

মঙ্গলবার ● ১ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বাংলাদেশে উগ্রপন্থা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর : প্রেস উইং
বাংলাদেশে উগ্রপন্থা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন বিভ্রান্তিকর : প্রেস উইং
বজ্রকণ্ঠ সংবাদ :::
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে সংকটাপন্ন রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করে দেশটি ধর্মীয় উগ্রপন্থার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, বাস্তবতার সঙ্গে তা ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বিভাগের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘বিভ্রান্তিকর ও একপক্ষীয়’।
বিবৃতিতে নিউইয়র্ক টাইমসের ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি শুধু রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতাকে সরলীকৃতভাবে তুলে ধরে না, বরং ১৮ কোটি মানুষের একটি জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করে। বাংলাদেশ গত বছর অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে, যা এই প্রতিবেদনে উপেক্ষিত হয়েছে। বরং, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর ও পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, যা দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে না।
নিউইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যখন নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করছে, তখন কট্টরপন্থি ইসলামিস্টরা একটি সুযোগ দেখতে পাচ্ছে।
তবে ওই প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেছে সিএ প্রেস উইং।
১. বাংলাদেশের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলোর বাস্তব চিত্র
নিবন্ধে ধর্মীয় উত্তেজনা ও রক্ষণশীলতার কিছু দিক তুলে ধরা হলেও, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে, নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে, এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নারী সুরক্ষা ও উন্নয়নের প্রতি অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ‘যুব উৎসব ২০২৫’, যেখানে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে প্রায় ২৭ লাখ মেয়ে ৩ হাজার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ইভেন্টে অংশ নিয়েছে। এ উৎসবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন।
অথচ একটি ফুটবল ম্যাচের বিরোধিতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২,৯৯৯টি সফল আয়োজনকে উপেক্ষা করা এবং এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের সামাজিক অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর।
আরেকটি মিথ্যা দাবি হলো, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোর অবস্থান নেননি। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ড. ইউনূস আজীবন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করে এসেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি লাখ লাখ নারীকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যার স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। একজন দুই কন্যার পিতা হিসেবে ড. ইউনূস সবসময় নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার পক্ষে সোচ্চার থেকেছেন।
২. ধর্মীয় সহিংসতা ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ধর্মীয় সহিংসতার মধ্যে পার্থক্য করা জরুরি। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর কিছু সংঘর্ষ হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের ফল। কিন্তু এগুলোকে ধর্মীয় সহিংসতা বলে উপস্থাপন করা চরম বিভ্রান্তিকর।
সরকার বারবার স্পষ্ট করেছে যে, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে উগ্রপন্থিদের কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
৩. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের উত্থান
বাংলাদেশ বর্তমানে এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। গত সাত মাসে দেশের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল রয়েছে এবং টাকার বিনিময় হার ১২৩ টাকা প্রতি ডলারে স্থির রয়েছে।
২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে। প্রধান উপদেষ্টা গত আট মাস ধরে নিরলসভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন। সম্প্রতি তার চীন সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদান পেয়েছে।
এছাড়াও, আগামী সপ্তাহে ঢাকায় ‘ইনভেস্টরস কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ৫০টি দেশের ২ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি বিনিয়োগকারী অংশ নেবেন। এতে মেটা, উবার, স্যামসাং-এর মতো বৈশ্বিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
৪. অতি সরলীকরণ ও বাংলাদেশের সম্মান রক্ষা
একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় একজন ব্যক্তি শাস্তি না পাওয়ার ঘটনা তুলে ধরে পুরো দেশকে উগ্রপন্থার শিকার বলে প্রচার করা অন্যায়। ১৮ কোটি মানুষের দেশকে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে বিচার করা ভুল।
বিশ্বের বহু দেশেই উগ্রবাদী গোষ্ঠী সক্রিয়, কিন্তু তাতে ওই দেশগুলোর অগ্রগতিকে খাটো করে দেখা হয় না। একইভাবে, বাংলাদেশও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং গণতন্ত্র ও সামাজিক অগ্রগতির পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।
৫. বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ
নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে উগ্রপন্থার উত্থান অনিবার্য, যা একেবারেই অতিরঞ্জিত ও ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা, সক্রিয় নাগরিক সমাজ, তরুণ সমাজ এবং নারী নেতৃত্ব উগ্রপন্থাকে প্রতিহত করছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনো উগ্রবাদী গোষ্ঠী নির্ধারণ করবে না, বরং এ দেশের জনগণ নির্ধারণ করবে।
বিষয়: #উইং #উগ্রপন্থা #টাইমস #নিউইয়র্ক #প্রতিবেদন #প্রেস #বাংলাদেশ #বিভ্রান্তি
