রবিবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ধোপাজান নদীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর যৌথ মহড়া : ছটাক পরিমাণ বালি যাতে কেউ চুরি করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসকের কঠোর হুশিয়ারী
ধোপাজান নদীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর যৌথ মহড়া : ছটাক পরিমাণ বালি যাতে কেউ চুরি করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসকের কঠোর হুশিয়ারী
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের ইজারাবিহিন ধোপাজান চলতি নদীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ১১টি বালিভর্তি বাল্কহেড ও ইঞ্জিন নৌকা আটক করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এসব অবৈধ বালিবাহী বাল্কহেড ও ইঞ্জিন নৌকা আটক করে পুলিশ ফাড়িতে নেয়া হয়। এর আগে অন্তত ১৫টি নৌযানে ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার ঘটনায় কোন মামলা এফআইআর না হলেও শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নির্দেশে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা নদীতে মহড়া দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার দিবাগত রাতে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার একজন এসআই ৪৭ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে ১৫টি বালিবুঝাই করা ইঞ্জিন নৌকা ছেড়ে দেন। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে এসআই হামিদ দায়িত্ব পালন করলেও কোন নৌকা বের হতে দেননি। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে নদীতে দায়িত্ব পালন করছেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সবুর। তার চোখ ফাকি দিয়ে সদর উপজেলার হুরারকান্দা গ্রামের কতিপয় চোরাকারবারী প্রায় ১০০ বালিবাহী ইঞ্জিননৌকা অক্ষয়নগর গ্রামের পশ্চিমে ধোপাজান নদীতে রাখে। তারা পরিকল্পনা করে ভোররাত ফজরের নামাজের সময় পূর্ব সদরগড় ও পশ্চিম সদরগড় গ্রামের কতিপয় লোককে নিয়ে জোর করে বালিবাহী নৌকা বের করবে। এজন্য তারা ধোপাজান নদীর দুইপাড়ে গোপনীয় মিটিং এর আয়োজন করে থাকে। কিন্তু চোরাকারবারীদের সকল পরিকল্পনা প্রশাসনকে তাৎক্ষনিকভাবে জানান দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে জেলা প্রশাসক ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীর বালি পাথরসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ রক্ষায় সেনা ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে টহল ব্যবস্থা জোরদার করেন। ডিবি ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন,কোন অসাধূচক্র যদি শক্তির দাপট প্রদর্শন করে ইজারাবিহীন ধোপাজান নদী হতে ইঞ্জিননৌকা দিয়ে বালিপাথর বের করার চেষ্টা করে আমরা কাউকে কোন ধরনের ছাড় দেবনা। সবগুলোকে ধরে ধরে মামলা দেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপি নেতা হেলাল আহমদ বলেন,শুক্রবার দিবাগত রাত ৯ টা থেকে চোরাকারবারীরা সদর উপজেলার অক্ষয়নগর গ্রামে ধোপাজান নদীর পাড়ে প্রায় একশত নৌকা লোড করে রেখেছিল। ঘটনাটি আমাকে স্থানীয় লোকজন জানালে আমি সকলকে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানোর জন্য অনুরোধ করি। জেলা প্রশাসক গভীর রাতে হলেও মোবাইল ফোনে শুনে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করায় আমরা তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ধোপাজান নদীর বালাকান্দা এলাকায় ২টি ইঞ্জিন নৌকায় করে ২৫ জনের দুটি ডাকাত দল একের পর এক নৌকা আটকিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাতির শিকার একাধিক ব্যক্তি এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নৌযান শ্রমিকরা জানান, বাল্কহেড নৌকা নিয়ে উজানের দিকে যাওয়ার সময় সংঘবদ্ধ ডাকাতরা নৌকা থামিয়ে মাঝি-মাল্লাদের মারধর করে তাদের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা, মোবাইল ফোন ও ডিজেল ইত্যাদি লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতদের পিটুনিতে গুরুতর আহত নৌকার মাঝি সইদুর রহমানকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বাড়ি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফুলভরি গ্রামে। পুলিশ সুপার আ. ফ. ম. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত হয়ে ভিকটিমদের থানায় অভিযোগ দিতে বলেছি। সেইসাথে ডাকাতি রোধে চলতি নদীতে টহল জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়,হুরারকান্দা গ্রামের ৭জন,কাইয়ারগাঁও গ্রামের ২ জন,ভাদেরটেক মনিপুরিহাটি গ্রামের ৩ জনসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের ২০/২৫ জনের একটি চোরাকারবারী সিন্ডিকেট এই ডাকাতির ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়। পুলিশ প্রশাসন এসব ডাকাতদেরকে পুলিশ এসল্ট মামলার আসামী এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক মামলার আসামী হিসেবে ভালো করে চেনাজানার পরও রহস্যজনক কারণে ডাকাত দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করছেনা বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি উক্ত ডাকাতির ঘটনার পর নদীতে প্রতিরাতে বালি লুটতরাজের মহোৎসব চললেও পুলিশ প্রশাসনের নিরবতা চোরাকারবারীদেরকে নতুন করে উৎসাহিত করছে বলে ধারনা স্থানীয় সচেতন মহলের। তবে নবাগত জেলা প্রশাসক ধোপাজান নদীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর যৌথ মহড়ার মাধ্যমে ছটাক পরিমাণ বালি যাতে কেউ চুরি করতে না পারে সেজন্য কঠোর হুশিয়ারী দিয়েছেন। এবং এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে সহযোগীতা করার জন্য আহবাণ জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়: #ধোপাজান #নদী #পুলিশ #সেনাবাহিনী