মঙ্গলবার ● ৬ আগস্ট ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ক্ষমা চেয়ে অবরুদ্ধ থেকে ১১ঘন্টা পর অস্ত্র জমা দিয়ে ৪ নারী পুরুষ পুলিশ সদস্য সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠেন।
ক্ষমা চেয়ে অবরুদ্ধ থেকে ১১ঘন্টা পর অস্ত্র জমা দিয়ে ৪ নারী পুরুষ পুলিশ সদস্য সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠেন।
আকিকুর রহমান রুমন, বানিয়াচং হবিগঞ্জ:
থানার ভিতরে পুলিশ সদস্যরা দীর্ঘ ১১ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত ১১টার পর নারী পুলিশ ও দুই পুরুষ পুলিশ সদস্য ক্ষমা চেয়ে তাদের অস্ত্র জমা দিয়ে সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠেন।
এসময় গুরতর আহত ২পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে গাড়িতে উঠানো হয়।
এ অবস্হায় শুরু হয় থানার সামনে অবস্থানকারী লোকজনের এক দারাগো শন্তুসের নাম ধরে তার বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয় গুলো উল্লেখ করে বিচার দাবিতে মিছিল করেন।
হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পুলিশ ও আন্দোলনকারী সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে প্রান হারিয়েছেন ৮জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত শতাধিকের উপরে।
চলমান ছাত্র আন্দোলনের বিজয়ে সারাদেশে আনন্দ উল্লাসের বন্যায় ভাসলেও হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া একের পর এক লাশের সারিতে সংখ্যা বেড়ে ৮জনে দাঁড়িয়েছে।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে যারা প্রান হারিয়েছেন তাদের পরিবারেরর লোকজনের কান্না ও আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
বানিয়াচংয়ে পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে রাত ১১টায় বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই পর্যন্ত ৮জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন শত,শত আন্দোলনকারীগন ও পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রমিক।
তাদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল ও সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতাল সহ বিভিন্ন স্হানে চিকিৎসা করানোর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া ৮ জন হলেন হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলা সদরের ১নং ,৩নং ও ৪নং ইউপির বাসিন্দা।
এর মধ্যে ১নং উত্তর পূর্ব ইউপির ৩ জন।
৩নং দক্ষিণ পূর্ব ইউপির ৪ জন ও ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউপির ১জন সহ মোট ৮ জন পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার নাম ঠিকানাটা সহকারে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন প্রতিটি ইউপির সদস্যগন ও বানিয়াচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও।
১নং উত্তর পূর্ব ইউনিয়নের নিহত হলেন ৬নং ,৭নং ও ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
এই ৩ জনের মধ্যে ১নং ইউপি’র ৬নং ওয়ার্ড পূর্বগড় মীর মহল্লার ধলাই মিয়ার পুত্র মিশুক গাড়ি চালক সাদিকুর মিয়া(৩০) ৭নং ওয়ার্ড কামালখানী মহল্লার আলী মিয়ার পুত্র নয়ন মিয়া(১৮) ও ৮নং ওয়ার্ডের চানপুর বন্দের বাড়ির তাহের মিয়ার পুত্র কাঠ মেস্তরি আকিবুর মিয়া(২৫)।
বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৩নং দক্ষিণ পূর্ব ইউনিয়নে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪জন।
তারা হলেন জাতুকর্ন পাড়ার আব্দু রউফ মিয়ার পুত্র তোফাজ্জল মিয়া(১৮) জাতুকর্ণপাড়া মাইজের মহল্লার আব্দু নূর মিয়ার পুত্র আশরাফুল(১৭) পাড়াগাঁও মহল্লার শমসের মিয়ার পুত্র মুজাক্কির মিয়া(৪০) ও সাগর দিঘির পূর্ব পাড়ের সোহেল আখঞ্জী(৩৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা জন্য নেওয়া হলে বেলা ৫টার দিকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৪নং দক্ষিণ পশ্চিম ইউনিয়নের যাত্রাপাশা মহল্লার শানু মিয়ার পুত্র হাসান মিয়া(১২)পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
