মঙ্গলবার ● ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ঢাকার হত্যার মামলায় ছাতকের আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাকে গ্রেপ্তা
ঢাকার হত্যার মামলায় ছাতকের আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাকে গ্রেপ্তা
ছাতক(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি ::
ছাতকে আওয়ামীলীগ নেতা ও জাউযাবাজার ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজা মিয়া তালুকদার(৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । গত শনিবার রাতে উপজেলার জাউয়াবাজার এলাকা খেকে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে ঢাকার রিক্সাচালক আরিফকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে আওয়ামীলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। সে উপজেলার জাউয়াবাজার ইউপির সভাপতি কিদ্রা কাপন গ্রামের মৃত আরজু মিয়া তালুকদারের ছেলে।
জানা যায়,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিরোধ করতে অস্ত্রসহ নিজেরা ভাড়া খাটতে গিয়ে ঢাকা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণ বাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আওয়ামীলীগের নেতা রেজা তালুকদার ও তার ভাতিজা হিরক তালুকদার বিরুদ্ধে গত জুলাই-আগস্টে দেশে সংঘটিত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বোমাবাজি, লুটপাট,বিস্ফোরন,চাদাবাজি, পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা, হামলা,ভাংচুরসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের ঘটনায় একডজন মামলায় পলাতক আসামী আওয়ামীলীগ নেতা রেজা তালুকদার গ্রেপ্তার হলে ও এখনো ও পলাতক রয়েছে হিরক তালুকদার ভাতিজা। তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার এক থানায় দন্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় একটি হত্যা মামলার আসামী। সবুজ আলীর ছেলে রিক্সাচালক আরিফ (২৮) কে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিহতের মা সূর্য্যবানু বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে। এ মামলায় চাচা-ভাতিজা চক্রের বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেল,রেজা তালুকদার ও হিরক তালুকদারসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেছেন (মামলা নং-১০/২৪)। শুধু এলাকাবাসী-ই নয়, এ চক্রের হাত থেকে রেহাই পায়নি নিকটাত্মীয়রাও। বহুতল ভবন নির্মাণকালে চাচাতো ভাই মুক্তার মিয়া তালুকদারের কাছেও চাঁদা দাবি করেন হিরক মিয়া তালুকদার। এ ঘটনায় বিক্ষুব্দ মুক্তার তালুকদার বাদী হয়ে হিরকসহ অনন্যদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন (মামলা নং-২৮, জিআর মামলা নং-২৯৯/১১)। এছাড়া এ চক্রের প্রধান রেজা মিয়াসহ প্রায় সকল সদস্যের বিরুদ্ধে ছাতক থানাসহ সিলেট-সুনামগঞ্জের বিভিন্ন থানায় বেশ একডজন মামলা চলমান রয়েছে। গত ৫ আগষ্টের পর চাচা-ভাতিজা ক্যাডার বাহিনী জাউয়াবাজার ছেড়ে আতœগোপনে পালিয়েছে। তারপরও জনমনে কিন্তু স্বস্তি নেই। জাউয়াবাজারসহ সংলগ্ন ইউনিয়নের জনগণের মধ্যে বিরাজ করছে আতংক। কখন জানি চাচা-ভাতিজা চক্র আবারও এসে হামলা চালায় নিরীহ মানুষের ওপর। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, চাচা-ভাতিজা চক্রের অর্থদাতা যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবির আহমদ হলেও এদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেন জাউয়া কোনাপাড়া গ্রামের আসদ আলীর ছেলে ছয়ফুল। ছয়ফুল সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার, পুলিশের তালিকাভূক্ত অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অনেকগুলো মামলাও রয়েছে। পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ ছাতক এলাকা হাইকোর্ট নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও টমটম ইজিবাইকের রুট চলাচলে পুলিশ বাঁধা প্রদান করে। এ কারণে পুরো বাহিনী নিয়ে এসে প্রকাশ্যে জন-সম্মক্ষে পুলিশ সার্জেন্ট হামিদুরকে অপদস্থ ও নাজেহাল করেন রেজা মিয়া তালুকদার। এ নিয়েও মামলা হয়েছিল বলে সুত্রটি জানিয়েছে। এ ঘটনার ব্যাপারে সে সময় জাতীয় ও স্থানীয় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদও হয়। এ ছাড়া দানশীল যুক্তরাজ্য প্রবাসীর দোকান কোটা জবরদখল, লুটপাট, মারপিট, চাঁদা দাবির অভিযোগে সুনামগঞ্জ জেলা জজ আদালতে চলমান এক মামলায় রেজা মিয়াসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এসব মামলায় এদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি আছে অথবা কোন কোন মামলায় প্রাথমিক পর্যায়ে কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। এতো কিছুর পরও কিন্তু এই চক্রটি থেমে নেই। একের পর এক তাদের দৌরাত্ম ও জবরদস্তি চালিয়ে যাচ্ছে। পতিত সরকারি দলীয় সাবেক মন্ত্রী এম এ মান্নানের নাম ভাঙ্গিয়ে ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন রেজা মিয়া তালুকদার ও তার ভাতিজা হিরক মিয়া তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত চাচা-ভাতিজা অপরাধী চক্র। এমন অপকর্ম নেই যা তারা করেননি। অর্থের বিনিময়ে অন্যের বাড়ি-জমি জবরদখল, ঘর বা দোকানকোটা নির্মাণকারীদের কাছে জোরপূর্বক চাঁদা দাবি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)’র সমান্তরাল বেআইনী সংস্থা গঠন করে দক্ষিণ ছাতক এলাকায় হাইকোর্ট নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও টমটম বা ইজিবাইকের রুট পারমিট প্রদানের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত, সালিশ-বিচারের নামে সাধারণ ও নিরিহ মানুষকে হয়রানী বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় সহ নানা অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। এ চক্রের অব্যাহত অন্যায় জুলুম-নির্যাতনে অতীষ্ঠ জাউয়াবাজার এবং আশেপাশের ৫/৬টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। এব্যাপারে থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন হত্যা নাশকতা পুলিশ এ্যাসল্ট মামলাসহ একডজন মামলার পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত রোববার সকালে সুনামগঞ্জ আদালতে প্রেরন করা হয়েছে।###
বিষয়: #আওয়ামীলীগ #গ্রেপ্তার #ছাতক #ঢাকা #মামলা #রেজা #সভাপতি #হত্যা