পক্ষ আন্দোলনে প্রবেশ করে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় : আল জাজিরাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী
তৃতীয় পক্ষ আন্দোলনে প্রবেশ করে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় : আল জাজিরাকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী
‘ছাত্রদের আমরা দুর্বৃত্ত বা সন্ত্রাসী বলছি না। তৃতীয় পক্ষ আন্দোলনে প্রবেশ করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। আপনার কি মনে হয়? কারা জেল ভেঙে ৮২০ জন আসামিকে পালাতে সাহায্য করেছে? কারা অস্ত্র লুট করেছে? এরা তৃতীয় পক্ষ, যারা মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী। অতীতেও যারা একই কাজ করেছে। ২০১৫, ২০১৩ সালেও তারা একই কাজ করেছে। যারা আক্রমণ করেছে এবং যারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন তারা একইভাবে দায়ী না। যায় হোক, আমরা এসবের তদন্ত করবো।’ কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
‘টক টু আল জাজিরা’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ এ আরাফাতের এই সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। সাক্ষাৎকার নেন আল জাজিরার সাংবাদিক নিভ বারকার।
আল জাজিরা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চলছে। অন্তত ১৫০ জন নিহত হয়েছেন, যদিও সরকার এখনও হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করেনি। এসময় সারা দেশের ইন্টারনেট ও যোগাযোগ পরিষেবা ব্লাকআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আপনার মতামত কী?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: প্রথমত, সরকার নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য এবং পুনঃনিরীক্ষণের পর সরকার অবশ্যই নিহতের সংখ্যা ঘোষণা করবে।
ইন্টারনেটের বিষয়টি হলো, একেবারে শুরুর দিকে ১৮ জুলাইয়ের আগে কিছু জায়গায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। কারণ, অনেক ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছিল, যা আগুনে ঘি ঢালার মতো বিষয়। এসময় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছিল, অনেক যায়গায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সরকারের উদ্দেশ ছিলো শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু ১৮ জুলাই দুর্বৃত্তরা ডেটা সেন্টারে এবং দেশের বিভিন্ন যায়গায় ফাইবার অপটিক কেবলে অগ্নিসংযোগ করে। এর ফলে পুরো ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। সরকার ইন্টারনেট পরিষেবা পুনঃস্থাপন করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছিল এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করতে তিন চারদিন সময় লেগেছে। আমরা আবারও ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করেছি।
আল জাজিরা: যারা এই আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো এবং যারা নিহত হয়েছেন আপনি তাদের দুর্বৃত্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কতো দ্রুত আপনি নিহত নাগরিকদের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। ঠিক কী কারণে আপনি এখনও এ সংখ্যা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: এখানে কতজন আহত ও নিহত হয়েছেন তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকার যখন এ সংখ্যা উল্লেখ করবে তখন তা একেবারে সঠিক হতে হবে। এ জন্য সরকার সচেতনভাবে কাজটি করছে। আর আপনি জানেন, মাত্র গতকালই (বুধবার) অফিস খুলেছে। এর আগে সব বন্ধ ছিলো, কারণ আমরা বাংলাদেশে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিলাম। আর আহত ও নিহতের ক্ষেত্রে আমরা পুলিশ, সাধারণ জনতা বা আন্দোলনকারী অথবা সরকারের সমর্থকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করতে চাই না। প্রতিটা মৃত্যুই আমাদের কাছে শোকের। আমরা প্রতিটা মৃত্যুর জন্য নিন্দা জানাই এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানাই যারা তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন। এরইমধ্যে আমরা স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত শেষ হলে, হতাহতের জন্য দায়ী প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে, এটাই সরকারের প্রতিশ্রুতি। তবে আপনাকে জানাই, সারাদেশ যার মধ্য দিয়ে গেছে, আমরা প্রথমবারের মতো কারাগার ভাঙার ঘটনা দেখেছি। বিষয়টিকে কোনোভাবেই আন্দোলন বা অন্যকোনোভাবে বিবেচনা করা যায় না। নৈরাজ্যবাদীরা জেল ভেঙে ৮২৬ জন বন্দিকে পালানোর সুযোগ করে দেয়, যার মধ্যে দুর্ধর্ষ জঙ্গিও ছিলো এবং আক্রমণকারীরা হামলা চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ লুট করেছে। এসময় ১৬০ জন জেলকর্মীকে জিম্মি করা হয়।
