বুধবার ● ২ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » ছাতকে পিআইও অফিসে দুই মাস ধরে তালা
ছাতকে পিআইও অফিসে দুই মাস ধরে তালা
আনোয়ার হোসেন রনি, ছাতক প্রতিনিধি::
ছাতকে পিআইও অফিসে প্রায় দুই মাস ধরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার কে এম মাহবুর রহমানের অফিসে কক্ষে তালা ঝুলছে।
অফিস সহকারি আসাদ এর কক্ষে খোলা থাকলে অফিসে কাউকে খোজে পাওয়া যাচ্ছে না।
জানা যায়,পিআইও কে এম মাহবুর রহমানের বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা, কাবিটা’র ভুয়া বিল জমা দিয়ে দেড় শতাধিক প্রকল্পের টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগের ঘটনায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগের প্রস্ততি কমিটির আহবায়ক ফজলুর রহমান,সাবেক উপজেলার নিবাহী কর্মকতা নুরের জামান চৌধুরী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা কে,এম মাহবুর রহমান ও সাবেক সরকার দলীয় ইউপি চেয়াম্যানদের নেতৃত্বে কাজ না করে এসব প্রকল্পের টাকা লোপাট করেছেন ।
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে টিআর ও কাবিখা, কাবিটা ও বিশেষ প্রকল্পেরকাজ না করেই টাকা উত্তোলন করেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কে এম মাহবুর রহমানের নেতৃত্বে তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সাবেক সরকারের আমলে পিআইও’র বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিতে ছাতক পিআইও অফিস ঘুস-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সংশ্নিষ্ট প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা পিআইও নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে এসব টাকা লুটপাট ও আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আগে টাকা পরে কাজ, সঠিক কাজ করলে ২০ ভাগ ঘুস দিতে হবে, না দিলে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কেএম মাহবুর রহমান যোগদান করার পর টাকা ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না। সরকারি প্রকল্পে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুস নেওয়ার অভিযোগের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন ইউপি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা। বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি বরাদ্ধে টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নভুক্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, কবরস্থান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট স্থাপন, মেরামত ও সংস্কারের জন্য সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার বরাদ্ধ অর্থের সিংহভাগ তছরুপ হচ্ছে। বেশির ভাগ কাজ না করে পিআইও’র মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে থাকে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-চাল) ১ম পর্যায়ে কর্মসূচির আওতায় উপজেলা পরিষদ ওয়ারি ১৩টি ইউপির সাড়ে ৯৬ মে. টন চাল উত্তোলন করে ১৬টি প্রকল্প, ২য় পর্যায়ে ১৪টি প্রকল্পের নামে সাড়ে ২২ মে. টনসহ ১১৯ মে. টন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে (কাবিখা গম) ১ম পযার্য ১৫টি প্রকল্প ৩৮ মে,টন ও ২য় পযার্য় ১৬টি প্রকল্পের ৭৬ মে. টন,২০২২ সালে কাবিটা বিশেষ (এমপি বরাদ্ধ)১২টি প্রকল্প,একই আবারো ২১ টি প্রকল্পে ৫৬লাখ ৮৯হাজার,৬শ’৯৫টাকা, ৪৯ লাখ,৫৭হাজার,৪শ’৯২টাকা, কাজ না করে এসব চাল উত্তোলন করে পিআইও সিন্ডিকেট। একই অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (কাবিটা) ১ম পর্যায়ে ২২টি প্রকল্পে বরাদ্ধ প্রায় ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৬৭ টাকা, ২য় পর্যায়ে ৩০টি প্রকল্পে বরাদ্দ প্রায় ৪৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫৩৯ টাকা, ৩য় পর্যায়ে ১৪টি প্রকল্পের ১৭ লাখ ৬ হাজার, ৭৪৬ টাকা ও ৪র্থ পর্যায়ে ১৬টি প্রকল্পে ১২ লাখ ৪০ হাজার, ৮৮২ টাকাসহ কোটি কোটি টাকার কাজ না করে বিল উত্তোলন করেছেন তারা।
প্রকল্প কাগজ-কলমে থাকলেও এগুলো বাস্তবে মাঠে হদিস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে দক্ষিণ খুরমা ইউপির ৯টি প্রকল্পের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রকল্প কর্মকর্তা মাহবুর রহমান কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন। ভূইগাঁও ছেগাপাড়া গ্রামের মাফিজ আলী ও আছকন্দর আলী এবং কুম্বায়ন গ্রামের আবদুল মানিক, আফজল হোসেন, কামরানসহ জানান, ইউনিয়নের সরকারি মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও লুটপাট করা হয়। মাটি ভরাট না করে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে স্বপ্না মেম্বারনির করা অভিযোগ করেন।
গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর ছাতক উপজেলা প্রকল্প অফিসে সহকারি কক্ষ খোলা থাকলে পিআইও অফিস কক্ষ আজও পযন্ত বন্ধ রয়েছে।
আরেকটি সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আফছর আহমদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও উপজেলা প্রকৌশলী আফছর আহমদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ সালের (৯নভেম্বর) মৃত্যুবরণ করেন। তার কিছুদিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরের জামান চৌধুরী দুনীতি অনিয়মের কারনে বদলী হয়ে ঢাকা চলে যান। এরপর আর তদন্তের কোন অগ্রগতি হয়নি। পত্র পত্রিকায় সংবাদ করে তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না এমনই মন্তব্য করেছেন দুনীতিবাজ কর্মকর্তা কে এম মাহবুর রহমান।
উপজেলার দক্ষিন খুরমা ইউপি ছেগাপাড়ার মবশ্বির আলী বলেন, কয়েক টুকরি মাটি কুম্বায়ন পঞ্চায়েতি কবরস্থানে ফেলা হয়। জয়নাল হাজারী জানান, মাদ্রাসার মাঠে এক মুষ্টিও মাটি ফেলা হয়নি। তারা কাজ না করে টাকা লুটপাট করেন। এর সঙ্গে জড়িতরা নিজেদের গায়ে সরকারি দলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রকল্প কমিটি কাজ না করেই ভুয়া বিল-ভাউচারে উত্তোলন করেন পিআইও। সিকিভাগ কাজ না করেই বরাদ্দেও এসব টাকা উত্তোলন করেন পিআইও সিন্ডিকেট। সোনালী ব্যাংকের ছাতক শাখায় সিসি ক্যামেরা ভিডিওতে তার প্রমাণ মিলবে। এক্ষেত্রে সমুদয় টাকার ব্যয় খাতের ভুয়া মাস্টাররোল অফিসে দাখিল করেছেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে বিভিন্ন ইউনিয়নে আত্মসাৎকৃত প্রকল্পে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এদের অব্যাহত দুর্নীতি-অপকর্ম। এ ব্যাপারে প্রকল্প কর্মকর্তা কে এম মাহবুর রহমানকে তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি।এব্যাপারে উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
এব্যাপারে উপজেলা নিবাহী কর্মকতা গোলাম মোস্তফা মুন্না জানান,সাবেক ইউএনও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। খোজ খবর নিয়ে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়: #আনোয়ার #রনি #হোসেন