

শনিবার ● ১৫ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » আলোকিত ব্যক্তিত্ব » আলোকময় মানুষ। আলো জ্বালানোর কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
আলোকময় মানুষ। আলো জ্বালানোর কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
::সংগৃহীত ::
তাঁর কথার সঙ্গে থাকা মানে আনন্দের সঙ্গে বসবাস। হা হয়ে, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতে হবে ঝরে পড়া সুরের মূর্ছনার মতোন সে কথা। তাতে কৌতুক , রসবোধের পরিচয় , আর বৈদগ্ধ্য মিলে মিশে থাকে। তিনি কথার ফাঁকে বাংলা - ইংরেজি কবিতা, গজল, শায়েরি মুখস্থ বলেন। বইয়ের নাম, রবীন্দ্রনাথ - প্লেটো - শেক্সপিয়ার , মিল্টন ইকবাল , গীতা বা উপনিষদ, ইতিহাস - মনীষীদের আত্মজীবনী থেকে একের পর এক উদ্ধৃতি দিতে থাকেন। মুগ্ধ শ্রোতারা অবাক বিস্ময়ে চুপচাপ শুনতে থাকে।
সঙ্গীত, গল্প , কবিতা পড়ে বা শুনে যে আনন্দ, তার থেকে কোনো অংশে কম নয় তাঁর কথকতা৷ মন্ত্রসম !যা শুনলে - শুনতেই ইচ্ছা করে! মনে হয় কত কিছু করার ছিল, আছে হয়ত এখনও….!
তাঁর ক্লাসে ২৫০ জনের জায়গায় ৫০০ ছাত্র বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতো কেউ বেন্চে বা ফ্লোরে। কোনদিন রোল কল করতেন না। ক্লাস বিমুখেরা মুখিয়ে থাকতো স্যারের ক্লাশের জন্য। গল্প বলতেন কৌতুক মিশিয়ে-
এক পাখাওয়ালা হাতপাখা বিক্রি করে। একটা পাখার দাম ১০ পয়সা, অন্য একটা ১ টাকা। এক বাঙালি বাবু সস্তার ১০ পয়সার পাখা কিনে বাড়ি গেল। তারপর বাতাস করবার শুরুতেই পাখা গেল ভেঙে। সে ভাঙা পাখা হাতে নিয়ে ফিরে এল পাখাওয়ালার কাছে।
“…কেমন পাখা দিলা! বাতাস করার আগেই ভেঙে গেল!”
পাখাওয়ালা বলল-
১০ পয়সার পাখা দিয়া বাতাস করার তো একটা নিয়ম আছে। আপনে পাখাটা সোজা কইরা ধইরা মাথাটা এই দিক ওই দিক নাড়বেন, তাইলে আর পাখা ভাঙব না। ১০ পয়সার পাখা কিনবেন, আর সেইটা নাড়ায়া বাতাস খাইবেন, তাইলে তো পাখা ভাঙবই। ১ টাকারটা কিনতেন, ভাঙত না!
সবার প্রিয় সায়ীদ স্যার গল্পটার শেষে বলতেন -
“তোমরা ১ টাকার পাখা বানাবে, না ১০ পয়সার পাখা বানাবে তোমরাই বিচার করবে। উৎকর্ষের সাধনা করতে হলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বইগুলো পড়তে হবে ।…. আমরা যখন মানুষ হওয়ার সাধনা করব, তখন সবচেয়ে সুন্দর মানুষ হওয়ার সাধনা করব।”- সস্তায় মানে সাধনা ছাড়া উন্নত জীবন গড়া সম্ভব নয়।
একজন শিক্ষক, আশির অধিক বছর কাটানোর পরেও সবাইকে আজও বলে চলেছেন বই পড়- বই পড়৷ আলোকিত মানুষ হও৷
সঙ্গীত, গল্প , কবিতা পড়ে বা শুনে যে আনন্দ, তার থেকে কোনো অংশে কম নয় তাঁর কথকতা৷ মন্ত্রসম !যা শুনলে শুনতেই ইচ্ছা করে, মনে হয় কত কিছু করার ছিল, আছে হয়ত এখনও!
সমস্ত বিশ্বসাহিত্য তাঁর প্রজ্ঞায়৷ বারবার তুলে ধরেন নিজ কথায়৷ বাংলা ভাষায় তিনি যখন কোনো কিছু বলেন,পৃথিবীর সব শ্রেষ্ট মণিষাকে সম্মানিত করেন ৷
৮০র দশকের শেষ দিকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ক্ষণিকের দেখা এই মহান শিক্ষক ছিলেন প্রারম্ভিক জীবনের পথ প্রদর্শক।
আমি যদি একদিনের সম্রাজ্ঞী হতাম, পড়ুয়াদের আলোকিত হতে -
আলোকময় মানুষটির আনন্দময় কথা শুনতে বাধ্যকরতাম৷
যাঁর জন্ম
২৫ জুলাই ১৯৩৯
পার্ক সার্কাস, কলকাতা
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #আলো #আলোকময় #জ্বালা #মানুষ