সোমবার ● ১৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য ডাইরি » লোভী পুরুষ - অনুগল্প
লোভী পুরুষ - অনুগল্প
তামান্না আল রাইয়ান ::
স্বামীর মোবাইলে আমার উ*ল*ঙ্গ অবস্থায় গোসলের ভিডিও দেখে শরীর শিউরে উঠল। এ মুহূর্তে স্বামী ঘুমে কুপোকাত। কিছুক্ষণ আগেই খুব আদরের সোহাগে আমায় ভরিয়ে দিয়ে ছিলো। সেই লোকটা যে আমার উ*ল*ঙ্গ ভিডিও বানিয়ে রেখেছে ভাবতেই পারছি না।
কিছুক্ষণ আগেও লোকটা অন্তরঙ্গ মুহূর্তে সোহাগী ডাকে ‘মোনিশা ভালোবাসি তোমাকে’ বলছিলো। সেই লোকটা এতটা ঘৃণ্যতম কাজে জড়িত।
তখনি মোবাইলে মেসেজ এলো। সচরাচর আমার স্বামী মোবাইলে লক দেয় না। কারণ আমি অশিক্ষিত। লক কি জিনিস বুঝি না। তাই হয়ত আমার স্বামী চিন্তাহীন মোবাইলের লক খুলে রাখতো। মাঝেমধ্যে আমি চাইলে কিছুক্ষণের জন্য হাতে দিতো পরে ছিনিয়ে নিতো। তার কাছ থেকে যেনো আর মোবাইল না চাই। তার জন্য নতুন মোবাইল আমার হাতে দিলো। স্বামী আমাকে নিজ হাতে চালানো শিখিয়েছে। আবারো মেসেজ এর ভাইব্রেশনে ধ্যানচ্যুত হলাম। নোটিফিকেশনে কোনো মেসেজ আসলে সেটা কেমনে দেখতে হয়? শিখিয়ে দিয়ে ছিলো আমার স্বামী। তার কথা অনুসরণ করে মেসেজ অপশনে চাপ দিলাম। এ কি দেখছি? আমার ভিডিওটা সে হিন্দু ধর্মের এক লোককে বিক্রি করেছে। গা গুলিয়ে বমি পেলো আমার। মোবাইল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে গলগল করে বমি করে দিলাম। নিজের মুখ হাত ধুয়ে পুনরায় হিন্দু লোকটার সাথে আমার স্বামীর চ্যাট শুরু থেকে পড়তে লাগলাম।
“দেখেন ভাই ভিডিওতে থাকা মাইয়ারে পাবেন না। কিন্তু ভিডিও দেইখা উ*ত্তেজিত হতে চাইলে বলতে পারেন। মাইয়াটার আরো সে*ক্সি লুকে ভিডিও এনে দিবো।”
হিন্দু লোকটা আমার স্বামীর কথায় রাজি হলো। সেই রাজির রেশ ধরে আমার স্বামী আমার গোসলের ভিডিও দিয়ে দিয়েছে। ওয়াশরুম থেকে ধীর পায়ে হেঁটে বের হলাম। হাত থেকে স্বামীর মোবাইলটা পড়ে গেলো টাইলার্সের উপর। এতে স্বামীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার পায়ের নিচে মোবাইল দেখে বোধহয় সে বোঝে গেলো যে, ধরা পড়ে গিয়েছে। ছিঃ এ কোন অমানুষ, শয়তান কে বিয়ে করলাম। ঠাস করে গালে চ’ড় লাগল। সামনে তাকিয়ে দেখি আমার স্বামী অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখে কান্নার গলায় শুধায়।
“কেনো করলেন এমনটা? আপনি না আমার ভালোবাসেন? কেউ কি তার ভালোবাসার মানুষের উ*ল*ঙ্গ ভিডিও রেকর্ড করে পরপুরুষ কে দেয়? বাবাদের পর স্বামীই হয় বউয়ের ছায়াতল। সেখানে আপনি আমাকে ছায়াতলে নরকের জায়গা করে দিলেন? কেনো করলেন বলেন কেনোননন?”
