বুধবার ● ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য ডাইরি » গল্পঃ #লাঞ্চনা
গল্পঃ #লাঞ্চনা
ছাত্রকে পড়াতে পড়াতে একটু রাত হয়ে গেলো।ছাত্রের মাকে যখন যখন বললাম- ভাবী, কাউকে দিয়ে আমাকে একটু গলির মোড় পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারবেন? আসলে এই গলিতে কিছু বখাটে ছেলেরা বসে আড্ডা দেয়, তাই যেতে একটু ভয় লাগে।
আমার কথা শুনে ছাত্রের মা হাসতে হাসতে বললো- তুমি ভয় পাও, নাকি তোমাকে দেখে গলির ছেলেগুলো উল্টা ভয় পায়?
কিছুটা অবাক হয়ে বললাম- মানে!
উনি হেসে বললো- না কিছু না! তোমার গায়ের রঙ যে পরিমাণ কালো, তুমি অন্ধকারে হাঁটলে তোমাকে তো কেউ দেখার কথা না!
ছাত্রীর মায়ের কথার ইঙ্গিতটা ঠিকই বুঝতে পারলাম। তাই কিছু না বলে চুপচাপ বাসা থেকে একাই বের হয়ে গেলাম!
মাঝে-মধ্যে সৃষ্টিকর্তারকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে- হে খোদা, মানুষ রুপে যেহেতু পাঠিয়েছো, তাহলে গায়ের রঙটা একটু ফর্সা বানিয়ে পাঠালে কি এমন ক্ষতি হতো? মানুষের এতো লাঞ্চনা আর সহ্য হয় না!
রাতে যখন খাবার খাচ্ছিলাম, তখন মা কিছুটা ভয়ে ভয়ে বাবাকে বললো- কাল যে ছেলেটা রিতাকে দেখতে আসবে, শুনেছি সেই ছেলেটা নাকি আগেও একটা বিয়ে করেছিলো?
বাবা খেতে খেতে কর্কশ গলায় বললেন- হুম করেছিলো বিয়ে!
-সেই সংসারে নাকি ৬ বছরের একটা সন্তানও আছে?
-হুম আছে!
-জেনে-শুনে এমন একটা ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে আমাদের উচিত হবে?
বাবা প্লেটটা দূরে সরিয়ে মায়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো- তোমার মেয়ের জন্য এমন ছেলে পছন্দ করবো না তো রাজকুমার পছন্দ করবো? কে তোমার এই মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে শুনি? মেয়ে পেটে থাকাকালীন কি কয়লা খেতে যে এমন একটা মেয়ে জন্ম দিয়েছো!
একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, লুলা, ল্যাংড়া,কানা যে-ই মেয়েকে পছন্দ করবে, আমি তার সাথেই মেয়েকে বিয়ে দিবো। কোনরকম দায়মুক্ত হতে পারলেই বাঁচি।
বাবার কথা শুনে মায়ের চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। আর নিজের চোখের জলের কথা বাদেই দিলাম…
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #গল্প #লাঞ্চনা