

সোমবার ● ১৪ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব » চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই গায়ানার ওপর চড়া শুল্ক ট্রাম্পের?
চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই গায়ানার ওপর চড়া শুল্ক ট্রাম্পের?
বজ্রকণ্ঠ ডেস্ক::
দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে ভেনেজুয়েলা ও সুরিনামের মাঝখানে অবস্থিত ছোট দেশ গায়ানা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বেশ কিছু দেশের ওপর প্রস্তাবিত চড়া শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় আপাতত কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে গায়ানা।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—কেন গায়ানার রপ্তানিপণ্যের ওপর আগে থেকেই ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ ধার্য করা হয়েছিল, যেখানে অন্য ক্যারিবীয় দেশগুলোর মতো তাদেরও ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করার কথা ছিল?
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফ্রান্সিস বেইলির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের অংশ, যেখানে গায়ানা একপ্রকার ‘চাপের’ মুখে পড়ে। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে, গায়ানায় চীনের ‘মজবুত অবস্থান’ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো গায়ানায় বিপুল বিনিয়োগ করেছে—সড়ক, হাসপাতাল, হোটেল, শপিং সেন্টার এমনকি রাজধানী জর্জটাউন থেকে ডেমেরারা-মাহাইকা অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ করছে বেইজিং-ভিত্তিক একটি কোম্পানি।
গায়ানা থেকে অপরিশোধিত তেল, সোনা ও বক্সাইট আমদানি করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র এবং এই পণ্যগুলোকে ৩৮ শতাংশ শুল্কের বাইরে রাখা হয়েছে। কিন্তু চীনা বিনিয়োগ পাওয়া চিংড়ি ও চিনি শিল্পে উচ্চ শুল্ক আরোপের কথা বলেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
বিশ্লেষক বেইলি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেন গায়ানাকে বলছে—‘আমরা যদি তোমার পাশে দাঁড়াই, তাহলে তোমাকে চীনা প্রভাব কমাতে হবে’। ট্রাম্প একেবারে লেনদেন-ভিত্তিক চিন্তাধারার মানুষ।
গায়ানার সরকার যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি, তবে দেশটি ২০১৫ সালে উপকূলীয় জলসীমায় তেল আবিষ্কারের পর থেকে দ্রুত উন্নতির পথে রয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে গায়ানা যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ১৩০ কোটি ডলার মূল্যের অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করেছে।
আতঙ্কে ক্যারিবীয়রা
যদিও পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য এখন ট্যারিফ ১০ শতাংশে স্থির করা হয়েছে, তবে বড় আশঙ্কা রয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়ে। কারণ, অঞ্চলটির অধিকাংশ দেশই ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভোগ্যপণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেসব চীনা পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছে, সেসব পণ্য ক্যারিবীয় অঞ্চলে পুনঃরপ্তানির ফলে মূল্য আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ক্যারিসা ওয়ার্নার বলেন, আমার ব্যবসা যেমন ঝুঁকির মুখে, তেমনি একজন সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমি আতঙ্কে রয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে বাসায় নিজেই শাকসবজি উৎপাদনের চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ক্যারিবীয় নেতারা মনে করছেন, এ সংকট মোকাবিলায় বাজার বহুমুখীকরণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। বারবাডোজের প্রধানমন্ত্রী ও ক্যারিকম-এর সভাপতি মিয়া মোটলি বলেন, এই বাণিজ্যযুদ্ধ আমাদের জন্য চরম মূল্যবৃদ্ধি ডেকে আনবে। আমাদের অবশ্যই আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ এবং কানাডার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে হবে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে বলেন, আমরা তোমাদের শত্রু নই, বন্ধু। আমাদের ওপর শুল্ক না বাড়িয়ে বরং একসঙ্গে কাজ করো।
সূত্র: বিবিসি
বিষয়: #ওপর #কারণেই #গায়ানার #ঘনিষ্ঠতার #চীনের #চড়া #ট্রাম্পের #শুল্ক #সঙ্গে
