শুক্রবার ● ৪ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » সুনামগঞ্জের সাবেক ৪ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন
সুনামগঞ্জের সাবেক ৪ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলাধীন যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২, বালি মিশ্রিত পাথর কোয়ারী কে শুধুমাত্র বালুমহাল নাম দিয়ে, খনিজ সম্পদ বিভাগ ও পরিবেশ বিভাগের আপত্তির বিপক্ষে, মহামান্য হাইকোর্টের নিষিদ্ধকৃত এলাকা কে, দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে সুনামগঞ্জের সাবেক ৪ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দায়েরকৃত অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী এনডিসি বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে অভিযোগটি তদন্ত করেন। যাদুকাটা বালিমহাল ইজারায় অনিয়মের অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জের সাবেক ৪ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অভিযোগটি দায়ের করা হয়।
গত ২৮ মার্চ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সত্রিশ গ্রামের মৃত মজর মিয়ার পুত্র মোঃ খোরশেদ আলম দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এই অভিযোগটি দায়ের করেন। জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে সুনামগঞ্জের সাবেক ৪ জন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ঐ অভিযোগে ব্যাপক অনিয়ম,ঘুষ, দুর্নীতি,সরকার ও জনগণের প্রায় ৫০০০ (পাঁচ হাজার) কোটি টাকার সম্পত্তি হুরিলুঠের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ,প্রতিদিন নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় নদীর আশপাশের সকল গ্রামের বসত বাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে,যাদুকাটা নদীর পাড়ের মানুষ ও সুশীল সমাজ মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ গড়ে তুললেও অশুভ শক্তির কাছে হেড়ে যায়, বালুমহাল ইজারার নামে নদীর পাড় কাটা, রাতের আধারে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সুযোগ দিয়ে জেলা প্রশাসন রাতারাতি আলাদিনের চেরাগ হয়ে উঠেছেন, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে সারা বাংলাদেশের বালু ও পাথর কোয়ারী ইজারা বন্ধ থাকলেও বালুমহাল ইজারার নামে অবৈধ ব্যক্তিগণ দ্বারা মূল্যবান খনিজ সম্পদ পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে, প্রতিদিন নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় নদীর আশপাশের ২০টি গ্রামের মানুষের শেষ সম্বল বসত বাড়ি, নদীর পাড়ের একাধিক বাজার, এশিয়ার বৃহত্তম পর্যটন স্পট শিমুল বাগান, বারেকটিলা, শাহ আরেফিন-অদ্বৈত সেতু, মিছাকালী ফসল রক্ষা রাবার ড্যাম্প ব্রিজ, বিজিবি ক্যাম্প, ফসলী জমি নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে। বালুমহালের নামে স্থানীয় প্রশাসনের সম্মুখ দিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে এই অবৈধ কার্যক্রমটি সংগঠিত হয়ে বিপুল পরিমান মুল্যবান খনিজ সম্পদ লুটপাঠ হচ্ছে। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নদীর তলদেশে সাধারণ বালু না থাকায় ড্রেজার মেশিন ও বোমা মেশিন দিয়ে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করায় যাদুকাটা নদীর উপর ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শাহ আরেফিন-অদ্বৈত সেতু ও ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আরেকটি মিছাকালী ফসল রক্ষা রাবার ড্যাম্প ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। নামমাত্র রাজস্ব আদায়ের নামে লুটপাঠের লংকাকান্ড চলতেছে।
সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ,সাবেক জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন,সাবেক জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী গংরা অবৈধভাবে নতুন বালুমহাল সৃজন করে সমঝোতায় ইজারা দিয়ে যে পরিমাণ টাকা দুর্নীতি করেছেন তার চেয়ে হাজার গুন বেশী টাকা দুর্নীতি করেছেন অবৈধ সুযোগ দিয়ে। যাদুকাটা-১, যাদুকাটা-২, বালুমহাল বিধিবহির্ভূতভাবে সৃজন করে সরকার ও জনগণের প্রায় ৫০০০ (পাঁচ হাজার) কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে এই সিন্ডিকেট।
কেউ অভিযোগ করতে চাইলে দেওয়া হতো প্রাণনাশের হুমকি। তারপরও জীবনের ঝুকি নিয়ে গত ২৮ মার্চ সচিব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয় বরাবরে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে আমি অভিযোগ করেছি কিন্তু তদন্ত আলোর মুখ দেখে নাই। যুগ্ম-সচিব (আইন) ভূমি মন্ত্রনালয় ও সদস্য সচিব,কেন্দ্রীয় বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি বরাবরে গত ০২/০৪/২০২৪ইং তারিখে অভিযোগ করেও রহস্যজনক কারণে সবাই চুপচাপ রয়েছেন বলে জানান অভিযোগকারী।
অভিযোগের অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সকল সচিবগনের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে অভিযোগকারী বলেন,পরিবেশ ও প্রশাসনিক অবকাঠামো বজায় রাখার স্বার্থে যাদুকাটা-১, যাদুকাটা-২, বালুমহালের ইজারা সংক্রান্ত বিষয়ে সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুষ্ট ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে সুনামগঞ্জের সদ্য বদলি হওয়া সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন,আমি সুনামগঞ্জে কর্মরত থাকাবস্থায় কোন বিষয়ে দুর্নীতি করেছি বা ঘুষ নিয়েছি বলে জানিনা। কোন বালিমহাল এককভাবে জেলা প্রশাসকের ইজারা দেয়ার এখতিয়ার নেই। বালূমহাল ব্যাবস্থাপনা কমিটির সিদ্বান্তসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের লিখিত নির্দেশ মোতাবেক মহাল ইজারা দেয়া হয়।
সুনামগঞ্জের বর্তমান জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন,বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় সুনামগঞ্জে এসে একটি অভিযোগের তদন্ত করেছেন। এর বেশি কিছু আমি জানিনা বলতেও পারবনা।
বিষয়: #সুনামগঞ্জ