চিৎকার করে কেঁদে স্বামীর বুকে কিল-ঘুষি বসাতে লাগলাম। এক পর্যায়ে সে রেগে আমার উপর বেল্টের প্রহার করে বলতে লাগল।
“তোকে আমি কখনো বউ হিসেবে মানিই নাই। তুই হলি আমার ভোগের বস্তু মাত্র। রক্ষিতা তুই আমার বুঝছিস। ঘৃণা করি তোদের মত ছোটজাত কে। এমনিতে তোর শরীরের কোনো জায়গা বাকি নেই যেখানে আমি স্পর্শ করিনী। তাহলে সমস্যা কি সেই শরীর অন্য লোকের কাছে ভিডিও হিসেবে বিলিয়ে দিলে? জানিস তোর ভিডিও দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে কত টাকা ইনকাম করেছি? বিশ লাখ পাইছি বুঝছিস। তাই তুই তোর মত থাকবি। সুখে থাকবি নাহলে পাঁচে মরবি। এতিম মাইয়া কোথাকার।”
অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলে আমার স্বামী বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার কথায় মনে পড়ল আমি অস্তিত্বহারা, পরিচয়হীন এতিম কন্যা। আচ্ছা সব এতিম মেয়েদের কপালে কি এমন মানুষ জুটে? নাকি আমিই আগের জনমে পাপ কাজ করে ছিলাম বলে এমন স্বামী পেলাম? শরীরে মাইরের ব্যথায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বিছানায় আমার পাশে শুয়ে থেকেই আমার স্বামী প্রকাশ্যে আমার ভিডিও পরপুরুষের কাছে পাঠাচ্ছে। সেই সাথে কুকর্মের মাধ্যমে অবৈধ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নিজের স্ত্রীর ভিডিও বানিয়ে টাকা ইনকাম কি আদৌ সৎ কাজ? অসৎ কাজে মগ্ন আমার স্বামী। কার জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করে সংসার সামলে ছিলাম? কার জন্য শরীরের ঘাম জড়িয়ে রান্নাঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রান্নায় মগ্ন ছিলাম? কার জন্য শরীরে সৌন্দর্যের সরঞ্জাম লাগিয়ে প্রদর্শন করতাম? যে কিনা আমার রুপে পাগল হয়ে সোহাগ যেমন করতো পরপুরুষ কেও দেখিয়ে উ*ত্তেজিত করে টাকা হাতাতো। আজ বুঝলাম কেনো আমার স্বামী প্রতিবার আমার ছবি , ভিডিও করে মোবাইলে রাখতো। জিজ্ঞেস করলে বলতো , বউয়ের স্মৃতি রাখা স্বামীর কাছে ভালোবাসার দায়িত্ববোধ। শুনে আপ্লুত হতাম। আজ সব মিটে গেলো মন থেকে।
সাত দিন পর, থানায় বসে আছি। চারপাশের লোকজন ছিঃ ছিঃ করছে। কেনো আমি কি দোষ করলাম? আমার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে বলেই কি আমি দোষী? নাকি নিজের স্বামীকে ভিডিও ভাইরাল করার জন্য নিজ হাতে হ*ত্যা করেছি বলে দোষী হয়ে পড়লাম? মহিলারা এসে আমার পক্ষপাতীত্ব করল। এতে আমার কি যায় আসে? জীবন তো থেমেই গেলো। কলঙ্গ লেগেই তো গেলো শরীরে। মুছুনের যে উপায় নেই। রাতের তিনটায় থানায় এক অফিসার চুরিচুপে ঢুকল। আমার দিকে কু’দৃষ্টি দিয়ে বলল।
“দেখ ছেমড়ি তোকে বের হতে সাহায্য করমু। তার আগে শরীরটা একটু ছুঁতে দেয়।”
বলেই আমার সাদা কাফনের ন্যায় শাড়ির আঁচল খামচি ধরে টানতে লাগল। আমি চিৎকার করে লোক জমা করতে চেষ্টা করি। কিন্তু কাউকে দেখলাম না। বুঝতে পারলাম অফিসার তার শয়তানি কার্যসিধি পূরণের জন্যই সবদিক ব্যবস্থা করে এসেছে। আমার চিৎকারে তার কিছু যায় আসল না। উ*ত্তেজিত শরীর নিয়ে আমাকে চ’ড় লাগিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চোখ ফেটে কান্না করছি। হঠাৎ সব শান্ত হয়ে গেলো। শুধু শুনা গেলো , আহ্ আহ্ আগুন আগুন বাঁচাও কেউ প্লিজ। এ অফিসার আগুন মেটাতে না পারায় জ্বলে দগ্ধ হতে লাগল। তার পকেটে থাকা লাইটার দিয়েই তার কাপড়ে আগুন ধরিয়েছে। পুরো এই জেলের রুমে আগুন ধরে গেলো। আমার শাড়ি জ্বলছে তাতে আমার আপত্তি নেই। মরে গিয়েই শান্তি। নাহলে এই পাপিত সমাজ আমায় বাঁচতে দিবে না। সকলের আড়ালে লুকায়িত শ*য়তান ঠিক এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইবে। বড্ড নোংরা এই সমাজ বড্ড নোংরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত ::
বিষয়: #অনুগল্প #পুরুষ #লোভী