শনিবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছাতকে সুরমার চর থেকে মাটি ব্যবসা,ট্রাকসহ দুজন গ্রেপ্তার
ছাতকে সুরমার চর থেকে মাটি ব্যবসা,ট্রাকসহ দুজন গ্রেপ্তার
ছাতক(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের ছাতকে সুরমা নদীর তীরের মাটি কেটে অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগে ট্রাক চালকসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। গত শুক্রবার বিকালে উপজেলার পৌর শহরের সুরমা লাফাজ ফেরি ঘাট এলাকায় এ অভিযান চালায়। এ অভিযান চলাকালি সময়ে মাটি খেকো যুবদল নামধারি সাজ্জাদ মাহমুদ মনির,জমিস উদ্দিন,নোমান ইমদাদ কানন ও খায়রুদ্দীন সহ চার ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে প্রশাসনের হাতে। সে যুবদল নামধারি বহুরুপি মনির লেভেল পরিধান করে এলাকায় একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে নিজে গডফাদার সেজেছে। সুরমা নদী থেকে মাটি খেকোদের দাপটে অসহায় স্থানীয় প্রশাসন, জনপথ ও বনবিভাগের কর্মকতারা।এ সিন্ডিকেট চত্রেুর সহযোগিতায় রাতের আঁধারে দিয়ে মাটি কেটে ডাম্পার ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছে বাসা-বাড়িতে। সুরমা নদী উত্তর পাশ থেকে এমন ভাবে মাটি কাটা হচ্ছে বাইরে থেকে দেখে বুঝার কোনো সুযোগ নাই। প্রতিদিন শত শত ট্রাক মাটি বিক্রি করা হচ্ছে অবাধে। মাটি কাটার ফলে এখন সুরমা শতবর্ষী গাছ-গাছালি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। আর অল্প মাটি কাটলেই গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়বে এসব গাছ গুলো। ফলে সুরমা নদীর থেকে আর যাতে মাটি কাটতে না পারে সেই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। গত শনিবার সকালে গ্রেফতারকৃত আসামী বাশখালা গ্রামের জুবেদ আলীর ছেলে আতাউর রহমান (৩৮) ও উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের মৃত আবদুল হেকিমের ছেলে ট্রাক চালক মখলিছ মিয়া (৪০) দায়েরকৃত মামলায় আসামীদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে সুনামগঞ্জ আদালাতে পাঠানো হয়েছে। এঘটনায় গত শনিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভুমি সহকারি তহসিলদার কৃঞ্চ কান্ত দাস বাদী হয়ে বহুরুপি সাজ্জাদ মাহমুদ মনির আসামী করে ৬জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানাযায়, হেমন্তে সুরমা নদীর তীরে জেগে উঠে চর। এই চরের মাটির দিকে টার্গেট করে মাটি খেকোরা ব্যবসা শুরু করেছে।গত কয়েকদিন ধরে এখান থেকে মাটি অবৈধ ভাবে বিক্রি করে আসছে কথিত যুবদল নামধারী বহুরুপি সাজ্জাদ মাহমুদ মনির সিন্ডিকেট। প্রতিদিনের ন্যায় গত শুক্রবার সকাল থেকে সুরমা নদীর ছাতক লাফার্জ ফেরি ঘাটের দক্ষিন বাগবাড়ি এলাকায় মাটি কেটে ট্রাক যোগে অবৈধ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে উপজেলার প্রশাসন ও আর্মি ক্যাম্পের অধিনায়কের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। জিজ্ঞাসাবাদে তারা বৈধ কোন প্রমান দেখাতে পারেনি। ট্রাকে ভর্তি মাটি পুনরায় কর্তন স্থানে ফেলার পর ট্রাকটিও গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। গ্রেফতারকৃত আতাউর রহমান যৌথ বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন লাফার্জ হোলসিমের ফেরি চালক আবুল বশরের ছেলে কথিত যুবদল নামধারি ধোকাবাজ বহুরুপি সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের কাছ থেকে তারা সুরমা নদীর তীরের মাটি টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আতাউর রহমান আরও জানায়, সাজ্জাদ মনির নামের ওই তাদেরকে বলেছে মাটি বিক্রির টাকা তারা চারজনে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। অন্যরা হলেন, জসিম উদ্দিন, নোমান ইমদাদ কানন ও খায়রুদ্দিন। সূত্রে জানা গেছে এই সাজ্জাদ মনির নামের কথিত যুবদল নামধারী বহুরুপি একজন ইয়াবা সেবনকারী ও ব্যবসায়ি।