

বুধবার ● ১৯ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রূপগঞ্জে যুবদলের দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১
রূপগঞ্জে যুবদলের দুপক্ষের সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত ১
বজ্রকণ্ঠ নিউজ ডেস্ক::
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়ায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজনের প্রাণ গেছে; এতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দুইজন।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ সার্কেল) মেহেদী ইসলাম।
নিহত মো. হাসিব (২৮) চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত আনোয়ার হোসেন মোল্লার ছেলে।
গুলিবিদ্ধ রাসেল (৩০) ও বশর (৩২) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানিয়েছেন একই হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক।
সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে যুবদলের দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা প্রথমে সংঘর্ষে জড়ান। এতে গুলিবিদ্ধ একজন মারা গেছেন।
খবর পেয়ে বুধবার সকালে র্যাব ও পুলিশ চনপাড়ায় যৌথ অভিযান চালায়। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
হাসিবের বড় ভাই যুবদল কর্মী মো. বাবু বলেন, “বুধবার রাত ২টার দিকে হাসিব গুলিবিদ্ধ হন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ৩টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসিব এক সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালালেও বর্তমানে বেকার ছিলেন বলে জানান তার ভাই।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারাবির নামাজের পর চনপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মনির দেওয়ানের অনুসারীরা এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। তাকে স্থানীয় যুবদলের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
খবর পেয়ে ওই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল করিম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি গোলাম রাব্বানী ঘটনাস্থলে যান। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, তারাবির নামাজ শেষে হাতাহাতির ঘটনার পর দিকে উভয়পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র, টেঁটা, শাবল ও দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ভোর পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
যোগাযোগ করা হলে যুবদল নেতা মনির হোসেন বলেন, “চনপাড়াকে মাদকমুক্ত করার চেষ্টা করছি। গতরাতে এক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে লোকজন যুবদলের কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
“পরে তাকে ছাড়িয়ে নিতে আমাদের ওপর হামলা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। আমরা নিজেদের বাঁচাতে কেবল তাদের প্রতিরোধ করেছি। তবে আমরা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করিনি।”
প্রতিপক্ষের লোকজন আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ নিয়ে তাদের ওপরে হামলা করেছে বলে দাবি করেন যুবদলের এই নেতা। তবে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে নিজের সম্পৃক্ততা কথা অস্বীকার করেন মনির।
এ বিষয়ে যুবদল নেতা আব্দুল করিম ও মো. রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পর থেকে তারা এলাকায় নেই। তাদের মোবাইল নম্বরে কল করা হলে, তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চনপাড়ার এক বিএনপি নেতা বলেন, “অভ্যুত্থানের আগে চনপাড়ার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর অনুসারীরা। আওয়ামী লীগের আমলে এই চনপাড়া ছিল মাদক ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য।
“অগাস্টে আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিএনপির কয়েকজন নেতা মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দিচ্ছেন এবং চনপাড়ায় আধিপত্য বিস্তার করছেন। এ নিয়ে বিএনপির লোকজনের মধ্যেও কয়েকটি ভাগ তৈরি হয়েছে।”
রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ন মোবাইলে বলেন, “চনপাড়ায় যুবদলের দুপক্ষের মধ্যে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের বিষয়টি শুনেছি। চনপাড়া তো ক্রিটিক্যাল জায়গা আপনারাও জানেন।
“তবে, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত নেতাকর্মীর ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে এমন কারও দলে জায়গা হবে না।”
এ ঘটনায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত থানায় কোনও মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন কাদের।
বিষয়: #গুলি #ডেস্ক #দু'পক্ষ #নিউজ #নিহত #বজ্রকণ্ঠ #যুবদল #রূপগঞ্জ #সংঘর্ষ