বুধবার ● ২৯ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » আওয়ামীলীগ কর্মীকে খুন, বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত বড় ভাই
আওয়ামীলীগ কর্মীকে খুন, বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত বড় ভাই
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নে ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদুল হক (৩৩) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর ২টায় ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড মিঠার দোকান এলাকার জাকির স্টোরের সামনে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহাম্মদুল গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর এই হুমকি আরও বেড়ে যায়। সর্বশেষ তিন দিন আগেও প্রাণনাশের হুমকি পান মোহাম্মদ।
একই ঘটনায় জিয়াবুল হক নামে তার আরেক ভাই গুরুতর আহত হয়েছেন। ছোট ভাই মোহাম্মদুল হককে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে ছুরিকাঘাতে আহত হন মেজ ভাই জিয়াবুল হক (৩৬)। তিনি বতর্মানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মোহাম্মদুল হকের বাড়ি সাতকানিয়ার ফকিরহাট এলাকার মিঠার দোকান এলাকায়। তিনি মিঠার দোকান এলাকায় মাছের খাদ্যপ্রস্তুতকারী একটি মিলে দিনমজুরের কাজ করতেন। ৫ বছর বয়সী এক কন্যাসন্তান রয়েছে তার। মোহাম্মদুল হকের বাবা ছদাহা পূর্ব আজিমপুর ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদিউল আলম।
বদিউল আলম বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ২০-২৫ জনের একদল কিশোর গ্যাং আমার ছেলেকে পেটে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কেরানিহাট আশ-শেফা হাসপাতাল পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম আশেক বলেন, সাতকানিয়ায় মাহমুদুল হক নামে এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষ। গুরুতর আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে বিকেল ৫টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী মোহাম্মদুল হকের ভাই ছদাহা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে মোহাম্মদুল হক নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেবের লোকজন তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। তিন দিন আগেও সোহাগ ও সাইফুল মিলে আমার ভাইকে হুমকি দিয়েছিল। আজকে সোহাগ ও সাইফুল মিলে আমার ভাইকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। সোহাগ তাকে ছুরিকাহত করেছে। এ সময় ফেরদৌসের ছেলে রায়হানও তাদের সঙ্গে ছিল। ঠাকুরদীঘি এলাকায় প্রকাশ্যে তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খুনের ঘটনার আগের দিন সোমবার (২৭ মে) বিকেল চারটায় ৫০ জনের কিশোর গ্যাং নিয়ে অস্ত্রসহ ছদাগা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান জয়ের নেতৃত্বে নিহত মোহাম্মদুল হকের বাড়ির আশেপাশে এসে শোডাউন করে যায়।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, ছদাহায় ছাত্রলীগের কমিটিতে আসার পর থেকে জয়ের নেতৃত্বে ছদাহা এলাকায় সংঘবদ্ধ কিশোর গ্যাং সক্রিয়। সোহাগ ও সাইফুল এই কিশোর গ্যাংয়েরই সদস্য।
মোহাম্মদুল হকের ভাই এনামুল হক বলেন, ‘যেহেতু সংগঠনের বিভিন্ন পদ ও দায়িত্বে আছি আমরা, সে কারণে নেত্রীর নির্দেশে নৌকার পক্ষে কাজ করেছে আমাদের পরিবার। আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করা যে এতো বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে আমরা ভাবতেও পারিনি।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল আলীম ছুরিকাঘাতে মাহমুদুল হক নামের যুবক খুনের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে দোষীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
দুপুরের এই ঘটনার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে রাত নয়টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার চায়ের দোকানে পাওনা টাকার বিষয়ে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দিনমজুর খুন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়। জড়িতদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। এখনও থানায় মামলা হয়নি।’
এর আগে গত ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব নেতাকর্মী বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। হামলায় অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, আবার অনেকে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের রক্ত ঝরছে। এ যেন জামায়াত-শিবিরের আমল সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আবার ফিরে এলো।
গত ২৭ মার্চ চরতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসানকে গভীর রাতে বাড়ি থেকে অপহরণের পর গাছের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে শরীর থেতলে ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় মো. মানিক নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকেও কোমরে, পিঠে, ঘাড়ে কোপায় হামলাকারীরা।
গত ৭ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন নগর এলাকায় নৌকার পক্ষে কাজ করায় আরমানুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ নেতাকে গুলি করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা। গুলির আঘাতে আরমানের চোখ থেঁতলে গেছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে পরে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
নির্বাচনের পর দিন ৮ জানুয়ারি এওচিয়া ইউনিয়নজুড়ে সারাদিন নৌকার সমর্থক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মারধর ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
নৌকার পক্ষে কাজ করায় এওচিয়া এলাকার মঞ্জুর মেম্বার ও আওয়ামী লীগ কর্মী মনিরকে বেদম মারধর করা হয়। নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন করায় ওই ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বুলুকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বুলু ও তার ছেলেকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া ৮ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলা তাঁতী লীগ নেতা মাইনুদ্দিন চৌধুরীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি চরতী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সাইফুলের অনুসারী হামলা চালিয়ে চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনা সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের হয়।
গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চরতী ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর গণসংযোগে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাইফুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাতকানিয়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান এবং চরতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই গণসংযোগে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী।
বিষয়: #আওয়ামীলীগ #কর্মী #খুন