বহুরুপি সাজ্জাদ মাহমুদ মনির সড়ক ও জনপথ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ফেরী চালক নোয়াখালি জেলার আবুল বাশারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় বছরের পর বছর সড়ক ও জনপথের সরকারী কোটি কোটি টাকার ভূমিতে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড চালাচ্ছে সে। উপজেলার লাফার্জ ফেরীঘাট এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২একর ৩০শতক পতিত ভুমিতে রয়েছে। ভুমিটিতে সরকারী কর্মচারীদের বসতঘর ও মালামাল রাখার জায়গা বেতীত ফাকা ভূমিতে শর্তসাপেক্ষে বৃক্ষরোপনের জন্য ২০০৪ সালে আবেদন করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের চতুর্থ শ্রেণীর ১৪ জন কর্মচারী। এতে প্রায় ত্রিশটি শর্তে ভূমিটি শুধুমাত্র বৃক্ষরোপণের জন্য লীজ দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ ১৪ জনের নামে লীজ হলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ফেরী চালক আবুল বাশার ছাড়াই কখনো কাউকে দেখা যায় না এখানে। আবুল বাশার বর্তমানে চুক্তি ভিত্তিতে ফেরি চালান দোয়ারাবাজার এলাকায়। তার ছেলে সাজ্জাদ মসহমুদ মনিরের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে সড়ক ও জনপথের কোটি কোটি টাকার এ ভূমিটি। এতে বৃক্ষরোপণের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে বিভিন্ন কৌশলে মাটি ও গাছ বিক্রি করেই যাচ্ছেন দীর্ঘদিন যাবত। শুধু তাই নয় এই ভূমির পার্শবর্তী সুরমা নদীর তীর ও রেহাই পাচ্ছে না মাটি খেকোর হাত থেকে। গত ২৭ ডিসেম্বর মাটি ভর্তি একটি ট্রাক সহ দুজন আটকের পর যৌথ বাহিনীর কাছে দেয়া তাদের বক্তব্যে উঠে আসে এমন চাঞ্চল্যকর হরিলুটের তথ্য। এর আগেও বিভিন্ন কৌশলে সড়ক ও জনপথের ভুমি থেকে মাটি ও পাথর তুলে বিক্রির করেন সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের বিরুদ্ধে। তার অবৈধ এমন কর্মকান্ডে সরকারী ভূমিতে জন্মানো শত বছরের পুরোনো গাছপালা আজই ধ্বংস হচ্ছে। মাটি উত্তোলন করার কারণে এসব গাছ নিচে পড়ছে। গাছগুলো এভাবে কিছুদিন থাকারপর সুকৌশলে এসব বিক্রি করে মনির সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। যে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। এসব এলাকার পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। সুরমা নদীর তীরে মাটি বিক্রয়ের বিষয়টি জানাজানি হলে সরেজমিনে দেখা যায় বাড়ির ভেতরে বড় বড় গর্ত করে নেওয়া হচ্ছে মাটি। যে কারণে যুকিতে পড়েছে গাছগাছালি। সুরমা নদীর পাড় দেওয়া হয়েছে অন্যের দখলে বাড়ির ভেতরে অনেক জায়গায় রয়েছে পুরোনো গর্ত। স্থানীয়রা জানিয়েছেন গত ২০২৩ সালে শতশত গাছ কেটে ট্রাক বুঝাই করে নেওয়া হয়েছে এখান থেকে। এছাড়া ভূমি কুঁড়ে পাথর নিয়ে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালিতে তৈরী করা হয়েছে বিল্ডিং। অনেক বার সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বিষয়টি অবগত করা হলেও রহস্যজনক কারনে দুনীতিবাজ কর্মকতারা তার বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা।এখানে দীনদিন চলতেই আছে তার এমন কর্মকান্ড। এলাকাবাসি জিজ্ঞেস করে বলেন এটি তার লীজ নেয়া আছে। এখানে লিজের চুক্তিতে অনুযায়ী শতকরা ৫০ ভাগ ভাগাভাগির অংশিদারী চুক্তিতে সড়ক ও উপ বিভাগের অধিনস্ত ছাতক বাঘবাড়ি ষ্টেকইয়ার্ডের এই ভূমিতে সামাজিক বনায়নের জন্য অনুমতি দেয়া হয়। চাদপুর জেলাধীন মতলব থানার পাচআনি গ্রামের বাসিন্দা সামছুল হকের পুত্র ইব্রাহীম আলী আজহার সহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৪ জন কর্মচারীকে। কিন্তু সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের পিতা আবুল বাশার ছাড়াই অন্য কোনো কর্মচারীকে এসব কর্মকান্ডে দেখা যায়নি। ১৪ জন লিজ গ্রহিতার মধ্যে ৩ জন হচ্ছে ছাতক উপজেলার। এছাড়াও ভূমিতে বৃক্ষরোপণ ছাড়াই কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন া হন্তান্তর না করার শর্ত সহ প্রায় ৩০টি শর্তে লিজ দেয়া হলেও এসব শর্ত মানছেন না আবুল বশর। এটি হস্তান্তর