আল জাজিরা: এত সংখ্যক ছাত্রকে দুর্বৃত্ত আখ্যা দেওয়ার মধ্যদিয়ে কোনোভাবে বাস্তব পরিস্থিতি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে না তো, যখন জনগণ চাকেরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: সরকার ২০১৮ সালে কোটা উঠিয়ে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ছাত্ররা এ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলো। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট সেই সরকারি প্রজ্ঞাপন বাতিল করে। এর ফলে কোটা আবারও ফিরে আসে। এর পর ছাত্ররা আন্দোলনে নামে। একই সময়ে সরকার হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। আমাদের এবং ছাত্রদের অবস্থান একই ছিলো। সেখানে কোনো ভিন্নমত ছিলো না। আমরা ছাত্রদের বলেছিলাম, হাইকোর্টের রায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরিবর্তন করা যাবে না, তাই আমরা আপিল বিভাগে চ্যালেঞ্জ করি যাতে আমরা সরকারের ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনে ফিরে যেতে পারি। আমরা ছাত্রদেরও এতে যুক্ত হতে বলি। আমরা তাদের ধৈর্য ধারণ করতে বলি যাতে আইনিভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করা যায়।
আল জাজিরা: কোটা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের অবস্থানের কারণে আদালত তা পুনর্বহাল করে। তারা কি আপনার রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: আমরা হাইকোর্টের এই রায়ের সাথে একমত ছিলাম না। এই জন্য আমরা এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছি। আমরা সুপ্রিমকোর্টে বলেছি, ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন যাতে পুনর্বহাল করা হয়। আমাদের এবং ছাত্রদের অবস্থান একই।
আল জাজিরা: এখন ৯৩ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হবে?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: হ্যাঁ, এখন ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে।
আল জাজিরা: কোটা ব্যবস্থা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজনের জন্য ছিলো বলে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তুলেছিলো।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: এটি সঠিক নয়। আগে ৩০ শতাংশ মুক্তিযুদ্ধ কোটায় মাত্র আট শতাংশকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। এটা যেভাবে কাজ করে, প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে হয়, যেখানে লাখের ওপরে আবেদন জমা হয়। যারা সেটাই পাশ করে, তারা লিখিত পরীক্ষার জন্য আবেদন করে। এরপর শর্ট লিস্টে ২.৫ শতাংশ পাশ করে। তারপর ভাইভা দিয়ে মাত্র ২.২৭ শতাংশ প্রার্থী টিকে থাকে। এই ২.২৭ শতাংশের পর কোটার জন্য আবেদন করা হয়। অনেকের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার নয়। আমরা মেধার বিপক্ষে না, মেধার পক্ষে। আমরা বৈষম্যের পক্ষ না, বৈষম্যের বিপক্ষে।
আল জাজিরা: পুলিশ এবং আর্মি সরকারের নিয়ন্ত্রণে। আপনি স্পষ্টভাবে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপালেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ১৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন এবং সরকার নিরাপত্তার জন্য দায়ী।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: আমি এই প্রশ্নের উত্তর এভাবে দিতে চাই, বাংলাদেশ টেলিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা। আমি ঘটনার দিন টেলিভিশনের ডিজি ও কর্মীদের কাছ থেকে ফোন পাই। তারা জানান, তাদের জীবন হুমকি মুখে। তারা জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন। সাহায্যের জন্য তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছিলেন। সেখানে পুলিশ ছিলো কিন্তু তারা সংখ্যায় কম ছিলো এবং গুলি চালায়নি। দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ কারণে আমরা বিজিবির আরেক গ্রুপকে পাঠাই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়নি বলেই তারা এসব প্রতিরোধ করতে পারেনি। আমি এ দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসী বলবো। আপনি বাংলাদেশে এসে বিটিভি ভবন পরিদর্শন করলে দেখবেন, বিটিভির কিছু অংশ দেখে মনে হবে গাজা উপত্যকা। দেখে মনে হবে বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আপনি কী করবেন?
