বুধবার ● ১০ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » ছাতকে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
ছাতকে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
আনোয়ার হোসেন রনি :
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেলের বিরুদ্ধে নৌপথে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানায় দায়ের করা হয়েছে। এ অভিযোগ দায়ের পর থেকে চেযারম্যান আতœগোপনে রয়েছেন। পুলিশ হন্যে হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে খোজছে। গত ৮ জুলাই বিকালে ইসলামপুর ইউপির নোয়াগও গ্রামের বাবুল আহমদ বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেলকে প্রধান আসামী করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ্য করে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে থানায় হামলা ভাংচুর ও নাশকতার মামলায় আসামী হিসাবে ২৩সালে ২৭ নভেম্বর তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে। সে উপজেলার ইসলামপুর ইউপির মধ্য গনেশপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাল্কহেড গত ২৯ জুন প্রকাশ্যে চেলা নদী ফুলফুলি বিলে চলমান পাথরবাহী এম,বি শুভ সম্রাট বাল্কহেড চালক আব্দুল গফ্ফারকে আটকিয়ে এক লাখ টাকার চাদা দাবি করে ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল। তার কথামতো চাদা না দিলে নির্যাতন এমনকি টাকার বদলে মোবাইল ফোনসহ নৌকায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র মারপিট কওে ছিনিয়ে নেওয়ার এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন উপজেলার ইসলামপুর ইউপির নোয়াগাও গ্রামে মুত ফরিদ আহমদের ছেলে বাবুল আহমদ। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাল্কহেড নিযাতিত নৌ শ্রমিক আব্দুল গফ্ফার বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রধান তিনজন চাদাবাজদের নামে নৌপুলিশ ও থানার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ গত ২৯জুন দায়ের করেন। এ অভিযোগের ঘটনায় থানার ওসি শাহ আলম নেতৃত্বে নদী গুলোতে অভিযান চালিয়ে ইঞ্জিল চালিত নৌকা দিয়ে চাদা আদায়কারী চাদাবাজরা নদী পাড়ে নৌকা
রেখে পালিয়ে যায়। গত ৩ জুলাই নৌকাটি জব্ধ করেছে থানা পুলিশ। এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে গত ৭ জুলাই বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সুহেল বলেন, নৌপথে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে পরিবেশ নষ্ট,কোটি কোটি টাকা চোরাচালানী ব্যবসা চলছে। তার লিখিত বক্তব্যে বলেন নৌ পুলিশের বিরুদ্ধে চোরাচালান,নৌপথে চাদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ও দাবী তুলে ধরেন। গত ৭ জুলাই রাতে প্রতিবাদকারী বাবুল আহমদের বড় ভাই পৌর শহরের হাজী বুলবুল আহমদের ব্যবসায়ি প্রতিষ্টানে চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেলের নেতৃত্বে ২০ ২৫ জন লোকজন নিয়ে অতকিত হামলা ভাংচুর ও ক্যাশ ভেঙ্গে ২লাখ ৮৯হাজার ৯শত ৫৪ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যবসায়ি হাজী বুলবুল আহমদ ও ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেলের মধ্েয ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। এ খবর পেয়ে থানা ওসি শাহ আলমের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়েছেন।
পুলিশ ও নৌশ্রমিকরা জানায়,ইউপি চেয়ারম্যানের নিদেশে সুরমা, চেলা,সোনা,রাইরং ইছামতি,নোয়াকোট,পিয়াইন নদীর বালু মহাল থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে নৌকা, ট্রলার, কার্গো, বাল্কহেড নিয়ে আসা নৌ শ্রমিকদের। শুধু তাই নয়, চাঁদা না দিলে নির্যাতন এমনকি টাকার বদলে মোবাইল ফোনসহ নৌকায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র হাতিয়ে নেন। নৌ শ্রমিকদের অভিযোগ,গত দুই বছর ধরে কোম্পানীগঞ্জ,ছাতক দোয়ারাবাজার সীমান্তবতী সুরমা ও চেলা বালু মহালে এলাকার পিয়াইন,ইছামতি,ধলাই,নোয়াকোটসহ ১০টি জায়গা থেকে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুফি অলম সোহেলের নিদেশে পরিষদের নামে প্যাড ও নামে বেনামে রঙ্গিল কাগজ ছাপিয়ে রশিদ তৈরি করে। এসব রশিদ দিয়ে নৌপথে থেকে প্রতিদিন চাদা আদায় করছেন। এসব নদীতে প্রতিদিন দুই পাড়ে শত শত থাকা ছোট-বড় নৌকা, কার্গো, ট্রলার, বাল্কহেড থেকে চেয়ারম্যানের নিদেশে ইসলামপুর ইউপির একই গ্রামের লিলু মিয়ার ছেলে রুহেল মিয়া,মনজুরুল ইসলাম,কুচবাড়ি গ্রামে আবিদুল রহমান ছড়ার পাড় গ্রামের মৃত্যু জালাল উদ্দীনের ছেলে ফয়েজ মিয়া ও মৃত্যু তেরা মিয়ার ছেলে কামিল মিয়াসহ ১৫ -২০ জনের একটি সিন্ডিকেট চত্রেæর নেতৃত্বে নৌপথে চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করছেন তাদের চড়-থাপ্পড় মেরে লাঞ্ছিত করা হয়। এদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেন। মন্জুল ইসলাম আবিদুল রহমান সহ ১০ জন যুবক নৌপথে সুরমা চেলা ও পিয়াইন নদী তিন পয়েন্টে এবং নদীর পাড়ে থাকা ইঞ্জিন চালিত নৌকা, ট্রলার, কার্গো ও বাল্কহেডে গিয়ে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছেন। নৌ শ্রমিকরা প্রাণের ভয়ে তাদের কথামতো এক হাজার টাকা দিলেও তারা ইসলামপুর ইউনিয়নের রসিদে ৫০০ টাকা লিখে দিচ্ছেন আদায়কারীরা। শুধু তাই নয়, নীল রঙের ওই রসিদে ইসলাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সিল নেই। কয়েকজন নৌশ্রমিক অভিযোগ করে চাঁদাবাজদের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ।এলাকার যুবক ছেলেদের দিয়ে চাঁদাবাজি করানো হচ্ছে। চাঁদা না দিলে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে।’ বাল্কহেড চালক আব্দুল গফ্ফার বলেন, ‘আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসছি। এখানে আসার পর আমার কাছে ইসলামপুর ইউনিয়নের নামে এক লক্ষ টাকা ট্যাক্স দাবি করা হয়। আমি ট্যাক্স দেইনি বলে চাঁদাবাজরা আমাকে বেধড়ক মারধর করেছে। পরে আমার সঙ্গে থাকা শ্রমিকরা চাঁদাবাজদের কথামতো চাঁদা দিয়ে আমাকে ওদের হাত থেকে রক্ষা করে। বাল্কহেড চালক রহিম আলী বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে ঢাকা থেকে বাল্কহেড নিয়ে এসে আমি ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যবসা করছি। সুফি আলম সোহেল চেয়ারম্যান হয়ে নতুন করে ইউনিয়ন ট্যাক্স নামে প্রতিদিন লাখ লাখ আদায় করেছেন। যারা ট্যাক্স দিতে চাননা তাদের ওপর চাঁদাবাজরা অমানবিক নির্যাতন চালান। এক হাজার টাকা করে নেওয়া হলেও রসিদে ৫০০ টাকা লেখা হচ্ছে। এদিকে নদীতে চাঁদা আদায় করছেন ইসলামপুর ইউপির কুচ বাড়ি গ্রামে আবিদুল রহমান নামের একজন যুবক। সে এ প্রতিনিধিকে বলেন, ইসলাম পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কথায় আমরা চাঁদা তুলছি। চাঁদার ভাগ ওপর মহলসহ ১৫ জন ব্যক্তি পায়।এ ঘটনায় গত ৮জুলাই বিকালে ছাতকে একতা বালু উত্তোলন সমিতি অফিস কক্ষে পিয়াইন নদী বালু মহাল ইজারাদার কোম্পানীগঞ্জ চাটিরহর আমবাড়ি শেরপুর গ্রামের হাজী তৈমুছ আলীর ছেলে সুজন মিয়া এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।অনুষ্টিত সংবাদ সম্মেলন সুজন মিয়া বলেন ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল তার কাছে প্রতিমাসে ৩লাখ টাকা চাদা দিতে হবে। তাকে চাদা না দিলে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। এব্যাপারে থানার ওসি শাহ আলম জানান, ইউপি চেয়াম্যানের আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন ব্যবসায়ি প্রতিষ্টানে অতকিত হামলা ভাংচুর ক্যাশের টাকা ছিনতাইসহ ও অভিযোগ প্রাপ্তির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। প্রধান আসামী করে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিষয়: #অভিযোগ #ইউপি #চাঁদাবাজি #চেয়ারম্যান #ছাতক #বিরুদ্ধ