সোমবার ● ৭ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » ধামাচাপার চেষ্টা ছাতকে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১২দিন ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত
ধামাচাপার চেষ্টা ছাতকে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১২দিন ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত
ছাতক(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের ছাতকে এক হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম-দূর্নীতি মাধ্যমে আত্মসাতকৃত প্রতিষ্ঠানের টাকা উদ্ধার করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের হাজী আবদুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০১১ সালের ৮জুন যোগদান করেন মোহাম্মদ মোস্তাক আহমদ। তার যোগদানের পর থেকে চলতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন মর্মে গত ২ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাবেক সভাপতি সিরাজুল হক। প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অর্থ আত্মসাতসহ শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডের তদšন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়। এদিকে, প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমদ কর্তৃক বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। অর্থ আত্মসাতের মতো অনিয়ম দূর্নীতি ঢাকতে ইতোমধ্যে তার পক্ষে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রধান শিক্ষকরা। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিষয়টি ধামাচাপার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওই প্রধান শিক্ষক গত ২৬ সেপ্টেম্বর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হেনাসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রধানকে সাথে নিয়ে উপজেলা ইউএনও ও শিক্ষা অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন। এঘটনাকে কেন্দ্র করে পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হেনার বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, আপনার (আবু হেনার) নিয়োগ কি ভাবে হয়েছিল এলাকার অনেকেই জানেন না। পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের আগে যে ৩টি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন সব কটিতে দূর্নীতি অনিয়ম করেছেন। ওই স্ট্যাটার্সের কমেন্টে নজির আহমদ নামের একজন লিখেছেন, আবু হেনা একটা দূর্নীতিবাজ, মিথ্যাবাদি ও টাউট-বাটপার। নিয়োগ অনিয়ম করে টাকা দিয়ে তৃতীয় শ্রেনির নিয়োগ করেছেন বলেও কমেন্টে উল্লেখ করেন। পৃথক আরেকটি স্ট্যাটার্সে সাইদুল হক লিখেছেন, হাজী আবদুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাককে বাঁচাতে পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হেনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তিনি আশাকাচর বাজারে গিয়ে কিছু দূর্নীতিবাজদের সাথে যোগাযোগ করছেন। কোন দূর্নীতিবাজ শিক্ষকদের ছাড় না দিতে সকলের কাছে অনুরোধ করেছেন প্রতিবাদি সাইদুল।
জানা গেছে আবু হেনা হাজী কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে থাকাকালিন সময়ে পরিক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিতর্কিত হয়ে এখান থেকে বাধ্য হয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়েছে। হাজী আবদুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমদের কাছে অর্থ অত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।এ বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বৈঠক অনুষ্টিত হওয়ার কথা থাকলে বৈঠক অনুষ্টিত হয়নি। পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হেনার বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা-লেখির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোমা এমপি মানিকের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জে মামলা দায়ের সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটার্স দেন তার পিএস মোশাহিদ আলী। বোমা মানিকের আত্মীয় হওয়ায় স্ট্যাটার্সটি তিনি তার ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছিলেন। এ স্ট্যাটার্সকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এখানে তিনি প্রধান শিক্ষক হলেও এর আগের সব প্রতিষ্ঠানে ছিলেন সহকারী শিক্ষক। সহকারী শিক্ষক হয়ে অনিয়ম-দূর্নীতির কোন সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোস্তাক আহমদকে বাঁচানোর জন্য তিনি কোন তদবির করছেন না, এ অভিযোগের বিষয়টি ইউএনও দেখবেন। অভিযোগকারী হাজী আবদুল খালিক উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু ওই কমিটির কেউ এখনও তদন্তে আসেননি, আসলে তাকে ডাকা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়: #ছাতক