এদিকে দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনকারী ও বানিয়াচং থানা পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত থানা পুলিশকে আন্দোলনকারীগন অবরুদ্ধ করে রাখেন।
পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহত হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে ঐ এমনটা শুরু হয় পুরো বানিয়াচং উপজেলা সদরের ভিতরে।
এমনকি চেয়ারম্যান এর বাড়িঘরে আগুন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর মিয়ার বাড়িঘর ভাংচুর ও দলীয় বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ভাংচুর চালায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকেই। হাজার,হাজার আন্দোলনকারীগন থানা ঘেরাও করে রাখেন।
এসময় বিভিন্ন দিকে বাহিরে অবস্থানকারী সকল পুলিশ সদস্যগন থানার ভেতরে প্রবেশ করে তাদের মতো করে অবস্থান নেন।
তবে আন্দোলনকারীদের হামলার পূর্বেই সেনাবাহিনীর সদস্যগন থানার সামনে অবস্থান নেন।
এসময় ভেতরে থাকা নারী,পুরুষ পুলিশ সদস্যগন নিজেদেরকে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালান এবং বিভিন্ন দিকে লুকিয়ে পড়েন।
এমন ভয়াবহতার রুপ দেখে এবং জেলায় সংবাদ প্রদান করা হলে প্রচুর পরিমাণ সেনা বাহিনীর সদস্যগন থানার সামনে এসে অবস্থান করেন।
এবং আন্দোলনকারীদের নিভৃত করার আপ্রান চেষ্টা চালান।
যতো সময় যাচ্ছিলো পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে এগুনোর সংবাদ পেয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপারসহ কয়েক প্লাটুন সেনা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গাড়ি বহরে রওয়ানা হয়ে সন্ধ্যার দিকে বানিয়াচং থানায় উপস্থিত হন।
এসময় সেনা সদস্যরা থানার চারপাশ ঘিরে রাখেন এবং আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে যান।
আন্দোলনকারীদের সাথে তারা তাদের মতো আলাপ আলোচনা চালিয়ে যান এই আন্দোলন নিভৃত করার লক্ষ্য নিয়ে।
এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে থানার ভেতর থেকে অবরুদ্ধকারী নারী পুলিশ সদস্য ও দুই পুরুষ পুলিশ সদস্য সবার উদ্যেশে ক্ষমা চেয়ে সেনাবাহিনীর নিকট তাদের অস্ত্র জমা দিয়ে সেনা বাহিনীর গাড়িতে উঠেন।
এভাবে আস্তে আস্তে অবরুদ্ধ অন্যান্য পুলিশ সদস্যগন ক্ষমা চেয়ে চেয়ে সেনাবাহিনীর নিকট তাদের অস্ত্র জমা দিয়ে তাদের গাড়িতে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এসব বাহিরে অবস্থানরত আন্দোলনকারী ও আশপাশের এলাকাবাসী লোকজন বানিয়াচং থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সন্তুশ এর বিরুদ্ধে মাদক(ইয়াবা-মদের বোতল)এর
ব্যবসা করিয়ে যুব সমাজ ধ্বংস করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন।
এমনকি সে নিজে এসব ইয়াবা,মদ সেবন করার বিষয় গুলো মিছিলের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর নিকট বিচার দাবি করেন তারা।
এছাড়াও এই শন্তুস নিরহ ভালো ভালো মানুষকে মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে লাখ,লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন।
তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২বছর এভাবে এই থানাটাকে নষ্ট করে নিজে একটি টিম তৈরী করে দাপটের সহিত চলে আসছিলো বলে মিছিলকারীরা সেনাবাহিনীকে অবগত করে বিচার দাবিতে মিছিল করতে শুনা যাচ্ছিলো।
এসময় গুরতর আহত অবস্থায় দুই পুলিশ সদস্যকে বের করা হয়েছে।
এহেন পরিস্থিতিতে রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে গোয়েন্দা সূত্রে জানাযায়,আন্দোলনকারীদের নিভৃত করতে হবিগঞ্জ জেলার সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় বিএনপির স্হায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব জিকে গউছ বানিয়াচং আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা।
এখন রাত ১টার উপরে চলে তারপরও সকল পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন নাই। অন্যদিকে আন্দোলনকারীগন ও অবস্থান করছেন থানার চারদিকে এমনকি সামনেও রয়েছেন অনেকেই।
বিষয়: #অবরুদ্ধ #অস্ত্র নারী #উঠেন #ক্ষমা #গাড়ি #পুরুষ #পুলিশ #সদস্য #সেনাবাহিনী