বুধবার ● ১২ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ইসরায়েল-হামাস উভয়ই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে: জাতিসংঘ
ইসরায়েল-হামাস উভয়ই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে: জাতিসংঘ
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস উভয়ই গাজা যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের হামলার কারণে মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। উভয় পক্ষের হামলায় অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।
১২ জুন, বুধবার জাতিসংঘের তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে সংস্থার এক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে গণ্য। কারণ ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানি ঘটেছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এর প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা হামলা নিয়ে জাতিসংঘের কমিশন অব ইনকোয়ারি (সিওআই) দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তিনটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ সংস্থার সমন্বয়ে সিওআই গঠিত। ওই প্রতিবেদনে ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে দুটি সমান্তরাল ফলাফল পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে হামাসের হামলার উপর এবং আরেকটি ইসরায়েলের সামরিক প্রতিক্রিয়ার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে। ইসরায়েল কমিশনকে সহযোগিতা করেনি। বরং অভিযোগ করেছে, তাদের বিরোধীদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব রয়েছে প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েলের অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, বেসামরিক মানুষের বিপুল প্রাণহানির কারণে ইসরায়েলের তৎপরতাও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সামিল। ২০২৩ সালের ইসরায়েল অমানবিক নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর আচরণ করেছে ফিলিস্তিনি পুরুষ এবং কিশোরদের সঙ্গে। যেটা মানাবতা বিরোধী অপরাধ।
তবে, ওই তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাত দুষ্টের অভিযোগ তুলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। তবে, হামাসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
কমিশন বলেছে, ইসরায়েল তাদের কাজে বাধা দিয়েছে এবং তদন্তকারীদের ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি উভয় অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত চলা সংঘাততের সময় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, উভয় পক্ষই নির্যাতনসহ যুদ্ধাপরাধ করেছে; যার মধ্যে হত্যা, বা ইচ্ছাকৃত হত্যা; ব্যক্তিগত মর্যাদার উপর আক্রোশ; এবং অমানবিক বা নিষ্ঠুর আচরণ অন্তর্ভূক্ত।
ইসরায়েল যুদ্ধের একটি পদ্ধতি হিসাবে দুর্ভিক্ষকে ব্যবহার করেছে, যা যুদ্ধাপরাধ। ইসরায়েল কেবল গাজাবাসীদের খাদ্য, পানি, আশ্রয় এবং ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়নি বরং ‘সেই প্রয়োজনীয়তা পূরণে যারা সরবরাহ করতে চেয়েছে তাদের বাধা দেওয়ার জন্য কাজ করেছে।’
এদিকে তদন্তকারীরা আগামী সপ্তাহে ওই প্রতিবেদন জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে জমা দেবে এবং সেখানেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার, মেডিকেল রিপোর্টস এবং বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
ইসরায়েল এ তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করেনি। এই কমিশন ইসরায়েল-বিরোধী পক্ষপাতদুষ্ট বলে ইসরায়েল অভিযোগ করেছে। সিওআই বলছে, ইসরায়েল তাদের কাজে বাধা দিয়েছে। ইসরায়েল এবং অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলগুলোতে তারা জাতিসংঘ তদন্তকারীদের ঢুকতে দেয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের জনবসতি এলাকা লক্ষ্য করে ইসরায়েল সর্বোচ্চ ক্ষতির জন্য ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। সেখানে বেসামরিক সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় ১০ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি বা কোনো ধরনের নিয়মকানুন মানা হয়নি। শুধু তাই না এর বাইরেও ইসরায়েল গাজায় মানুষজনকে অনাহারে রেখে আরেকটি যুদ্ধাপরাধ করেছে। তারা কেবল গাজাবাসীদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার, পানি, আশ্রয়, চিকিৎসা দিতেই ব্যর্থ হয়নি বরং এইসব প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহও আটকে দিয়েছে। যেটা মানবাতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধ।
অন্যদিকে হামাসের অপরাধের বিষয়ে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের হামলার পর বন্দিদের নির্যাতন করার অভিযোগ করা হয়েছে। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি নারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক যৌন সহিংসতা এবং পাবলিক শেল্টারে গণহত্যার নমুনার প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারীরা।
এমনকি বন্দি ইসরায়েলি নারীদের শারীরিক, মানসিক এবং যৌন সহিংসতার মতো নির্যাতন চালানো হয়েছে। অপহরণকারী বন্দিদের অপমানজনক আচরণ সহ প্যারেড করানো হয়েছে। অন্যদিকে নারী বন্দিদের যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। একই অভিযোগ ইসরায়েলি বাহিনীর প্রতিও রয়েছে।
এদিকে গাজা থেকে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার গাজার বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, হাসপাতাল, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি, অর্থনীতি, সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। এখনও প্রতিদিন বোমা হামলা হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৬৪ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ৮ মাসের এই ইসরায়েলি অভিযানে আহতের সংখ্যা সাড়ে ৮৪ হাজার।
বিষয়: #ইসরায়েল #হামাস