

বৃহস্পতিবার ● ২০ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » কবি ও কবিতা » স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি
স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি
বিচিত্র কুমার
স্বাধীনতা—তোমার অর্থ কী?
কেবল একটুকরো পতাকা?
নাকি বাতাসের বুকে গর্জন তোলা ইতিহাসের শিখা?
তুমি কি খোলা আকাশের মতো উদার?
নাকি বজ্রনিনাদের মতো প্রচণ্ড তেজস্বী?
আমি দেখি তোমায় ভোরের প্রথম আলোয়,
যেখানে শিশিরবিন্দুর মতো স্বপ্ন ঝলমল করে,
দেখি রক্তিম সূর্যের কিরণ হয়ে
তুমি জ্বলে ওঠো একেকটি শহীদের কপালে।
স্বাধীনতা মানে কি কেবল যুদ্ধের গান?
নাকি মা-বাবার কপালে ছোঁয়া শিউলি সুবাস?
স্বাধীনতা কি নিঃশব্দ কান্না,
যা বয়ে যায় বিধবার শাড়ির কোণে?
নাকি নবজাতকের হাসি,
যে প্রথম শ্বাস নেয় মুক্ত আকাশের নিচে?
তুমি কি রণক্ষেত্রে ঝরা রক্ত?
নাকি কৃষকের ঘামে ভেজা মাঠের সবুজ?
তুমি কি বন্দীশালার দেয়ালে লেখা রক্তাক্ত কবিতা?
নাকি মায়ের দোয়ার সামনে জ্বলতে থাকা প্রদীপ?
আমি দেখেছি তোমায় বধ্যভূমির স্তব্ধতায়,
যেখানে গুলির শব্দ হয়ে গেছে বাতাসের অনুবাদ,
আমি শুনেছি তোমায় মাতৃভাষার উচ্চারণে,
যেখানে প্রতিটি বর্ণ গাঁথা আছে আত্মত্যাগের মুক্তোয়।
তুমি ছিলে বাঙালির মুখে সেই আগুন,
যা বয়ে গেছে বজ্রবৃষ্টি হয়ে,
তুমি ছিলে একাত্তরের সেই ঝড়,
যা শেকল ভেঙে বুনেছিলো নতুন ভোর।
স্বাধীনতা, তুমি কি কেবলই ইতিহাসের পাতা?
নাকি প্রতিটি শিশুর চোখে ভাসা উজ্জ্বল স্বপ্ন?
তুমি কি নেতা-মন্ত্রীর ভাষণমালা?
নাকি ভুখা পেটের হাহাকার?
আমি চাই না, তুমি শুধু মুখরিত হও স্লোগানে,
আমি চাই না, তুমি বন্দী হও সংবিধানের ফ্রেমে,
আমি চাই তুমি থাকো মানুষের বুকে,
থাকো তার স্পন্দনে, থাকো তার ধমনীতে।
স্বাধীনতা মানে একজোড়া কর্মঠ হাত,
যে হাত লাঙল ধরে, যে হাত কলম ধরে,
স্বাধীনতা মানে এক টুকরো হাসি,
যে হাসিতে নেই অপমান, নেই অবহেলা।
স্বাধীনতা মানে তুমি—
একটি বিশুদ্ধ নীল আকাশ,
যেখানে চিল উড়ে যায় নিঃশঙ্ক,
যেখানে মানুষ হাঁটে নিজের ছায়ায়,
আর শিশুরা শিখে ভালোবাসার ভাষা।
স্বাধীনতা, তুমি নদীর স্রোতের মতো বইবে অনন্তকাল,
মানুষের হৃদয়ে, মানুষের স্বপ্নে,
এই মাটির শেকড়ে, এই আকাশের গানে।
বিষয়: #প্রতিচ্ছবি #স্বাধীনতার