শুক্রবার ● ২১ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ » নার্সারী শিল্পে জেলার শীর্ষে - নার্সারীতে জোড় কলম তৈরীতে ব্যস্ত শ্রমিক
নার্সারী শিল্পে জেলার শীর্ষে - নার্সারীতে জোড় কলম তৈরীতে ব্যস্ত শ্রমিক
মহানন্দ অধিকারী মিন্টু::
বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল বিরাজ করছে। গ্রীষ্মে সূর্যের প্রখর তাপদাহে প্রকৃতি এক ভয়াল মূর্তি ধারণ করেছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকছে প্রায় প্রতিদিনই। সাধারণত জুন, জুলাই ও আগস্ট হচ্ছে গাছের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এ সময় আলো-বাতাস, অনুক‚ল তাপমাত্রা, বৃষ্টি পর্যাপ্ত থাকে বলে চারাও সুন্দরভাবে প্রকৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠে। এ কারনে নার্সারী ও চারা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী-শ্রমীকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নার্সারী শিল্পে খুলনা জেলার শীর্ষে পাইকগাছা। এ উপজেলার নার্সারীতে চারা উৎপাদনে শ্রমিকরা জোড় কলম তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে। তীব্র গরম ও রোদের মধ্যে শ্রমিকরা মাথার উপর ছাতা দিয়ে কাজ করছে। মে থেকে জুলাই পর্যন্ত কলম করার উপযুক্ত সময়। কারণ এ সময় বাতাসের আদ্রতা ও গাছের কোষের কার্যকারিতা বেশি থাকে। দ্রæত জোড়া লাগে এবং সফলতার হারও বেশি থাকে। মাতৃগুণ বজায় রাখা, দ্রæত ফলন, রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা বাড়ানো এবং অধিক ফলন পেতে অঙ্গজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। গাছের চারা তৈরীর পদ্ধতির নাম কলম। এ কলম তৈরীতে রয়েছে নানা নাম ও পদ্ধতি। যেমন, গুটি কলম, শাখা কলম (কাটিং), চোখ কলম বা বাডিং। তবে কলম তৈরীতে গ্রাফটিং বা জোড় কলম, কাটিং বা উপজোড় কলম উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি। এ কলম তৈরী করতে গ্রাফটিং চাকু, বে¬ড, সিকাচার, পলিথিন ক্যাপ, পলিথিন ফিতা, সুতলী, গাছের ডগা বা সায়ন এবং কলম তৈরীতে দক্ষ কারিগর বা মালির প্রয়োজন হয়। উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে ছোট-বড় প্রায় ৫ শতাধিত নার্সারী গড়ে উঠেছে। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যা রয়েছে গদাইপুর গ্রামে। মৌসুম শুরুতে চারা তৈরীর জন্য নার্সারী মালিক ও কর্মচারীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে। জোড় কলম তৈরী করতে গাছের ডালের সঙ্গে গাছের ডাল জোড়া লাগিয়ে জোড় কলম তৈরী করা হয়। তেজপাতার সঙ্গে কাবাবচিনি, আম সঙ্গে আম, ছবেদার সঙ্গে খিরখাজুর, আতা সঙ্গে দেশী আতা জোড় দিয়ে জোড় কলম তৈরী করা হয়। কাঁটা জাতীয় কুল সহ বিভিন্ন ফলের চারা চোখ বসিয়ে বাডিং কলম তৈরী করা হয় এবং ফুল জাতীয় গাছের ডাল কেঁটে সরাসরি মাটিতে পুতে কমল তৈরী করা হয়। জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন নার্সারীতে চলতি মৌসুমে আম, পেয়ারা, জামসহ বিভিন্ন ফলের ১০ লাখ ও কুলের প্রায় ১৫ লাখ কলম তৈরী হচ্ছে। গদাইপুর গ্রামের নার্সারী মালিক সামসুর রহমান জানান, এ বছরও তিনি নার্সারীতে ৭০ হাজার চারা উৎপাদনে লক্ষ্য। হিতামপুর গ্রামের রজনীগন্ধা নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল জানান, তার নার্সারীতে প্রায় ৫০ হাজার কলম তৈরীর কাজ চলছে। গদাইপুর গ্রামের অবস্থিত সততা নার্সারীর মালিক অশোক কুমার পাল জানান, তার নার্সারীতে বিভিন্ন জাতের কুলের প্রায় এক লাখ কলম তৈরী করছেন। শ্রমিকের অভাবে কলম তৈরী করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কলম তৈরীর সময় পার হয়ে গেলে এ মৌসুমের আর কলম তৈরী করা যাবে না। সে কারনে কলম তৈরীতে অধিক পয়সা খরচ হচ্ছে। নার্সারীতে বিভিন্ন জাতের হাইব্রীড জাত কাটিমন আম, মাল্টা, পিয়ারা, সফেদা, জামরুল। তাছাড়া এ সব কলমের মধ্যে থাই পেয়ারা, জামরুল, মালাটা, কদবেল, কমলালেবু, আমসহ বিভিন্ন জাতের কলম রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা নার্সারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন জানান, বিগত বছর আশানারূপ চারা বিক্রি হয়নি, এতে নার্সারী মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সে কারণে এবছর কলম তৈরি কম হচ্ছে। তাছাড়া কলম তৈরীর শ্রমিক ঠিকমত না পাওয়ায় উচ্চ মূল্যে শ্রমিক নিয়ে কলম তৈরী করতে হচ্ছে। কারণ সময় চলে গেলে এ মৌসুমে আর জোড় কলম তৈরী করা যাবে না। গদাইপুর এলাকার তৈরী কলম দেশের চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। তবে ঠিকমত বাজার দর না পাওয়ায় নার্সারী মালিকরা আশানারূপ ব্যবসা করতে পারছে না। নার্সারী ব্যবসায়ীরা জানান, চারা উৎপাদনে সরকারি ভাবে ঋণের ব্যবস্থা করলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নার্সারী শিল্প আরও গুরত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারবে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ জানান, পাইকগাছার নার্সারী শিল্প খুলনা জেলা শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। নার্সারী ব্যবসায়ীরা চারা বিক্রি করার আশানারূপ বাজার ধরতে না পারায় তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নার্সারী ব্যবসা করে মালিক, ব্যবসায়ীরা সাবলম্বী হচ্ছে। তেমনি নার্সারীতে নিয়জিত কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। নার্সারীতে উৎপাদিত চারা সবুজ বননায়নে উল্লেখ যোগ্য ভ‚মিকা রেখে পরিবেশের ভারশাম্য রক্ষা করছে। তেমনি ভাবে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
বিষয়: #নার্সারী #শিল্প