আল জাজিরা: আপনি তাদের দুর্বৃত্ত এবং সন্ত্রাসী বলছেন, কিন্তু তাদের অনেকেই তরুণ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, যারা আইনের পরিবর্তন চায়। তাদের কি এভাবে যেকোনো নামে দাগিয়ে দেয়া যায়?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: আমরা ছাত্রদের বিষয়ে বলছি না। ছাত্রদের আমরা দুর্বৃত্ত বা সন্ত্রাসী বলছি না। তৃতীয় পক্ষ আন্দোলনে প্রবেশ করে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। আপনার কি মনে হয়? কারা জেল ভেঙে ৮২০ জন আসামিকে পালাতে সাহায্য করেছে? কারা অস্ত্র লুট করেছে?
আল জাজিরা: তাহলে তারা কারা?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: এরা তৃতীয় পক্ষ, যারা মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী। অতীতেও যারা একই কাজ করেছে। ২০১৫, ২০১৩ সালেও তারা একই কাজ করেছে। যারা আক্রমণ করেছে এবং যারা আক্রমণের শিকার হয়েছেন তারা একইভাবে দায়ী না। যায় হোক, আমরা এসবের তদন্ত করবো।
আজ জাজিরা: আপনি বলছেন যারা আক্রমণ করেছে তাদের পাল্টা আক্রমণ করা, এভাবে গণতন্ত্র কাজ করে?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: সবাই একটা বাইনারি হিসেবে আটকে আছে। সবাই মনে করছে, আন্দোলনকারীরা সবাই ছাত্র এবং সরকারের সাথে তাদের সংঘর্ষ। কিন্তু এটা এমন নয়। এতে তৃতীয় পক্ষ রয়েছে। তৃতীয় পক্ষ হলো বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যবাদী। যারা এই আন্দোলনে ঢুকে পড়ে এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা অতীতেও একই কাজ করেছে। আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। ছাত্ররা এসব করতে পারে না। ছাত্রদের পক্ষে এটা সম্ভব না। তারা মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা চালিয়েছে।
আল জাজিরা: কিন্তু রাষ্ট্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: অবশ্যই, শান্তি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের। আর এ কারণে আমাদের যা যা করার প্রয়োজন করতে হয়েছে। আমাদের এটা করতে হয়েছে কারণ দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু কিছু মানুষ আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে সরকারের পতনের জন্য। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে।
আল জাজিরা: এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: পদত্যাগ! মানুষকে রক্ষা করার জন্য তার পদত্যাগ করা উচিত? তিনি মানুষকে রক্ষার চেষ্টা করছেন, তিনি উত্তেজনা প্রশমনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যবাদীদের হাত থেকে জনতাকে রক্ষা করছেন। আমরা আক্রমণকারীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পাল্টা প্রতিরোধ করেছি, ফলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হলো, তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, তিনি সেই চেষ্টা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মানুষের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। মানুষের নিরাপত্তার জন্য, শান্তির জন্য কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তাকে কেন পদত্যাগ করতে হবে?
