শনিবার ● ১ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশ্ব » সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো লোকসভা নির্বাচন
সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো লোকসভা নির্বাচন
ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। শেষ দফায় শনিবার দেশটির ৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ৫৭টি লোকসভা আসনে ভোট নেয়া হয়। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৯টি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে। তবে আগামী ৪ জুন ফলাফল ঘোষণা করবে দেশটির নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এর মধ্যে একাধিক জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১ জুন) সকাল ৭টায় পশ্চিমবঙ্গে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে। এ দফায় রাজ্যের নয় আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সেগুলো হলো- দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ ও কলকাতার উত্তর কেন্দ্র। কিন্তু ভোট শুরুর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গা থেকে সহিংসতার খবর আসে।
পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন দলের তরফ থেকে নির্বাচন চলাকালীন প্রায় তিন হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। যার বেশিরভাগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। যদিও নির্বাচন কমিশনের দাবি রাজ্যে ভোট শান্তিপূর্ণ।
এ দফায় ভারতজুড়ে ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিজেপির শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন কংগ্রেসের অজয় রাই।
এছাড়াও নির্বাচনের লড়াইয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী অনুরাগ ঠাকুর (হামিরপুর), রবি শংকর প্রসাদ (পাটনা সাহিব), বিজেপি প্রার্থী ভোজপুরি অভিনেতা রবি কিষান (গোরখপুর), বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালপ্রসাদ যাদবের কন্যা আরজেডি প্রার্থী মিসা ভারতী (পাটলিপুত্র), সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা (কাংড়া), বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত (মান্ডি), তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি (ডায়মন্ড হারবার), টলিউড অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (যাদবপুর), বিজেপির রেখা পাত্র (সন্দেশখালি), শিরোমণি আকালি দলের প্রার্থী হরসিমরাত কৌর বাদল (ভাতিণ্ডা)।
শেষ দফায় দেশজুড়ে সমাজের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত, বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব ও রাবড়ি দেবী, আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রাঘব চাড্ডা, সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিং প্রমুখ।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভোটের লাইনে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন বিজেপি নেতা ও বলিউড স্টার মিঠুন চক্রবর্তী। কলকাতার বেলগাছিয়ায় ভেটেরিনারি কলেজে ভোট দেন মিঠুন। দক্ষিণ কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি, মমতার ভাতিজা তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি অভিষেক ব্যানার্জি, দক্ষিণ কলকাতা সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভোট দেন অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব)। চেতলার একটি স্কুলে ভোট দেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ঠাকুরপুকুর জনকল্যাণে ভোট দেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফার নির্বাচন হয় ১৯ এপ্রিল। সেই থেকে ১ জুন- মোট সাত দফায় ভারতের ৫৪৩ লোকসভার আসনে ভোট নেওয়া হলো।
আগামী ৪ জুন ভোট গণনা শুরু হবে। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দীর্ঘদিন ধরে (৪৪ দিন) চলল এই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। ১৯৫১-৫২ সালে ভারতে প্রথম লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া চলে প্রায় চার মাস ধরে। ১৯৮০ সালে সবচেয়ে কম সময়ে ভোট প্রক্রিয়া শেষ হয়। মাত্র ৪ দিন ধরে চলে ওই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া।
এদিকে, ভোট শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় থেকে সহিংসতার খবর আসতে থাকে। বেলা যত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে অশান্তিও বাড়ে। পোলিং এজেন্টকে বুথে প্রবেশে বাধা ও ভোট দিতে না পারায় ২৪ পরগণা জেলার কুলতলিতে ইভিএম পানিতে ফেলে দিয়েছেন ক্ষুব্ধ গ্ৰামবাসীরা। ভাঙরে গুলি ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। বোমার আঘাতে এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটেছে। ভাঙরের হাতিশালায় দফায় দফায় সহিংসতা হয়েছে। আইএসএফ বুথ এজেন্টকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের পিকনিক গার্ডেনসের ২৬৬ নম্বর বুথে ভুয়া এজেন্ট বসানো নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি হয়। ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সায়রা শা হালিম অভিযোগ জানাতেই দৌড়ে পালান অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ ছাড়া ভোট শুরুর আগেই রক্ত ঝরেছে বারাসাতে কদম্বগাছিতে। বিজেপির বুথ সভাপতির মেয়ের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জয়নগরের কুলতলীতে আজ সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে স্থানীয় জনতা বেণীমাধবপুর এফপি স্কুলের কাছে সেক্টর অফিসারের রিজার্ভ ইভিএম এবং কাগজপত্র লুট করেছে। তাঁরা ভোটিং মেশিন পুকুরে ফেলে দিয়েছে। এ ঘটনায় সেক্টর অফিসার এফআইআর দায়ের করেছেন এবং সেক্টরের অধীনে ছয়টি বুথে ভোট প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে এবং সেক্টর অফিসারকে কাগজপত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার গভীর রাতে বসিরহাট লোকসভার অধীনে সন্দেশখালিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভোটগ্রহণের প্রথম এক ঘণ্টা এই উত্তেজনা বিরাজ করে। স্থানীয় নারীরা বাঁশের লাঠি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) কর্মী এবং রাজ্য পুলিশকে ধাওয়া করেছে। তাঁদের অভিযোগ, কারাবন্দী তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের সহযোগীরা তাঁদের পরিবারকে হুমকি দিয়েছেন। রাজ্য পুলিশ বলছে, স্থানীয় বিজেপি সমর্থকেরা স্বেচ্ছাসেবকদের লাঞ্ছিত করার পরে অশান্তি শুরু হয়।
টিএমসির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির শক্ত ঘাঁটি ডায়মন্ড হারবার। সেখানেও টিএমসি এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস টিএমসির বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন, যা টিএমসি অস্বীকার করেছে।
যাদবপুরের গাঙ্গুলীবাগানে সিপিআই (এম) কর্মীরা টিএমসি কর্মীদের লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সেখানে বামদের ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে সিপিআইএমের ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ টিএমসি অস্বীকার করেছে।
এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ক্যানিংয়ে উত্তেজনা বেড়েছে। ইটখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের আশপাশে টিএমসি এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় পাথর ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। যাতে একজন মিডিয়া কর্মী আহত হয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালভিয়া বিক্ষোভের ভিডিও শেয়ার করেছেন। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয় দেখাতে দলীয় গুন্ডা বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশকে ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।
শনিবার ভোরে ভাঙ্গারে টিএমসি এবং অল ইন্ডিয়া সেক্যুলার ফ্রন্ট (এআইএসএফ) কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে এআইএসএফের একজন নারী কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া তৃণমূল সমর্থকেরা এআইএসএফের প্রার্থী নুর আলম খানের গাড়ি ভাঙচুর করে।
এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের অভিষেক ব্যানার্জি, বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র এবং দমদম থেকে সিপিআই (এম) এর সুজন চক্রবর্তী।
এদিকে নির্বাচন পরিচালনায় রাজ্যে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর (সিএপিএফ) ১ হাজার ২০টি কোম্পানির সঙ্গে ৯৭৮টি পোলিং ডিউটি অফিসার রয়েছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যব্যাপী মোট ১ হাজার ৯৬০টি কুইক রেসপন্স টিম মোতায়েন করা হয়েছে। সূত্র: আনন্দবাজার ও এনডিটিভি
বিষয়: #নির্বাচন #লোকসভা #সহিংসতা