রবিবার ● ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » সাহিত্য ডাইরি » দাম্পত্যসাথী
দাম্পত্যসাথী
তুমি যাকেই বিয়ে করো না কেন, তার খুঁত থাকবেই। নিখুঁত কোনো মানুষ মানবেতিহাসে জন্মায়নি। দাম্পত্যসাথীর খুঁতের দিকে তাকিয়ে থাকলে, তার যোগ্যতাকে তুমি দেখতে পাবে না কোনোদিনই।
তোমার এই বদভ্যাস থেকে থাকলে, সংসার তোমার জন্য নয়।
০২.
প্রত্যেক মানুষেরই অতীত-গল্প আছে। ভালোমন্দ মিলিয়েই তার অতীতের ইতিহাস। দাম্পত্যসাথীর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে, দাম্পত্যের বর্তমানকে হারিয়ে ফেলবে তুমি।
তোমার এই বদভ্যাস থেকে থাকলে, সংসার তোমার জন্য নয়।
০৩.
প্রত্যেক দাম্পত্যই বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হবে রোজই। দাম্পত্য ফুলবাগানও নয়, যুদ্ধক্ষেত্রও নয়। ল্যভ-ম্যারেজ বা সেটল্ড, যে-প্রক্রিয়াতেই সংসারটি তৈরি হোক না কেন, নির্দিষ্ট কিছু সমস্যা থাকবেই। প্রক্রিয়ার দোষ নয় এটি, দাম্পত্যজীবনই এরকম। এই সমস্যাগুলোকে দু’জনে মিলে সমাধানে এগিয়ে যাওয়াটাই দাম্পত্যপ্রেম। দাম্পত্য-সমস্যায় পরস্পরকে দোষারোপ দাম্পত্যের অপমান।
দাম্পত্য-সমস্যায় সংসারসাথীকে দোষারোপ করার বদভ্যাস থাকলে, সংসার তোমার জন্য নয়।
০৪.
প্রত্যেক দাম্পত্যই আলাদা। নিজের সংসারের সাথে অন্য সংসারের তুলনা কোরো না। কোনো সংসারই ব্যর্থ নয়, প্রত্যেক সংসারই নিজের যোগ্যতার নিরিখে সফল। অন্যের সংসারের জৌলুসকে সুখ ভেবে নিয়ে, নিজের সংসারকে অসুখের আখড়ায় পরিণত কোরো না।
পরিশ্রমহীন এই পরশ্রীকাতরতার বদভ্যাস থেকে থাকলে, সংসার তোমার জন্য নয়।
০৫.
সংসার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ হলো─ তুমি তোমার জীবন থেকে সংসার-বিরুদ্ধ ভাবনা ও অভ্যাসগুলি চিরতরে বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। উল্লিখিত সংসার-বিরুদ্ধ অভ্যাসগুলি─
ক. মূর্খতা,
খ. উচ্ছৃঙ্খলতা,
গ. শৃঙ্খলাহীনতা,
ঘ. পরচর্চা,
ঙ. পরশ্রীকাতরতা,
চ. তৃতীয় পক্ষের কথায় বিশ্বাস,
ছ. আলস্য,
জ. অশ্রদ্ধা,
ঝ. প্রেমহীনতা,
ঞ. ভাষার বাজে ব্যবহার,
ট. বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা,
ঠ. পারস্পরিক আলাপে অনীহা।
উল্লিখিত বদভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করতে না-পারলে, সংসার তোমার জন্য নয়।
০৬.
নিখুঁত দাম্পত্যজীবন বলে কিছু নেই। রেডিমেড সংসার বলে কিছু নেই। শর্টকাট দাম্পত্যসুখ বলে কিছু নেই। সংসার অর্থ─ দু’টি মানুষের একইমাত্রার পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, প্রেম, এবং উভয়ের সর্বোচ্চ শ্রমের সমষ্টি। দাম্পত্যজীবন হলো সেই চারাটি, যাকে নিয়মিত পরিচর্যা করলে একটি মহীরুহে পরিণত হবে একসময়; পরিচর্যা না-করলে, ধুঁকতে-ধুঁকতে, দ্রুতই মরে যাবে।
তুমি যদি পরিচর্যার মানসিকতাহীন একজন খামখেয়ালি ব্যক্তি হয়ে থাকো, সংসার তোমার জন্য নয়।
০৭.
সংসার ও আর্থিক সক্ষমতা পরস্পরের পরিপূরক। সংসার রক্ষা করার জন্য, সংসার শুরু করার আগেই তোমাকে উপার্জনের ব্যবস্থা করতে হবে। উপার্জন ছাড়া সংসার করার ভাবনাটিই তামাশা। এ অপরাধ। আর, উপার্জনের ব্যবস্থা নিশ্চিত থাকলে, তবে, সংসার শুরু করার আগে, কখনোই উদ্বিগ্ন হয়ো না─ এই উপার্জনে সংসার আমি রক্ষা করতে পারবো কিনা! নিজের যোগ্যতার চেয়ে বেশি যোগ্য, নিজের অবস্থানের চেয়ে বেশি উচ্চ অবস্থানের, কারও সাথে দাম্পত্য করতে যেয়ো না; কাছাকাছি সামাজিক অবস্থানের ও মানসিকতার দু’জন মানুষের দাম্পত্যে আর্থিক চাহিদা সমস্যা ঘটায় না। সংসার মানেই আর্থিক বিবেচনা, এবং সংসার মানেই ঝুঁকি নেওয়ার চ্যালেঞ্জ।
এই ঝুঁকি নেওয়ার সাহস না-থাকলে, সংসার তোমার জন্য নয়।
০৮.
প্রেমভালোবাসাহীন সংসার একটি অভ্যাসমাত্র। এই অভ্যাস একসময় পরিণত হয় দাসত্ব ও মালিকানায়। এই পরিস্থিতির নামই─ চুক্তি। এই চুক্তির, বাজারে পরিণত হতে বেশি সময় লাগে না। বাজারেই থাকে গণিকালয়। অর্থাৎ, প্রেমভালোবাসাহীন সংসার চুক্তিভিত্তিক গণিকাবৃত্তি মাত্র। এসব সংসারে, ডিভোর্স না-হওয়া মানে এই নয় যে─ এরা সুখী; কারণ─ ডিভোর্স সবসময় কাগজেকলমে হয় না, ডিভোর্স মূলত আরম্ভ হয় মনে, এবং চিরকাল মনের ভিতরেই এই ডিভোর্স ঘৃণার সাথে রয়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
তুমি যদি প্রেমহীন হয়ে থাকো, সংসার তোমার জন্য নয়।
০৯.
সংসার আরম্ভ করার আগেই, অতীতের তৃতীয় কারও প্রেমকে, বান্ধবকে, হারানো প্রেমস্মৃতিকে, চিরতরে অতীতেই ফেলে আসতে হবে। বর্তমান দাম্পত্যসাথীর সাথে প্রতারণার আরেক নাম─ প্রাক্তন প্রেমসাথীকে মনের ভিতরে জিইয়ে রাখা।
এ বদভ্যাস পরিত্যাগ করতে না-পারলে, সংসার তোমার জন্য নয়।
১০.
সংসার করো। সংসারই পরিপূর্ণতা। কিন্তু, সংসার তখনই কোরো, যখন তুমি সংসার করার যোগ্য হয়ে উঠবে। অন্যথায়, আরেকটি মানুষের সুন্দর জীবনটিকে নষ্ট করে দিয়ো না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
বিষয়: #দাম্পত্যসাথী