বৃহস্পতিবার ● ২ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাট করতে ‘মেজিক পরিকল্পনা’ করেছিল আওয়ামী লীগ
বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও লুটপাট করতে ‘মেজিক পরিকল্পনা’ করেছিল আওয়ামী লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক লুটপাট ও দুর্নীতি করতে ‘মেজিক পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছিল আওয়ামী লীগ বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলছে, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে জনগণের চোখে ভেলকির মাধ্যমে পরিচালনা করে অর্থ লুটপাট এবং পাচারকে অন্যতম অগ্রাধিকার দেয়। শুরু থেকেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ধ্বংসের লক্ষ্যে অত্যন্ত সুকৌশলে অবাস্তব মেজিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার নীলনকশা করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চরম অনিয়ম ও দুর্নীর্তির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ।
গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
লিখিত বক্তব্য টুকু বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্নয়নের নামে বিদেশে রোড-শো আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারী, বৈদেশিক ঠিকাদার, ব্যাংক, এবং বিভিন্ন এজেন্ট সংগ্রহ করা হয়। পরে বলা হয়, বিদ্যুতের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি, এবং কৃষি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়। এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে ধোকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাটসহ বিদেশে অর্থ পাচার করা।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ১৫ থেকে ২২ বছরের মেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেও মনোযোগ দেয়া হয়। তবে অনুমোদন থেকে পরিচালনার প্রতিটি ধাপে দুর্নীতি, অনিয়ম, এবং স্বেচ্ছাচারিতা ছিল। বিদ্যুৎ খাত শুরু থেকেই ছিল অপরিকল্পিত। ১৫ বছরে তিনটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। বরং মাস্টারপ্ল্যান এড়িয়ে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। আর এসব বিষয় নিয়ে যাতে কোনো ধরনের আইনি প্রশ্ন না উঠে এজন্য ২০১০ সালেই বিতর্কিত দায়মুক্তি প্রণয়ন করে সরকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আইনগত জবাবদিহিতা এড়ানোর জন্য ২০১০ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ প্রণয়ন করা হয়। প্রথমে এটি দুই বছরের জন্য কার্যকর করা হলেও পরবর্তীতে কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। মাত্র দুই বছরের জন্য আইন করা হলেও তা ১৫ বছর ধরে চলছে।
টুকু বলেন, বিদ্যুৎ সংকট মেটানোর নামে ২০০৯ সাল থেকে বেসরকারি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ছোট-বড় প্রায় ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হলেও এর অধিকাংশই অকার্যকর। তারপরও ডলারের রেটে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে, যা বিদ্যুৎ খাতের জন্য ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। দায়মুক্তি আইনের আওতায় ৯০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অকার্যকর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া, রেন্টাল প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বছর হলেও তা ১০-১৫ বছর ধরে চালানো হয়েছে। ‘ভারত ও চীনের’ অযোগ্য সরবরাহকারীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত।
বিদ্যুৎ খাতের লোকসানের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ১২ বছরে পিডিবি লোকসান গুনেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছর লোকসান দাঁড়াবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগের মেজিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয় বলে জানান ইকবাল হাসান টুকু। তিনি বলেন, এগুলো হলো বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং এনটিপিসি লিঃ, ভারত এর একটি যৌথ উদ্যোগ কোম্পানি)], ইপিআরসি, স্রেডা, সিইআই, বিপিএমআই, নওপাজেকো, জয়েন্ট ভেঞ্চার, সিপিজিসিবিএল, বিআরপিএল, আরপিসিএল, ওজোপাডিকো নেসকো, বাংলাদেশ পাওয়ার ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড (বিপিইএমসি), বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (বেসিকো)।
টুকু আরও বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান বলেন, প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাৎ হয়েছে। দূর্নীতির সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকে জড়িত রয়েছেন।
চুক্তির শর্তাবলির কারণে আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে জনগণের অর্থ পাচার হচ্ছে জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, মোদিকে খুশি করতে আদানি ও রিলায়েন্সকে দেয়া হয় ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ১৮ টাকা। বিদ্যুতের দাম ১৮ টাকা প্রতি ইউনিট। ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ১১ বিলিয়ন ডলার। ২০৪৭ সালে বিদ্যুতের দাম ৩৬.৪১ টাকা প্রতি ইউনিটে উন্নীত হবে।
বিষয়: #খাত #দুর্নীতি #বিদ্যুৎ