বৃহস্পতিবার ● ২৭ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ » আগামী ৪ জুলাই’র সাধারণ নির্বাচন প্র্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সুখবর বয়ে আনবে
আগামী ৪ জুলাই’র সাধারণ নির্বাচন প্র্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য সুখবর বয়ে আনবে
দেওয়ান ফয়সাল:
আগামী ৪ জুলাই ২০২৪ বৃটেনের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও এ নির্বাচন আগামী নভেম্বর অথবা ডিসেম্বর মাসে হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু গত মাসে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি লেবার পার্টির কাছে বিপুল ভোটে সূচনীয় ভাবে হেরে যাওয়ার কারণে হঠ্রাৎ করেই প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক তড়িঘড়ি করে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ৪ জুলাই ’২০২৪ নির্ধারণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের ধারণা, বর্তমানে প্যালেস্টাইন-গাজা নিয়ে বিভিন্ন ইংলিশ মিডিয়ায় ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যে ভাবে সংবাদ এবং বিভিন্ন ধরণের আর্টিকেল প্রকাশিত হচ্ছে সারা বিশ্বজুড়ে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আবারও নির্বাচনে জয়লাভ করবেন! এছাড়াও সারা বিশ্বের মুসলমান জনগোষ্ঠী সহ বিভিন্ন অমুসলিম জনগণও যে ভাবে ইসরায়েলি সৈন্যরা ফিলিস্তিন-গাজার নিরীহ শিশু থেকে শুরু করে হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ এদেশের মুসলমান এবং অন্যান্য কমিউনিটির মানুষ যারা ফিলিস্তিন-গাজার মুসলমানদের পক্ষে, তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে, সেই সুযোগে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবেন! তাই তাড়াহুড়ো করেই এই নির্বাচনের আয়োজন।
উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ২০২২ সাল খেকে প্রথম এশিয়ান প্রাইম মিনিষ্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং তার কেবিনেটে সিনিয়র মিনিষ্টারিয়াল পদে বেশ কয়েকজন এশিয়ানও আছেন। বর্তমানে টোরি সরকারের রাজত্বকালে দেশে মানুষের নিত্যব্যবহার্য্য জিনিষপত্রের দাম যে ভাবে বেড়েছে, অথচ চাকুরীজীবিদের বেতন একই রয়েছে। তাতে দেশের মানুষের মানুষ এখন কোন রকামে বেঁচে আছে। এছাড়াও ঘরভাড়া, কাউন্সিল ট্যাক্স, গ্যাস বিল, পানির বিল ইলেকট্রিসিটি বিল ইত্যাদি এমন ভাবে বেড়েছে যা মানুষের পক্ষে এসব ব্যয় ভার বহন খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই এ দেশের মানুষ এখন সরকারের একটা পরিবর্তন চায়। লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচনী বিভিন্ন জরীপে দেখা যাচ্ছে, করজারভেটিভ পার্টি থেকে লেবার পার্টি অনেক এগিয়ে। দেশের জনগণও জরীপের ফলাফল দেখে আনন্দিত। তাদের মতে এবার সরকারে একটা পরিবর্তন আসবে।
এদিকে লেবার পাট্র্রি নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছেন, এবারের নির্বাচনে শুধু জয়-ই নয়, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) নিয়েই সরকার গঠন করবো।
বর্তমানে এদেশের মূলধারার রাজনীতিতে লেবার এবং কনজারভেটিভ পার্টিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন আমাদের অনেক বাংলাদেশী যুবক-যুবতীরা, যারা প্রত্যেকেই তাদের দলের মধ্যে একটা বিশিষ্ট স্থান করে নিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন এলাকা থেকে লেবার পাাট্র্ িএবং কনজানভেটিভ পার্টি থেকে বেশ কয়েকজন নমিনিশেন পেয়েছেন। তবে দু:খজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশীদের সংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশীদের যে ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার জন্য লেবার পার্টি থেকে নমিনেশন দেয়া উচিৎ ছিলো তা তারা দেননি। ভবিষতে বাংলাদেশী রাজনীতিবিদদের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে হবে এবং নিজেদেরকে দলের সাথে ভাল যোগাযোগ রক্ষা করে এবং কাজের মাধ্যমে দক্ষতা দেখিয়ে দলের মধ্যে ভাল স্থান করে নিতে হবে।
নির্বাচন উপলক্ষে পূর্ব লন্ডনের বাঙালী পাড়াগুলোতে নির্বাচনের প্রচারণা জোরেশোরেই শুরু হয়েছে। লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে যে, ফিলিস্তিন -গাজা ইস্যু নিয়ে কথা বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু সংখ্যক প্রার্থী তাদের পক্ষে ভোট টানার চেষ্টা করছেন। এ প্রচেষ্টায় তারা ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ঘরে ফিরবেন তা সহজেই অনুমেয়। কেননা, ফিলিস্তিন-গাজা ইস্যু শুধু মাত্র বৃটেনের মুসলমানদের জন্য নয়, এই ইস্যুটি সারা মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলিম জনগোষ্ঠী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আদায়য়ের জন্য বিশ্বের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে, একমাত্র ইরান এবং আরও ছোট ছোট কয়েকটি মুসলিম দেশ ছাড়া এ ব্যাপারে কেউ-ই মুখ খুলছেন না। মনে রাখতে হবে ইসরায়েলের পেছনে রয়েছে,আমেরিকা, যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য নন-মুসলিম সুপার পাওয়ারগুলো। তাদের সাথে রাইফেল আর রকেট হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করা যাবে না, বরং তার পরিবর্তে হত্যার শিকার হবে শিশু সহ লাখ লাখ সাধারণ মানুষ। ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করতে হলে সারা বিশ্বের মুসলমান দেশগুলোকে এক বাক্যে বলতে হবে ”আমরা ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই”। কিন্তু কোন মুসলিম দেশ আমেরিকা, বৃটেন সহ অন্যান্য নন-মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলবে? প্রত্যেকটি মুসলমান দেশই বিভিন্ন ভাবে তাদের দেশকে বিশ্বের মধ্যে উন্নত দেশ বানাতে গিয়ে এদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। সৌদি আরব, আরব এমিরেটস সহ সকল মুসলমান দেশগুলো তাদের কব্জির ভেতরে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার শক্তি মুসলিম দেশগুলোর নেই! যতোদিন পর্য্যন্ত মুসলিম দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ ত্যাগ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে এক সাথে আওয়াজ না তুলবে, ততদিন পর্য্যন্ত তাদের স্বাধীনতার আশা যে তিমিরে ছিলো, সে তিমিরেই থাকবে। শুধু মানুষের মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তারা পাবেনা। ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে আমি জনমত পত্রিকায় সহ ইউকেবিডিটিভি অনলাইন পত্রিকায় লিখেছিলাম যার হেডলাইন ছিল ”মুত্যুই কি ফিলিস্তিনি মানুষের স্বাধীনতা?” এই লেখায় আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর নীরবতা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলাম।
এ ব্যাপারে বিলেতের প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং লেখক ফারুক যোশী ভাইর সম্প্রতি প্রকাশিত ফেসবুকে একটি লেখা পড়লাম। তিনিও সত্যি কথাই লিখেছেন। লেখাটি হুবহু এখানে তুলে ধরলাম। তিনি লিখেছেন, ”বৃটেনের আগামী নির্বাচনে প্যালেষ্টাইন ইস্যু নিয়ে চেচামেচি করে গ্যলওয়ের মত সুযোগ সন্ধানীদের পথ করে দেয়া হবে হয়ত। প্যালেস্টাইন ইস্যু আন্তর্জাতিক এমন কি মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির শিকার। ব্রিটেনের দুই মিলিয়নের অধিক মানুষ, আমরা প্রতিবাদ করতে পারি কিন্তু পাল্টাতে পারবো না কিছুই। বরং উচ্চস্বরে কথা বলতে হবে। আর সে জন্যই অন্তত: লেবার পার্টি কিছুটা হলেও সুর পাল্টিয়েছে। এপোলজিও দিচ্ছে।
গুতরাং আজাইরা মুসলিম ইস্যু নিয়ে মূলধারা থেকে সরে থাকা মানে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। ”
এবার আসা যাক যুক্তরাজ্যের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আমার মূল লেখায়। এবার নির্বাচনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ৬ জন প্রার্থী। তারা সবাই লেবার পার্টির প্রার্থী। তাদের মধ্যে বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ হাউস অব কমন্সে রুশনারা আলী-যিনি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রথম বাঙালী মহিলা এমপি, টিউলিপ সিদ্দিকী, রুপা হক ও আফসানা বেগম। এবার আরও দুই জন প্রার্থী হয়েছেন রুমী চৌধুরী ও রুফিয়া আশরাফ। উল্লেখ্য যে, রুমি চৌধুরী লুটন কাউন্সিল থেকে এবং রুফিয়া আশরাফ সাউথ নর্থাম্পটন আসন থেকে প্রার্থী হয়েছেন এবং তারা দু’জনই প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন।
উল্লেখ্য যে, রুশনারা আলী এমপি ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীণ এন্ড বো কনষ্টিটিউয়েন্সি থেকে প্রথম বারের মতো ব্রিটিশ-বাংলাদেশী এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি এবারের নির্বাচনেও তার এলাকা থেকে নির্বাচন করছেন এবং এই নির্বাচনে তিনি যে জয়লাভ করবেন, তার এলাকাবাসী নিশ্চিত। কেননা, যারা তার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন তারা অন্যান্য ছোট ছোট দলের প্রার্থী। এলাকার জনগণ মনে করেন, অন্যান্য যারা প্রার্থী আছেন তাদের ভোট তাদের দলের হাতে গোনা কিছু সংখ্যক মানুষ দেবেন, আর রুশনারা আলী যেহেতু তার দল লেবার পার্টির প্রার্থী সে সেহেতু তিনি বৃহত্তম দল লেবার পার্টির একচেটিয়া ভোট পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত। এলাকার জনগণের বিশ্বাস, যেহেতু এই নির্বাচনে লেবার পার্টির বিজয় নিশ্চিত সেহেতু রুশনারা আলী বিজয় ছিনিয়ে আনলে, তিনি যে কোন একটি ভালো মন্ত্রীত্বের পদ পাবেন এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত এবং তিনিই হবেন হয়তো প্রথম একজন বাংলাদেশী মন্ত্রী।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আগামী ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে লেবার পার্টি বিজয়ী হলে অন্তত: ২ থেকে ৩ জন বাংলাদেশী মন্ত্রী হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্থান পাবেন।।
ব্রিটেেেনর বিভিন্ন শহর থেকে যারা লেবার পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন, তারা সবাই বিজয়ের মালা গলায় দিয়ে, মুখ উজ্বল করে আমাদের মধ্যে ফিরে আসুন, বাংলাদেশী কমিউনিটি এই শুভক্ষণের আশায় তাকিয়ে আছেন।
বিষয়: #আগামী #জন্য #জুলাই #দেওয়ান #নির্বাচন #প্র্রবাসী #ফয়সাল #বাংলাদেশী #সাধারণ #সুখবর