শুক্রবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » দূষণে সংকটাপন্ন জীববৈচিত্য,টয়েলেটের ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
দূষণে সংকটাপন্ন জীববৈচিত্য,টয়েলেটের ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::
ছাতকে কারখানার বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে তৈতইখালি নদী। ছাতক উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভায় কারখানার টয়েলেটের ময়লা বর্জ্য ড্রেন বা পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরাসরি তৈতইখালি নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে। নদীর দুটি পাড়ে তৈরি বা বাসাবাড়ির পায়খানার পাইপ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এ নদীতে। টয়েলেটের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে তৈতই খালি নদী। এ নদীর তীর থেকে পায়খানা অপসারণ ও নদীতে সরাসরি বর্জ্য না ফেলার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসি। নদী দখল কওে ঘর-বাড়ি টয়েলেটের ময়লা পড়ে নদী-খাল হাওর বর্জ্য ফেলায় গোসল করতে বা পানি মুখে দিলে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাও,কালারুকা,উত্তর খুরমা ও দক্ষিন খুরমা ইউনিয়ন নিয়ে তৈতইখালি নদী অবস্থান। এ নদীতে প্রতিদিন গোসল করেন ৪টি ইউপির ৫০টি গ্রামে হাজার হাজার লোকজন। উত্তর খুরমা ইউপির আলমপুর গ্রামের বন্দরবাড়ি তৈতইখালি নদীর পাড়ে টয়লেট স্থাপন করে নদীতে বর্জ্য ফেলে পানি দূষিত করা হচ্ছে। এ টয়লেটের পাইপ নদীতে ছেড়ে দেওয়াতে দূষিত হচ্ছে পানি ও পরিবেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। টয়লেটের বর্জ্য ড্রেন ও খালের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে নদীতে। দূষণের কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদী দূষণের চিত্র ভয়াবহ দূষণ এখানে। পয়োবর্জ্য, পলিথিনসহ রাসায়নিক-কঠিন ও তরল বর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। দূষণে ঝুঁকিতে রয়েছে জীববৈচিত্য। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের নদ-নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্ল্যাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে নদীতে। এসব প্ল্যাস্টিক বর্জ্য নদীর তলদেশের মাটি, পানি, মাছ ও উদ্ভিদের ক্ষতি ছাড়াও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। দখল-দূষণ নিয়ে জরিপ করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। তাতে বলা হয়, তেতই খালি নদীতে মিঠা পানির ৬৬ প্রজাতির এবং মিশ্রপানির ৫৯ প্রজাতির ও ১৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেতো। মিঠা পানির ২০-২৫ প্রজাতির ও মিশ্রপানির ১০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। ১০-২০ প্রজাতির মাছ ছাড়া অন্য প্রজাতির মাছ বিপদাপন্ন। নদীর পাড়ে এবং আশেপাশে গড়ে ওঠা অবৈধ টয়লেটের পায়খানার বর্জ্যসহ কঠিন বর্জ্য অপরিকল্পিতভাবে ফেলার কারণে তৈতই খালি পানি বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নদীর পরিবেশও হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকাবাসীর মানবসৃষ্ট ও গৃহস্থালি এবং পয়োবর্জ্যসহ প্রায় ১০-২০ লাখ লিটার বর্জ্য নদীতে পতিত হচ্ছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সমীক্ষা বলছে, তৈতইখালি নদীতে একসময় বেলে, কাঁচকি, চান্দা, পুটি, বাচা, চেলা, বড় ইচা, গুঁড়া চিংড়ি পাওয়া যেতো। আইড়, কালি বাউশ, কাতল, রুই, মৃগেল, বোয়াল, ফলই, পাঙ্গাস, নাইলোটিকা, গলদা, চিংড়ি, ছোট হরিণা চিংড়ি মাঝে মাঝে পাওয়া যেতো। ২৫ বছর আগে বাবমি, চিতল, কাঁচকুড়ি, পারশে ও বাঁশপাতা মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর পাওয়া যায় না। নির্বিচারে মৎস্য আহরণ, কারেন্ট জাল, ছোট ফাঁস জালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া এবং দূষণের কারণে মাছ এবং জলজ উদ্ভিদ কমে যাচ্ছে। নদীতে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননের স্বীকৃত স্থান বা মৎস্য অভয়াশ্রম না থাকায় অনেক মাছ প্রজননের অভাবে হারিয়ে গেছে বলে সমীক্ষায় বলা হয়েছে। ময়লা-আর্বজনাসহ টয়লেটের বর্জ্যে বিষাক্ত হচ্ছে তৈতইখালি নদী। ছাতকে: কারখানার বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে সিলেটের সুরমা নদী। নগরীর শতাধিক কারখানার টয়লেটের বর্জ্য ড্রেন বা পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরাসরি সুরমা নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। নদী পাড়ে তৈরি বা বাসাবাড়ির পায়খানার পাইপ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সুরমায়। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে নদী। তৈতইখালি তীর থেকে পায়খানা অপসারণ ও নদীতে সরাসরি বর্জ্য না ফেলার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এঘটনায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার বরাবরে উত্তর খুরমা ইউপির আলমপুর গ্রামে মৃত মখলিছ আলীর পুত্র আলী আহমদ,লিলু মিয়া,ও মুস্তাফ মিয়া বাদী হয়ে তৈতইখালি নদী দখল করে টয়লেটের বর্জ্য ড্রেন বা পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরাসরি নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবেশ মারাতœক হুমকির মুখে পড়েছে। এঘটনাটি সরেজমিস ঘটনাস্থল পরিদশন করে সাবেক উপজেলার সহকারি কমিশনার ইসলাম উদ্দিন নদী দখল করে সরকারি দলীয় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জোবপুবর্ক টয়লেট নিমান করা হয়। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ভুয়া এতিমাখানার স্থাপন করে দেশ বিদেশে থেকে লাখ টাকা আদায় করছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল উপজেলার নিবাহী কর্মকতার বরাবরে উপজেলার সহকারি কমিশনার ইসলাম উদ্দিন লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।এ প্রতিবেদনের ফাইলটি উপজেলার যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ ও উপজেলার চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ধামাচাপা দিয়ে গায়ের চেষ্টা করেছিলেন।অবশেষে ফাইলটি সন্ধান মিলছে উপজেলায়। এব্যাপারে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর জানান, তৈতই খালি নদী দূষণমুক্ত করার জন্য নদীর দুই পাড়ের কাঁচা পায়খানা ও নদীতে ফেলে পচানো ময়লা কার্যক্রম বন্ধে এবং নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানু গত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান এলাকাবাসী।এব্যাপারে উপজেলার নিবার্হী কর্মকতা তরিকুল ইসলাম জানান,খোজ-খবর নিয়ে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়: #আবর্জনা #জীববৈচিত্য #টয়েলেট #দূষণ #দূষিত #পরিবেশ #ময়লা #সংকটাপন্ন