আল জাজিরা: হতাহতের এসব ঘটনায় কে তদন্ত করছে এবং কখন হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হবে?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারকের নেতৃত্বে স্বাধীন বিচারিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা আসলে আমাদের ভিকটিম বানিয়েছে। কারণ এই দেশে আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।
আল জাজিরা: আপনাদের প্রতিপক্ষরা অভিযোগ করছে, আসলে কী ঘটেছে সেটা তদন্তের আগেই আপনারা এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতি করছেন। আপনারা তথাকথিত তৃতীয় পক্ষের কথা বলে বিরোধীদের অবমূল্যায়ন করছেন?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: তদন্তের মধ্যদিয়ে প্রকৃত ঘটনা স্পষ্ট হবে। আমরা বলছি, ধ্বংসযজ্ঞের দিকে দেখলে, কারাগার ভেঙে বন্দিদের মুক্ত করা, অগ্নিসংযোগ এসব ছাত্রদের দ্বারা হয়নি। এসব একটা গোষ্ঠীর দ্বারা হয়েছে। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
আল জাজিরা: আন্দোলনকারীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি পরিস্থিতিকে আরও সহিংস করে তোলেননি? ছাত্রদের রাজাকার আখ্যা দেয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য সঠিক কাজ হয়েছে?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী সেটা বলেননি। তিনি যা বলেছেন, তারা সেটাকে বিকৃত করে অন্যকিছু দাঁড় করিয়েছে, যাতে তারা ছাত্রদের বিরোধী হিসেবে দাঁড় করিয়ে হল থেকে বের করতে পারে এবং তারা আসলে এটাই করেছে। প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় বক্তব্য দিয়েছেন, ছাত্ররা রাতে সাড়ে ১১টার দিকে বেরিয়ে আসে। তারা ছাত্রদের ব্রেন ওয়াশের জন্য সময় নিয়েছে। তারা উত্তেজনা বাড়াতে চেয়েছে। আমরা কখনোই আমাদের কোনো বক্তব্যে ছাত্রদের দাবিকে উপেক্ষা করিনি। আমরা বারবার বলেছি, ছাত্রদের দাবি সড়কে আদায় হবে না, এটা একমাত্র আইনিভাবেই সম্ভব। আমরা আপিল বিভাগে ছাত্রদের পক্ষেই লড়াই করেছি।
আল জাজিরা: আপনারা ছাত্রদের পাশে আছেন বলছেন, তাহলে এ হতাহতের জন্য দায়ী নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য এবং ভাড়াটে গুন্ডাদের অভিযুক্ত করা হবে?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: অবশ্যই, প্রধানমন্ত্রী এরইমধ্যে এই ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপি নেতারা এবং তাদের ছাত্র সংগঠন তারা পাবলিকলি নিশ্চিত করেছে যে, তারা এসব অংশ নিয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াত এই আন্দোলনে প্রবেশ করে পরিস্থিতি সহিংস করে তোলে।
আল জাজিরা: বিরোধীদের জানুয়ারির নির্বাচনে বয়কটের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতোটা ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে?
তথ্য প্রতিমন্ত্রী: সবশেষ নির্বাচনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। এটা সত্য নয় যে, অধিকাংশ দল নির্বাচনে আসেনি। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসেনি। তাদের বারবার বলা হলেও তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এটা সম্পূর্ণ তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা এখনও বিশ্বাস করি তাদের নির্বাচনে আসা উচিত ছিলো। কারণ, নির্বাচনে অংশ নিলে কোনো ত্রুটি থাকলে সেটা চিহ্নিত করা যায় এবং সমাধান করা যায়।
আমরা বলছি না আমাদের গণতন্ত্র একেবারে নিখুঁত। আমাদের অনেকটা পথ যেতে হবে। আমরা সেই প্রক্রিয়ায় আছি। গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে উন্নত হয়। কিন্তু গণতন্ত্রকে উন্নত করতে আমরা বিরোধীদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। আমরা নির্বচন কমিশনকে শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি নানা উদ্যোগের মাধ্যমে। ৮২টি উদ্যোগের মাধ্যমে গেলো ১৫ বছরে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে নির্বাচন কমিশনকে আলাদা করা হয়েছে। আমরা ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে। কিন্তু আমরা বিরোধীদের সহযোগিতা চাই। কিন্তু তারা শুধু বয়কট, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংসযজ্ঞে বিশ্বাসী।
বিষয়: #আন্দোলন #আল #জাজিরা #তথ্য #তৃতীয় #ধ্বংসযজ্ঞ #পক্ষ #প্রতিমন্ত্রী #প্রবেশ