

রবিবার ● ১৩ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, বাধাগ্রস্ত হবে নতুন বিনিয়োগ
শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, বাধাগ্রস্ত হবে নতুন বিনিয়োগ
বজ্রকণ্ঠ ডেস্ক::
করোনা সংক্রমণের সময় থেকে শুরু করে ২০২৪-এ রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতির বড় ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল তাদের। তারপরেও এ সরকার নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ালো।
এতে নতুন শিল্পে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে মনে করছেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, যেখানে নতুন সরকার একদিকে সার্বিক বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক ওই সময় এ গ্যাসের দাম বাড়ানো ‘উল্টো নীতি’ নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত। এতে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। এছাড়া প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআইও কমবে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এতে শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভে ৩১ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন- সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। নতুন দর চলতি (এপ্রিল) মাসের বিল থেকেই কার্যকর হবে।
এ পরিস্থিতিতে দেশের নিট পোশাক রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জাগো নিউজকে বলেন, শিল্প গ্যাসের দাম আগে ৩০ টাকা ছিল, সেটাই নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। এরপর আরও দাম বাড়ালে নতুন করে শিল্প স্থাপনের আগ্রহ হারাবেন বিনিয়োগকারীরা।
তিনি বলেন, সরকার একদিকে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলছে, আবার বিনিয়োগ ঝুঁকিতে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সাবেক সভাপতি, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের (ইপিজিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হুমায়ুন রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন- তাদের বেশি বিল দিতে হবে। যে কারণে চলমান অনেক শিল্পের খরচ বাড়বে। অনেক পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, কাঁচামালের দাম বাড়বে। শেষে পণ্যের দাম বাড়বে, যা সবাইকে ভোগাবে।
হুমায়ুন রশীদ বলেন, দাম বাড়লেও এ দেশে গ্যাসের সরবরাহ ঠিক থাকে না। যে কারণে নতুন উদ্যোক্তাদের গ্যাসের মোটা খরচের পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানির জন্য প্রচুর ব্যয় করতে হয়। সরবরাহ ঠিক থাকলেও দাম কিছুটা গ্রহণযোগ্য মনে হতো। কিন্তু সেটা নেই। সবকিছু মিলিয়ে এ সিদ্ধান্তে অনেকে শিল্প সম্প্রসারণের আগ্রহ হারাবেন।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যে কোনোভাবেই খরচ বাড়ানো ওই খাতের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রেও অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের চেয়ে আমরা পিছিয়ে যাব।
গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও সরবরাহ ঠিক হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমস্যায় শিল্পগুলো অনেকদিন ধরে ভুগছে। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিও অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট ইস্যু নিয়ে চিন্তিত। ঠিক সে সময় এ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয় কঠিন হবে ব্যবসায়ীদের জন্য। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলোর মালিকরা বড় সমস্যায় পড়বেন।
রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। তিনি এ সময় দাবি করেন, দেশের গ্যাস কমার সঙ্গে সঙ্গে এলএনজি আমদানি বাড়তে থাকে। এলএনজির বাড়তি দাম দিতে গিয়ে চাপে পড়ে পেট্রোবাংলা। তারা ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। তবে গণশুনানিতে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী দাম বাড়ানো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। যে কারণে সমন্বয় করে কিছুটা দাম বাড়ানো হলো।
চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব চাহিদা ধরলে দাম অনেক বেশি বাড়াতে হতো। তাই ভোক্তার জন্য সহনীয় রাখতে ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ভর্তুকিরও হিসাব করা হয়নি।
নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে জালাল আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ কমার বিষয়টা এখনই বলা যাবে না। নতুন বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে কি না- তা নজরে রাখা হবে। নতুন যারা আসবে, তারা যদি দেখে তাদের পোষাবে, তাহলে তারা আসবে। তারা বিকল্প জ্বালানিও ব্যবহার করতে পারে।
বিষয়: #গ্যাসের #নতুন #বাধাগ্রস্ত #বিনিয়োগ #মূল্যবৃদ্ধি #শিল্পে #হবে
