শুক্রবার ● ২৮ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে প্রাণ গেল সুনামগঞ্জের দুই তরুণের
ইতালি যাওয়ার পথে সাগরে প্রাণ গেল সুনামগঞ্জের দুই তরুণের
বজ্রকণ্ঠ নিউজ ডেস্ক:
ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তাদের। বিপদসংকুল পথ জেনেও সে পথে দিয়েছিলেন পা। শেষ পর্যন্ত বিপদই এসেছে নেমে। ইউরোপের দেশ ইতালি পৌঁছার আগে ভূমধ্যসাগরে মারা গেছেন তারা।
শাহিবুর রহমান ওরফে মান্না (২২)। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার ছোট ছেলের আবদার ও জেদ রক্ষায় সবকিছু খুইয়ে তাকে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। সেখান থেকে ১০ মাস পর সাগরপথে ইতালিতে যাওয়ার নৌকায় (গেম) ওঠার সুযোগ পান তিনি। এর এক দিন আগেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হয় মান্নার। কিন্তু পরের দিনই আসে দুঃসংবাদ। মারা গেছেন মান্না।
শুধু মান্না নন, একই নৌকায় ছিলেন সুনামগঞ্জের আরেক তরুণ রেজাউল ইসলাম (২৪)। তিনিও মারা গেছেন।
কীভাবে, কোথায় তারা মারা গেলেন, এসবের বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। শুধু নৌকায় থাকা সুনামগঞ্জের অন্যরা ফোনে এই দুই তরুণের মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তবে লাশটি যেন শেষবারের মতো পরিবারের সদস্যরা ছুঁয়ে দেখতে পারেন, এই আকুতি তাদের।
মান্নার রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের তলের বন গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াহাব। রেজাউল ইসলামের বাড়ি জেলার ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজার ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সুন্দর আলী।
মান্নার বড় ভাই শাহিবুল ইসলাম জানান, মান্না বিদেশে যাওয়ার জন্য ‘পাগল’ ছিলেন। গ্রামের আরও দু-একজন এভাবে ইতালিতে গেছেন। তাদের মাধ্যমেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উজ্জ্বল আহমদ নামের এক দালালের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এরপর সাড়ে আট লাখ টাকায় রফা হয়। এই টাকা দিয়ে ১০ মাস আগে মান্না লিবিয়ায় যান। এরপর শুরু হয় ‘গেমের’ (সাগরপথে চূড়ান্ত যাত্রা) জন্য অপেক্ষা। বাড়ি থেকে মাসে মাসে খরচের টাকা পাঠানো হতো। বাবা কৃষিকাজ করেন। এক ভাই চালান অটোরিকশা। তবুও ছোট ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে খেয়ে না খেয়ে টাকা পাঠাতেন তারা। একপর্যায়ে দালাল জানান, আরও এক লাখ টাকা না দিলে ‘গেমে’ তোলা হবে না। এরপর সুদে টাকা এনে পাঠান তারা। গত শুক্রবার লিবিয়া থেকে ‘গেমে’ ওঠানো হয় মান্নাকে।
শাহিবুল বলেন, ‘খবরটা শোনার পর থাকি বাড়িত আম্মা-আব্বা পাগল অইগিছইন। আমরা তো এমনি শেষ। এখন ভাইটারেও হারাইলাম। আম্মায় ভাইয়ের মুখটা শেষবার দেখতা ছাইন।’
শিমুলবাক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘শাহিবুলের পরিবার পক্ষ থেকে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে লাশ দেশে আনা যায়, সেটির উদ্যোগ নেব।’
রেজাউল ইসলামের বাবাও কৃষক। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্য রেজাউল ইসলাম সবার ছোট। বড় দুই ভাই আছেন ওমানে। এক বছর আগে রেজাউল প্রথমে দুবাই, পরে মিসর হয়ে যান লিবিয়ায়। ২১ জুন রেজাউল ফোনে জানান, তিনি লিবিয়া থেকে ইতালিতে যাওয়ার ‘গেমে’ উঠছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ওমান থেকে তার বড় ভাই নজরুল ইসলাম ফোনে রেজাউলের মৃত্যুর খবরটি জানান।
দেশে থাকা ফুফাতো ভাই ইমরান আহমদ নজরুলের বরাত দিয়ে জানান, ওই ‘গেমে’ সুনামগঞ্জের আরও লোক ছিলেন। তারাই ইতালিতে পৌঁছার পর হোয়াটসঅ্যাপে নজরুল ইসলামকে জানান, ইতালিতে পৌঁছেছেন। তবে পথে অসুস্থ হয়ে রেজাউল ও মান্না মারা গেছেন। ইতালিতে পৌঁছার পর তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। রেজাউল ও মান্নার লাশ কোথায় রাখা হয়েছে, তারা সেটি জানেন না।
ইমরান আহমদ জানান, ইতালিতে তাদের আত্মীয়স্বজন আছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজ নিচ্ছেন। রেজাউলের বাবা বৃদ্ধ। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। তিনিই ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ছাতকের ইউএনও গোলাম মুস্তাফা বলেন, রেজাউল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদনটি পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন।
বিষয়: #ইতালি #ডেস্ক #তরুণ #দুই #নিউজ #প্রাণ #বজ্রকণ্ঠ #যাওয়া #সাগর #সুনামগঞ্জ