শনিবার ● ১ জুন ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ, ৩১ হাজার কর্মীর স্বপ্নভঙ্গ
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ, ৩১ হাজার কর্মীর স্বপ্নভঙ্গ
বাংলাদেশের জন্য আবারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কর্মীভিসায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার শেষ সময় শুক্রবার (৩১ মে) রাত ১২টায়। এ কারণে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী অপেক্ষা করছেন।
শনিবার (১ জুন) থেকে আর কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে যেতে পারবে না। তবে পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনা করে শ্রমবাজার আবারও খুলে দিতে পারে দেশটি। এখন পর্যন্ত যারা দেশটিতে পৌঁছেছেন তাদের অনেকেই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন। বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ৩১মে, শুক্রবার শেষ মুহূর্তে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য উপচে পড়া ভিড় ছিল ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে। কিন্তু ভিসা পেয়ে, কয়েক লাখ টাকা খরচ করেও মালয়েশিয়া যেতে পারেনি প্রায় ৩১ হাজার বাংলাদেশি। শেষ মুহূর্তে বেশ কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট আয়োজন করেও এ বিশালসংখ্যক ভিসাপ্রাপ্ত কর্মীকে পাঠানো যায়নি। ঋণ করে টাকা দিয়ে নিঃস্ব এসব কর্মী হাহাকার করেছে বিমানবন্দরে। গত দেড় বছরে প্রায় ৫ লাখ কর্মী যাওয়া মালয়েশিয়ার রাস্তা বন্ধ হওয়ায় বড় ধাক্কা খেল বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার।
মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে শুক্রবারের (৩১ মে) পর বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কোনো কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। গত জানুয়ারি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিপরিষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি পুনরায় করার অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, দীর্ঘ চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে নানা প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করা হয়। এরপর মালয়েশিয়া থেকে পাওয়া চাহিদাপত্রের বিপরীতে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। গত মার্চে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আপাতত আর শ্রমিক নেওয়া হবে না। আর অনুমোদন ও ভিসা পাওয়াদের ৩১ মে’র মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে। সর্বশেষ মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ জানায়, ঢাকা থেকে গতকাল (৩১ মে) রাত ১২টার আগে পর্যন্ত ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটের যাত্রীদেরই কর্মী হিসেবে গ্রহণ করা হবে। রাত ১২টার পর ছেড়ে যাওয়া আর কোনো ফ্লাইটকে অনুমোদন দেওয়া হবে না। রাত ১২টা পর্যন্ত মালয়েশিয়া যেতে পেরেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ১০২ জন। সে হিসেবে মালয়েশিয়া যেতে পারেনি ৩০ হাজার ৮৪৪ জন ভিসা ও অনুমোদন পাওয়া বাংলাদেশি কর্মী। গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, শেষ দিনে মালয়েশিয়া যেতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেছে হাজারো শ্রমিক। অনেকেই চার-পাঁচ দিন ধরে বিমানবন্দরে অবস্থান করছে। এজেন্সিগুলো আশ্বাস দিলেও মিলছে না ফ্লাইটের টিকিট।
বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী যায় মালয়েশিয়ায়।
এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, অতিরিক্ত প্রায় ২০টি ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে কর্মীদের বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আনা হচ্ছে। যারা মালয়েশিয়ায় আসার কাগজপত্র পেয়েছেন, তাদের বড় অংশ পৌঁছেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার শামীম আহসান বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি চিরদিনের জন্য বন্ধ হচ্ছে না। নানান কারণে তারা তাদের পলিসিগুলো পুনর্বিবেচনা করছে। আমাদের ধারণা, এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই তারা নতুন করে কর্মী নেবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখ ৯২ হাজার ৫০০ কর্মী মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র নিয়েছেন। এদের বেশিরভাগ এরই মধ্যে পৌঁছে গেছেন।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, শুধু ২০২৩ সালেই সাড়ে তিন লাখের বেশি শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে মালয়েশিয়া।
সম্প্রতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার মোট শ্রমিকের ১৫ শতাংশ অন্যান্য দেশ থেকে আগতদের জন্য নির্ধারিত করে দেশটির সরকার। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের তথ্যমতে, ১৫ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে ২০ লাখ বিদেশি শ্রমিক কাজ করছেন।
বাংলাদেশের অন্যতম আগ্রহের মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০০৯ সালে প্রথম দফায় বন্ধ হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের শেষে চালু হয় শ্রমবাজার। পরে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আবার বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। সেই শ্রমবাজার আবার চালু হয় ২০২২ সালে। এখন আবার কর্মী নেওয়া স্থগিত করল দেশটি। শ্রমবাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়া সরকার নতুন কোটা বরাদ্দ করে বাংলাদেশসহ সব সোর্স কান্ট্রি থেকে আবার কর্মী নেওয়া শুরু করবে ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে।
বিষয়: #মালয়েশিয়া