রবিবার ● ২ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কর্ণফুলীতে জব্দ হলেই ‘গাড়ির সর্বনাশ’
কর্ণফুলীতে জব্দ হলেই ‘গাড়ির সর্বনাশ’
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা কম্পাউন্ড, থানার অধীনে থাকা পুলিশ ফাঁড়ি শিকলবাহা, বন্দর, শাহমীরপুর ও মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট এলাকায় গেলেই দেখা যায় বিভিন্ন রকম যানবাহনের ভাগাড়। লাখ লাখ টাকা দামের প্রাইভেট কার, ট্রাক, মিনিবাস, কাভার্ড ভ্যান, ও অহরহ মোটর সাইকেল পড়ে আছে অযত্ন অবহেলায়।
কারণ কর্ণফুলী থানায় নেই কোন ডাম্পিং স্টেশন। সড়ক ও বিভিন্ন ফাঁড়িতে থাকা গাড়িগুলোর প্রতি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা নজরদারিও কম। ফলে, হরদম গায়েব হচ্ছে এ সব যানবাহনের মূল্যবান যন্ত্রণাংশ। চেকপোস্টে দেখা গেছে কিছু গাড়ির চাকাও নেই। ভেতরে গাড়ির অনেক যন্ত্র চুরি হয়ে গেছে।
অথচ সড়ক দুর্ঘটনা, চুরি, মাদকসহ বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমায় আটক ভালো ভালো যানবাহনগুলোর স্থান হয় মইজ্জ্যারটেকের অরক্ষিত সড়ক কিংবা পরিষদের অস্থায়ী থানা কম্পাউন্ডে। একবার চেকপোস্ট বা থানায় ঢুকলে সেটি আর সহজে বের হতে পারে না। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে এক সময় দামি এসব যানবাহন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে, নষ্ট হয়। সরেজমিন কর্ণফুলীর থানা এলাকা ঘুরেও এ চিত্র দেখা গেছে।
অনেক যানবাহন মালিকদের অভিযোগ, সড়কে বছরের পর বছর গাড়ি পড়ে থাকায় শুধু নষ্ট হচ্ছে না, বিভিন্ন মামলায় জব্দ হওয়া গাড়ির মূল্যবান মালামালও চুরি হয়ে যায়। অবশ্য পুলিশ বলছে, নির্দিষ্ট কোন ডাম্পিং স্টেশন নেই। অনেক গাড়ি রয়েছে, যেগুলোর মামলা এখনো চলছে। তাছাড়া বিভিন্ন মামলার আলামতের গাড়িও এসব স্থানে রাখা হয়েছে।
চরলক্ষ্যার পুরাতন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও সামনের খোলা জায়গায় মোটরসাইকেল, সিএনজি গাড়ি, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে। রোদে পুড়ছে, বৃষ্টিতে ভিজছে। হারাচ্ছে ব্যবহারের উপযোগিতা। অথচ আদালতের আদেশে নিলামে উঠে কম। ফলে, মরিচা ধরেছে একাধিক যানবাহনে।
ট্রাক গাড়ি মালিকদের অভিযোগ, একটি গাড়ি যদি ৮-১০ বছরে ফাঁকা জায়গায় পড়ে থাকে তাহলে সেই গাড়ির কিছুই থাকে না, এজন্য গাড়ির মালিকরা গাড়ি নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব যানবাহন রাখা হয়েছে আলামত হিসেবে। আলামত জমতে জমতে স্তুপ হয়ে গেছে থানা কম্পাউন্ডও। অথচ সরকারি কোন ডাম্পিং স্টেশন নেই।
সিএমপির পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, লাইসেন্সবিহীন, চোরাই, দুর্ঘটনাকবলিত, মাদক বহনকারী, অবৈধ মালপত্রসহ বিভিন্ন কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব যানবাহন জব্দ করে, সেগুলো আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পুলিশকে রাখতে হয়। তবে নির্ধারিত ডাম্পিংয় স্টেশন থাকলে সুবিধা। কিন্তু যদি এ ব্যবস্থা না থাকে। না থাকার কারণে নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
কর্ণফুলী থানার একাধিক উপ-পরিদর্শক বলেছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা হওয়ার পর আলামত হিসেবে যানবাহন আটকে রাখা হয়। এর মধ্যে কিছু যানবাহন আদালতের নির্দেশে মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয় মামলা নিষ্পত্তি পর্যন্ত। আর মামলার দীর্ঘসূত্রতাই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
এসব পুলিশ কর্মকর্তারা আরো বলেন, মামলা নিষ্পত্তি হতে অনেক সময় লেগে যায়। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আদালত হয় গাড়ি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিতে বলে, না হয় নিলামে বিক্রির আদেশ দেয়। কিন্তু নিলাম প্রক্রিয়া অনেক জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া দীর্ঘদিন নিলাম না হওয়ায় এগুলো বিক্রিও করা যায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলেও কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (বন্দর জোন) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, যে সব যানবাহনের নামে মামলা হয় সেগুলোর মামলা নিষ্পতি হলে ও আদালতের অনুমতিপত্র পেলে আমরা ওই সব যানবাহন ছেড়ে দেই। আবার অনেক গাড়ির মালিক মামলা নিষ্পত্তি হলেও তাদের যানবাহন নিতে আসে না। অনেক মালিককে পাওয়া যায় না। সেই ক্ষেত্রে আমরা ওই সব গাড়ির বিষয়টি আদালতে জানাই। আদালত একটি নিয়মে নিলামের জন্যে আদেশ দেন।আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
ডিসি আরো বলেন, এরপরও এমন কিছু গাড়ি আছে যা নিলামে উঠলেও কেউ নিতে চায় না। যে কারণে ওই সব গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। তবে এটা সত্য কর্ণফুলীতে যদি একটি ডাম্পিং স্টেশন থাকলে অনেক সুবিধা হতো।
বিষয়: #কর্ণফুলী