

মঙ্গলবার ● ১৫ এপ্রিল ২০২৫
প্রথম পাতা » ধর্ম » পশুপাখির প্রতি দয়া ও ভালোবাসা
পশুপাখির প্রতি দয়া ও ভালোবাসা
বজ্রকণ্ঠ ডেস্ক::
আল্লাহর সৃষ্টি হিসেবে সব পশুপাখির প্রতি দয়া করা, খাবার খাওয়ানো, তাদের কষ্ট দূর করা, কোনো বিপদে পড়লে উদ্ধার করা সওয়াবের কাজ। পশুপাখিকে অহেতুক কষ্ট দেওয়া, হত্যা করা গুনাহের কাজ। হাদিসে এসেছে বনি ইসরাইলের এক ব্যাভিচারী নারী কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেছিলো। রাসুল (সা.) বলেন, একবার এক তৃষ্ণার্ত কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছিল। তৃষ্ণায় তার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম হয়। বনি ইসরাইলের এক ব্যভিচারী নারী তা দেখতে পেয়ে নিজের পায়ের মোজা খুলে মোজায় পানি ভরে কুকুরটিকে পানি পান করায়। এ কারণে তার আগের সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৩৪৬৭)
অপ্রয়োজনে পশুপাখিকে হত্যা করতে নিষেধ করে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি চড়ুই অথবা তা থেকে ছােট কোনো জন্তু অন্যায়ভাবে (খাওয়ার প্রয়োজন বা ক্ষতির আশংকা ছাড়া) হত্যা করে, আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন। (সুনানে নাসাঈ: ৪৩৫০)
পশুপাখিকে অহেতুক কষ্ট দেওয়ার পরিণতি হতে পারে জাহান্নাম। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, এক নারীকে একটি বেড়ালের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে তাকে বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে বেড়ালটি মারা গিয়েছিল, পরিণতিতে ওই নারী তার কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। সে যখন তাকে বেঁধে রেখেছিল, তখন তাকে আহার ও পানি দিত না এবং তাকে ছেড়েও দিত না যে, সে কীট-পতঙ্গ ধরে খাবে। (সহিহ বুখারি: ২৩৬৫)
ক্ষতিকর পশুপাখিকেও অহেতুক কষ্ট দেওয়া যাবে না
হিংস্র ও ক্ষতিকর পশুপাখি বা পোকামাকড় মেরে ফেলা জায়েজ। তবে কোনো হিংস্র, ক্ষতিকর প্রাণীকেও আগুনে পুড়িয়ে বা যে কোনোভাবে অহেতুক কষ্ট দিয়ে মারা নিষিদ্ধ। হাদিসে নবিজি (সা.) কোনো প্রাণীকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে বা শাস্তি দিতে নিষেধ করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কোনো এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুলের (সা.) সঙ্গী ছিলাম। তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য যান। আমরা সেখানে একটা চড়ুই পাখি দেখতে পাই, যার সাথে দুটি বাচ্চা ছিল। আমরা চড়ুই পাখির বাচ্চা দুটিকে ধরে ফেলি, ফলে মা পাখিটি আমাদের মাথার ওপর ডানা মেলে উড়তে থাকে। মা পাখিটির অস্থিরতা দেখে নবিজি (সা.) বলেন, এ চড়ুই পাখির বাচ্চা নিয়ে কে একে কষ্ট দিয়েছে? এর বাচ্চাগুলো তোমরা ফিরিয়ে দাও। এরপর তিনি পিঁপড়ার সেই গর্ত দেখলেন, যা আমরা পুড়িয়ে দিয়েছিলাম। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কে এটি পুড়িয়েছে? আমরা বললাম, আমরা পুড়িয়েছি। তখন তিনি বললেন, আগুন দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া শুধু আগুনের রব ছাড়া আর কারো জন্য সমীচীন নয়। (সুনানে আবু দাউদ: ২৬৭৫)
আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) কোনো প্রাণীকে হত্যা করার প্রয়োজন পড়লেও যথাসম্ভব কম কষ্ট দিয়ে হত্যা করতে বলেছেন। শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বিষয়ে উত্তম আচরণ আবশ্যক করেছেন। কাজেই আপনারা যখন (কোনো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মানুষ বা ক্ষতিকর প্রাণীকে) হত্যা করেন, তখন উত্তমভাবে হত্যা করুন। আর যখন পশু জবাই করেন, তখন তা ভালোভাবে করুন—ছুরি ধার দিয়ে নিন এবং পশুটিকে দ্রুত নিস্কৃতি দিন। (সহিহ মুসলিম)
পশুপাখি খাঁচায় রেখে পোষা যাবে?
উত্তমভাবে জীবন ধারণের উপযোগী খাবার-পানীয় ও পরিবেশের ব্যবস্থা করতে পারলে এবং কোনো কষ্ট না দিলে খাঁচায় রেখে পশুপাখি পোষা জায়েজ। কোনো কোনো সাহাবি খাঁচায় রেখে পাখি পুষতের বলে বর্ণিত রয়েছে। হজরত হিশাম ইবনে উরওয়া (রা.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) মক্কায় ছিলেন। তখন সাহাবিরা খাঁচায় পাখি রাখতেন। (আল আদাবুল মুফরাদ: ৩৮৩)
আনাস (রা.) বলেন, আমার এক ভাই ছিল; তার নাম ছিল আবু উমায়ের। যখনই সে নবিজির (সা.) কাছে আসতো, তিনি বলতেন, হে আবু উমায়ের! তোমার নুগায়ের কী করছে? (একটি পাখির নাম) সে নুগায়েরকে নিয়ে খেলত। তিনি আমাদের ঘরে নামাজের জন্য দাঁড়াতেন এবং আমরাও তার পেছনে দাঁড়াতাম। আর তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করতেন। (সহিহ বুখারি: ৬১২৯)
এ সব হাদিস থেকে বোঝা যায় যথাযথ পরিচর্যা করতে পারলে পশুপাখি পোষা নিষিদ্ধ নয়। তবে যথাযথ পরিচর্যা না করতে পারলে খাঁচায় পশুপাখি আটকে রাখা যাবে না, ছেড়ে দিতে হবে।
বিষয়: #ও ভালোবাসা #দয়া #পশুপাখির #প্রতি