যোগ্য না হলে কৌশল খাটিয়ে গত ২০১৬ সালে নোটারীর পাবলিকের মাধ্যমে দেখা-শুনার দায়িত্ব দিয়েছে ফেরী চালক আবুল বশর তার ছেলে বহুরুপি সাজ্জাদ মাহমুদ মনির নামে। এতে দেখা যায় তার নাম সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের পরিবর্তে মতিউর রহমান। একই দৃশ্য দেখা গেছে তার ডেসটিনি ২০০০লিমিটেডের ইনফরমেশন ফরমে। যদিও এটি ভুলবস লিপিবদ্ধ করার দাবী করে গত ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্ভর মাননীয় নোটারী পাবলিক সুনামগঞ্জের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়েছে মর্মে জানা গেছে। এতে ও কোনে রহস্য থাকতে পারে বলে
এলাকাবাসীর ধারনা করা যাচ্ছে। বহুরুপি সাজ্জাদ মাহমুদ মনির সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোনো কর্মচারী না হলেও তার পিতা আবুল বাশারের চাকুরীর সুবাদে বসবাস করতেন সড়ক ও জনপথের এই ষ্টেকইয়ার্ডে। এ সুবাদে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের চোখে ধুলো দিয়ে অবাধে চালায় হরিলুট কমকান্ড। এছাড়াও কখনো সংবাদকর্মী, কখনো দলীয় নেতা বা কর্মী,কখনো ব্যবসায়ী পরিচয় বহন করেন। ছাতকে সুরমা বুকেই চালাচ্ছেন নানা অপরাধ কর্মকান্ড। নিষিদ্ধ ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সার বানিজ্যের আড়ালে রয়েছে সিএনজি চুরি,নৌপথে চাদাবাজি ও অবৈধ চোরাচালান ও মাদক ব্যবসার মুলহোতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছেন এসব রিক্সা আটক করলে সংবাদকর্মী পরিচয়ে ছাড়িয়ে নিতেন সাজ্জাদ মনির। এছাড়া মদ গাজা ও ইয়াবা সেবনে রয়েছে তার ব্যপক পারদর্শিতা,ইতিপূর্বে তার ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। এছাড়াও তার বিরদ্ধে রয়েছে ইয়াবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দীর্ঘদিন যাবত পঙ্গু ছিলেন। যে কারণে ইতিমধ্যে অনেকের কাছেই তিনি ইয়াবা মনির ও লেংড়া মনির নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলেও এসব কর্মকান্ড চালাতে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ও তার ভাতিজা তানবির,যুবলীগের নেতা সানী পৌরসভার প্যানেল মেয়র তাপস চৌধুরীসহ একাধিক নেতাকমীদের লিয়াজো ও সরকারী কর্মচারীদের সাথে ছবি তুলে ফেইসবুকে আপলোড দিতে দেখা গেছে তাকে। বর্তমানে যুবদল নেতা পরিচয় সহ সরকারী দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তোলার ব্যপক পোষ্ট তার ফেইসবুক আইডিতে করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রচারের ইঙ্গিত দিয়ে পোষ্ট করেও সুবিধা নেওয়ার ধান্দা অপতৎপরতা তার নিজ ফেইসবুকে দিয়ে করে যাচ্ছে। তার করা এসব পোষ্টের ভিত্তিতে কখনো কোনো সংবাদ প্রচার হতে দেখা যায়না। এছাড়াও কথিত অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষে পৌর শহরে একটি অফিস করেছেন। তার এই অফিসের উপর তলা থেকে গত ২৪ ডিসেম্বর ভারতীয় চোরাই পন্যসহ পৌর ছাত্রদলের দুজন কমী সেনা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। এতেও সে এঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেন।
গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে সরকারী অফিস আদালতে গিয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে হুমকী ধামকী দেয়ার অভিযোগও রয়েছে বহুরুপি সাজ্জাদ মনিরের বিরুদ্ধে। এছাড়াও হাওর রক্ষার বাধ পিআইসির কাজের জন্য আবেদন করে ব্যর্থ হয়ে বাধের কাজ শেষ হবার আগেই নিজের ফেইসবুকে অপ-প্রচার চালাতে পিআইসির টাকা ভাগ-বানোয়ারা হচ্ছে। তার নিজের দাবী পুরন না হলে তথ্য ছাড়াই তার ফেইসবুকে হুমকী মুলক পোষ্ট দিয়ে নানা অপ-প্রচার চালায়। এব্যাপারে থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরকে প্রধান আসামী করে তহসিলদার বাদী হয়ে থানায় ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ প্রধান আসামীকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।
বিষয়: #গ্রেপ্তার #চর #ছাতক #ট্রাকসহ #দুজন #ব্যবসা #মাটি #সুরমা