শনিবার ● ১৫ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ » গল্প : #কাউন্টার
গল্প : #কাউন্টার
::মো. ইয়াছিন ::
আমার পাশে এমন একটি মেয়ে বসে আছে যে কিনা আগামী আটচল্লিশ ঘন্টা পর মা*রা যাবে। মেয়েটাকে কিছু বলতে যাব তার আগে সে নিজেই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘আপনার কি ক’মনসে’ন্স বলতে কিছু নেই? সুযোগ পেয়েই অচেনা একটি মে’য়ের ছবি তুলতে শুরু করে দিয়েছেন কেন?’
আমার হাতে স্মা’র্টফোনের মতো দেখতে চ্যা’প্টাকৃতির একটা মেশিন। মেশিনটার নাম ‘ডে’থ ডে কা’উন্টার’ যার সাহায্যে মানুষের মৃ*ত্যুর খবর আগে থেকেই জানতে পারা যায়। কিন্তু শর্ত হচ্ছে বাহাত্তর ঘন্টার বেশি বাঁ’চবে এমন মানুষের আ’য়ু সম্পর্কে এই মেশিন কোনোরূপ ধারণা দেয় না। কেবলমাত্র বাহাত্তর ঘন্টার কম সময় বাঁ’চবে এমন মানুষের আ’য়ুষ্কাল বলে দিতে পারে। এই যেমন এখন এই মেশিনটা আমার পাশে বসে থাকা মেয়েটার দিকে তাক করতেই ডিজিটাল ঘড়ির মতো টাইম দেখাচ্ছে আটচল্লিশ ঘন্টা একত্রিশ মিনিট। অর্থাৎ আটচল্লিশ ঘন্টা একত্রিশ মিনিট পর মা*রা যাবে সে। কিন্তু মেয়েটার বয়স খুবই অল্প। দেখে তো অসুস্থ বলেও মনে হচ্ছে না। তা হলে সে ম*রবেই বা কেন? মৃ*ত্যুটা কি তবে অ’স্বাভাবিক হবে? মানে কোনো দু*র্ঘটনা বা খু*ন? যদি তা-ই হয়, তবে আমি চাইলেই মেয়েটাকে বাঁ*চাতে পারি। শুধু কায়দা করে আগামী আটচল্লিশ ঘন্টা তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। তার মৃ*ত্যুর সময় ঘনিয়ে আসার আগ মুহূ্র্তে তাকে সতর্ক করে দিলেই প্রাণে বেঁ*চে যেতে পারে সে।
পাশের মেয়েটা কাঁধের ব্যাগ থেকে কাগজ কলম বের করে কী যেন লিখছিল। লেখা শেষ করে কাগজের টুকরোটা আমার হাতে তুলে দিলো। সেখানে লেখা, ‘ই’উ আর ইন ডে’নজার। প্রেস রেড বাটন ফর ইমার্জেন্সি।’
টিভির রিমোটের মতো কী একটা এগিয়ে দিলো মেয়েটা। সেখানে দু’টো বাটন। একটি লাল অপরটি সবুজ। আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এসব কী? আমি বি’পদে আছি মানে?’
মেয়েটা এবারও কাগজে লিখে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। সেখানে লেখা, ‘কথা বলবেন না। আপনাকে খু*ন করার জন্য ইতোমধ্যে একদল প্রফেশনাল কি*লার মাঠে নেমেছে। আততায়ী এই বাসেও থাকতে পারে। সুতরাং সাব’ধান।’
এবার কৌতূহল জাগল মেয়েটার প্রতি। সে ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে। আমার দিকে তাকাচ্ছে না। আমি কাগজ কলম কে’ড়ে নিয়ে লিখে দিলাম, ‘কিন্তু আপনি ওসব জানলেন কীভাবে?’
মেয়েটা লিখল, ‘আমি সব জানি। এ-ও জানি যে, এখন আপনার সাথে একটি অতি মূল্যবান জিনিস আছে। যা আপনি বি’ক্রি করতে চট্টগ্রাম যাচ্ছেন।’
‘আপনাকে কে বলল?’
‘বলতে হবে কেন? আমি এবং আমার টিম গত তিন মাস ধরে আপনাকে ফলো করছি। আপনি হয়তো জানেন না, এর আগে আরো দু’বার আপনার উপর অ্যাটাক হয়েছিল। কি’লার আপনার কাছে আসার আগেই আমরা কাকে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আজকের ব্যাপারটা ভিন্ন। আজ কি’লার একজন নয়। কতজন তা-ও ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে নামার পর বাসস্টপে একটি কালো জিপ দেখতে পাবেন। ভালো চান তো ভূমিকা না করে সোজা গাড়িতে উঠে বসবেন।’
‘কিন্তু আমি আপনাকে বিশ্বাস করব কেন?’
‘কারণ আপনার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। আমাকে বিশ্বাস না করলে আপনি নিজেই নিজের মৃ*ত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন।’
‘আপনি এতটা নিশ্চিত হয়ে কীভাবে বলতে পারছেন কি*লাররা আমাকে মা*রার জন্যই মাঠে নেমেছে?’
‘কারণ আপনি এখন গা’ন পয়েন্টে আছেন।’
‘মানে!’
‘মানে খুব সোজা। চেয়ে দেখুন, আপনার বু*কের উপর একটি লাল বিন্দু দেখা যাচ্ছে। ওটা স্না’ইপার রা*ইফেলের… আশা করি বাকিটা বলতে হবে না।’
বু’কের দিকে চেয়ে দেখি সত্যি সত্যি কোথা থেকে যেন একবি’ন্দু লা’ল আলো এসে আমার বু’কের উপর পড়েছে। আমি একটু ন’ড়লে বি’ন্দুটাও নড়ছে। আতঙ্কে বু’ক শুকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ঢোক গিলে লিখলাম, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? চলন্ত বাসে কেউ কীভাবে এতটা নিখুঁত টা*র্গেট করতে পারে?’
মেয়েটা তাচ্ছিল্য করে হেসে লিখল, ‘ম’ডার্ণ টে’কনলজির সাথে আপনি ভালোভাবেই পরিচিত মিস্টার মিরাজ। এসব আপনাকে নতুন করে শেখানোর প্রয়োজনবোধ করছি না।’
‘এখন আমি কী করতে পারি?’
‘আমার কথামতো চলুন। একটুও নার্ভাস হবেন না। বাস থামার সাথে সাথে কা’লো জিপে গিয়ে বসবেন। বাকিটা পরে দেখা যাবে।’
‘কিন্তু তার আগেই যদি গুলি চালিয়ে দেয়?’
‘তাহলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
চট্টগ্রাম চলে এসেছি। মেয়েটা আমার আগে গিয়ে ভী’ড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে। বাস থেকে নেমে বড়োসড়ো ধা’ক্কা খেলাম। একটু দূরে একই রকমের দেখতে দু’টো কা’লো জিপ রাখা। উভয় গাড়ির ড্রাইভার মুচকি হেসে আমাকে ওয়েলকাম জানাচ্ছে। বুঝতে পারছি, বড়োসড়ো বি’পদের মুখে পড়তে চলেছি আমি।
এক পা পেছাতে যাব, ঠিক তখন আমার হাতের ডে’থ ডে কা’উন্টার মেশিনটা সিগন্যাল দিয়ে উঠল। তার মানে আমার হাতে বেশি স’ময় নেই!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত