সোমবার ● ২৯ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশ্ব » ব্যাপক বন্যায় উত্তর কোরিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি
ব্যাপক বন্যায় উত্তর কোরিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি
ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ব্যাপক বন্যার কবলে পড়েছে উত্তর কোরিয়া। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। দেশটির চীন সীমান্ত ঘেঁষা বন্যা কবলিত এলাকা থেকে প্রায় ৫ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ অবস্থায় দুর্যোগ সামাল দিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।
২৯ জুলাই, সোমবার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ জানিয়েছে, নেতা কিম জং উনের তত্ত্বাবধানে দেশটির উত্তর পিয়ংগান প্রদেশে জরুরি অভিযান শুরু করে এসব মানুষকে উদ্ধার করা হয়।
কিম প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে দেশটির প্রস্তুতি জোরদারের আদেশ সত্ত্বেও সাম্প্রতিক প্রবল বৃষ্টিপাতের প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থতার জন্য কর্মকর্তাদের তিরস্কার করেছেন। গত সপ্তাহেই নর্থ কোরিয়া কৃষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব প্রশমিত করার কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য সংকট মোকাবেলা সভা পরিচালনা করে।
উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপত্র রোদং সিনমুনএক প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির সিনুইজু শহর এবং উইজু জেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৪ হাজার ২শ’রও বেশি মানুষ, ভেসে গেছে হাজার হাজার একর জমির ফসল।
সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ও বিমানে করে উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে। সেনাবাহিনীর ১০টিরও বেশি হেলিকপ্টার এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে বন্যার ছবিও প্রকাশ করেছে রোদং সিনমুন। সেসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বন্যার পানি ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছে গড়ির বহর। সেই বহরে সবার আগের কালো রঙের একটি লেক্সাস গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে মুখ বের করে বন্যা দেখছেন কিম জং উন। এছাড়া হেলিকপ্টারের ওপর থেকে তোলা ছবিতে বন্যায় ডুবে যাওয়া জনপদের ছবিও ছেপেছে উত্তর কোরিয়ার এই সরকারি সংবাদপত্র।
সাউথ কোরিয়ার আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, নর্থ কোরিয়া ২৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড গড়েছে। জুলাই মাসে কায়েসোং শহরে একদিন নজিরবিহীন ৪৬৩ মিমি বৃষ্টি হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, বন্যা কবলিত অঞ্চলে আটকে পড়া হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সামরিক হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ হাজার ২০০ বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সংস্থঅ এস. রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গর্ডন ক্যাং বিবিসিকে বলেছেন, বন্যা উত্তর কোরিয়ায় কোনো বিরল প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, তবে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে কিম জং উন সরেজমিনে গিয়েছেন— এই ব্যাপারটি বেশ বিরল। কারণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই দেশটির সর্বোচ্চ নেতা সাধারণত প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি বিরূপ মন্তব্যের জন্যেই সংবাদের শিরোনাম হন। এর বাইরে অন্য কোনো ইস্যু বা কারণে তাকে সংবাদ শিরোনামে তেমন দেখা যায় না।
বিবিসিকে গর্ডন ক্যাং বলেন, আমার ধারণা, বন্যার পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করছেন— এমন ছবি প্রকাশের মাধ্যমে কিম জং উন আসলে দেশবাসীকে বার্তা দিতে চাইছেন যে, বন্যার্ত মানুষকে সহায়তা প্রদানের মতো সক্ষমতা তার রাষ্ট্র রাখে।
প্রসঙ্গত, উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। যদিও বাইরের জগতে দেশের প্রায় কোনো তথ্যই প্রকাশ করে না কিম জং উনের নেতৃত্বাধীন সরকার। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ২০১৫ সালে প্রকাশিত নথি সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুকে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার জনগণের বাৎসরিক মাথাপিছু আয় মাত্র ১ হাজার ৭০০ ডলার।
সূত্র: বিবিসি
বিষয়: #প্রধানমন্ত্রী