শুক্রবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আজ ৬ ডিসেম্বর- স্বাধীনতার ৫৩ বছর পিরিয়ে গেলেও নবীগঞ্জে মুক্ত দিবস পালনে নেই কোনও আয়োজন! প্রশাসনের প্রতি সুশীল সমাজের ক্ষোভ
আজ ৬ ডিসেম্বর- স্বাধীনতার ৫৩ বছর পিরিয়ে গেলেও নবীগঞ্জে মুক্ত দিবস পালনে নেই কোনও আয়োজন! প্রশাসনের প্রতি সুশীল সমাজের ক্ষোভ
বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:-
আজ ৬ ডিসেম্বর- নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। স্বাধীনতা বিজয়ের পরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা দিনগুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম দিন নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। আজকের এ দিনে সবার মনে
বিজয়ের উল্লাসে নবীগঞ্জে গন মিছিল দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন নবীগঞ্জ মুক্তকামী জনতা।
কিন্তু, অদৃশ্য কারণে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পিরিয়ে গেলেও নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে নেই কোনও আয়োজন! নেই কোনও সরকারী বরাদ্দ!
সারাদেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় মুক্ত দিবস উপলক্ষে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান প্রদর্শনসহ নানান অনুষ্ঠান করা হলেও নবীগঞ্জে এ দিবসে নেই কোনো আয়োজন। এতে,
মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের প্রতি চাপা ক্ষোভ করেছেন।
সূত্রে জানাযায়, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পূর্বাকাশের সুর্যোদয়ের সাথে সাথেই মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীদের হটিয়ে দিয়ে মুক্ত করেছিলেন নবীগঞ্জ শহরকে। তিন দিন সন্মুখ যুদ্ধের পর সেদিন সুর্যোদয়ের পূর্বেই নবীগঞ্জ থানা থেকে পাকহানাদার বাহিণীকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন।
তৎকালীন এ সময়ের সাব-সেক্টর কমান্ডার মরহুম মাহবুবুর রব সাদী নেতৃত্বে ও রশীদ বাহিনীর প্রধান মুর্শেদ জামান রশীদসহ মুক্তযোদ্ধারা থানা ভবন ঘেরাও দিয়ে উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
পরে স্থানীয় নবীগঞ্জ ডাকবাংলো সন্মুখে হাজার হাজার জনতার আনন্দে উদ্বেলিত ভালবাসায় সিক্ত মাহবুবুর রব সাদীকে। সে সময় তিনি আবেগ জড়িত কন্ঠে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বর্নণা করেন এবং ওই দিন বিকালে মুক্তিবাহিনীসহ সিলেট রওয়ানা দেন। ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিভিন্ন সময় পাকবাহিনীর উপর গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদের ভীত সতস্ত্র করে রেখে মুক্তি সেনারা। কৌশলগত কারনে নবীগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ থানা দখলের সিদ্ধান্ত নেন। এতে, পাক বাহিনীর অন্যতম ক্যাম্প নবীগঞ্জ থানাকে লক্ষ্য করে তিনদিকে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর রাত থেকে গুলি বিনিময় চলে উভয়ের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারনে ও আত্মরক্ষার্থে কখনোও পিছু হটা না হেটে আক্রমন চালিয়ে পাক বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে থাকে। সারাদেশে পাকবাহিনীর অবস্থান খারাপ হওয়ায় নবীগঞ্জেও তাদের খাদ্য ও রসদ সরবরাহ কমে যায়।
অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী একেক সময়ে একেক দিক দিয়ে আক্রমন চালাতো। ৪ ডিসেম্বর রাতে থানা ভবনের উত্তর দিকে রাজনগর গ্রামের নিকট থেকে মুক্তিযোদ্ধা রশিদ বাহিনী পাকবাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমন চালায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর কিশোর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুবো ৪ ডিসেম্বর শহীদ হন ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহতও হন।
পরদিন ৫ ডিসেম্বর রাতে নবীগঞ্জ থানায় অবস্থিত পাকবাহিনীর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা চরগাঁও ও রাজাবাদ গ্রামের মধ্যবর্তী শাখা বরাক নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান নেয়। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী প্রচন্ড যুদ্ধের পর হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়।
পরদিন ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকবাহিনীর নিকট থেকে কোন বাধাঁ না আসায় মুক্তিবাহিনী বীরদর্পে জয়বাংলা শ্লোগানের মধ্য দিয়ে নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জ উপজেলাকে পাকিস্তান মুক্ত ঘোষণা করেন।
তবে, স্বাধীনতার পর থেকে এই দিনটিকে পালন করার জন্য নেওয়া হয়না কোনো উদ্যোগ! আজ স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও এই দিনটি নীরবে কেটে যায়। সরকারী বা বেসরকারী ভাবে কেউই এ দিবসটি পালন না করলেও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রাপ্তন চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ এ দিবসটি পালন করতেন।
মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা দিনটি পালনে কেন নেই কোনো আয়োজন? এ কারণেই আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে অনেক দূরে রয়েছে।
এবিষয়ে তরুণ সাংবাদিক তৌহিদ চৌধুরী সুশিল সমাজের মানুষজন বলেন, ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ বাসীর জন্য এক আনন্দের দিন। এই দিনে নবীগঞ্জ স্বাধীন হয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রক্ত দিয়ে জীবন বিপন্ন করে স্বাধীন করেছেন। তাই প্রসাশনের উদ্যেগে বর্তমান প্রজন্মকে এসব ইতিহাস চর্চাকরার ব্যবস্থা করে দেওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
সরকারী বা বেসরকারী ভাবে কেউ এ দিবসটি পালন করতে দেখা যায় নি। স্বাধীনতার এত বছর পরও শহীদ দ্রুব এর সমাধিস্থল সনাক্ত করা হয়নি। এ ব্যাপারে কেউ উদ্যোগ নিতেও দেখা না পেলেও মাঝে মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ এ দিবসটি পালন করতেন।
বিষয়: #আজ #ডিসেম্বর #স্বাধীনতা