রবিবার ● ৬ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সিলেটে রাজনীতি মামলায় ছাতকে দু’জন কৃষক আসামি
সিলেটে রাজনীতি মামলায় ছাতকে দু’জন কৃষক আসামি
ছাতক(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি::
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সিলেটে রাজনীতি মামলার হিড়িক পড়েছে। এসব মামলায় অনেক নির্দোষ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
আসামি তালিকা থেকে বাদ যাননি ছাতকে কৃষক হাসান আলী ও দিপু, এমনকি বিদেশে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। আবার ও প্রকৃত অপরাধী অনেককে এজাহারে অভিযুক্ত করা হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে হত্যাকান্ডসহ বিভিন্ন ঘটনায় করা মামলাগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল ও ব্যক্তি আক্রোশের কারণে কাউকে কাউকে ফাঁসাতে এসব মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেয়ার অভিযোগের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে ছাতকে। অনেক মামলার বাদীর অভিযোগ, তারা এমন এজাহার দেননি, এমনকি তারা জানেন না আসামি কারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আসামি ও বাদীকে চেনেন না। এতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও মামলার বাদীরা এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে কোনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও গ্রামের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এ মামলা তাদেরকে আসামি করেছেন ছাতক উপজেলার কৃষন নগর গ্রামের মৃত আকবর আলী ছেলে জামায়াত নেতা সাহেদ আলী। জানা যায়, গত ৪ আগষ্ট সিলেট উপশহর থেকে বন্দরবাজার মুখী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মিছিল যাচ্ছিল। এ সময় তাদের নিয়ে হামলা চালায় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এঘটনায় সিলেটের আওয়ামীলীগের সাবেক কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে প্রধান আসামী করে ১শ’১৭জনের নাম উল্লেখ্য করে গত ২৫ আগষ্ট সিলেট শাহ পরান (রঃ)থানার উপ শহর এ ব্লকের মফিজুর রহমানের ছেলে আল আমিন রাজা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় মোট ১শ’১৭ জনকে নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আর ও ৭০/৮০ জনকে আসামি করা হয়।
এ মামলার ১শ’১৭ জন আসামীদের মধ্যে ৪৮ নম্বার এজাহারভুক্ত আসামী হয়েছেন ছাতকের দিনমজুর কৃষক উপজেলার ছৈলাআফজলাবাদ ইউপির কৃষন নগর গ্রামের মৃত নসিব উল্লাহ ছেলে হাসান আলী (৫৫) একই গ্রামের ৪৯ নম্বার জমির আলীর ছেলে দিপু (২৫) মামলার আসামি করা হয়। এ মামলায় নিরপরাধ দু’জন কৃষক ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। মামলার এজহারে তাদের স্থায়ী ঠিকানা ছাতকের কৃষন নগর বলা হলেও অস্থায়ী ঠিকানা শাহপরান থানার তেররতন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দিকে এজাহার বর্নিত আসামিরা কে কি অপরাধ করেছেন তা উল্লেখ থাকলেও হাসান ও দিপুর কোনো অপরাধ উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অপরাধের বিষয় এজহারে উল্লেখ করেছেন মামলার বাদি। হাসান আলী ও দিপুর কলামে দেওয়া সিলেটের টিকানা সঠিক না হলেও গ্রামের ঠিকানায় কোনো ভুল নেই। এত কিছুর পরও তাদের অপরাধের বিষয় উল্লেখ নেই এ মামলার এজাহারে। এমনকি মামলায় বাদী নিজেও জানেন না এ দু’জন কৃষক কিভাবে মামলা আসামি করা হলো। কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই না করেই এভাবে মামলা রুজু হওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পুলিশ।
কৃষক হাসান আলী ও দিপুর গত বোববার সকালে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নয়। তারা গ্রামে কৃষি কাজ করে জীবন-জীবিকা যাপন করছে।প্রয়োজন ছাড়া ছাতক গোবিন্দগঞ্জেও আসা হয় না তাদের। এমনকি সিলেটে শাহপরান বা অন্য এলাকায় কোনো বাসা বা আত্মীয় স্বজনও নেই। তাদের দাবী জমি সংক্রান্ত একই গ্রামের হাসন আলীর ফুফাত ভাই সাহেদ আলীর সাথে তাদের মামলা মোকদ্দমা রয়েছে। সাহেদ আলী সিলেট ইবনেসিনায় কর্মরত থাকায় সে শাহপরান এলাকায় বসবাস করে।
এ মামলার বাদী সাহেদ আলীর পুর্বপরিচিত বিদায় তাদের সাথে পুর্ব শক্রুতা মেটাতে এ মামলায় আসামি করা হয়। এমনকি সাহেদ আলী মোবাইল ফোনে তাদেরকে এ হুমকীও দেন। শাহ পরান এলাকায় সে জামায়াত নেতা হিসেবেও পরিচিত রয়েছে। হাসান আলী ও দিপুর পরিবার সহ তাদের ওপর এমন গায়েবি মিথ্যা মামলা থেকে যেন তারা রক্ষা পেতে চায়। সাহেদ আলীর সঙ্গে হাসান আলীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ আছে বলে গ্রামবাসীর একাধিক ব্যাক্তি নিশ্চিত করে তারা বলেন গ্রামের দিন মজুর কৃষক হাসন আলী ও দিপুকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। তারা কখনো কোনো রাজনীতি করেনি। এ মিথ্যা ও হয়রানিমুলক মামলা থেকে তারা মুক্তি চায়। এ বিষয়ে সাহেদ আলী সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জমি সংক্রান্ত বিরোধের বিষয় থাকলেও মামলায় আসামি করার ঘটনাটি তিনি অস্বীকার করেছে। এব্যাপারে মামলার বাদী আল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইবনেসিনায় একটি চাকুরী করার বিষয় নিশ্চিত করে বলেন,সাহেদ নামে কাউকে তিনি চেনেন না।
বিষয়: #আসামি #কৃষক #ছাতক #মামলা #রাজনীতি #সিলেট