বুধবার ● ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছাতকে কাবিখা প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
ছাতকে কাবিখা প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের ছাতকে কাবিখা (চাল) প্রকল্প তালিকা (২য় পর্যায়ে) কাজের ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। দুই রাস্তা নির্মাণের নামে বরাদ্দের সিংহ ভাগ অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে কর্তাদের মেনেজ করেই সমাপ্ত করা হয়েছে বরাদ্দের কাজ। সরজমিন স্পট পরিদর্শন না করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরে বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়েছেন প্রজেক্ট কর্তারা। এতে একদিকে যেমন জনগণ কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তেমনি সরকারের লাখ লাখ টাকা বরাদ্ধের নামে আত্মসাত করেছেন স্বার্থান্বেষীরা। জানা যায়, গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে কাবিখা (চাল) প্রকল্প তালিকা (২য় পর্যায়ে) সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের বিশেষ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছিল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। বরাদ্ধগুলো স্থানীয় আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছিল। কোন কোন প্রকল্পের কাজ না করেই বরাদ্ধের টাকা হজম করা হচ্ছে। সিকিভাগ কাজ করে প্রায় প্রতিটি বরাদ্ধের সিংহভাগ অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। আর তাদেরকে টাকা তুলে দিয়ে সহযোগিতা করেছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কে এম মাহবুবুর রহমান। সম্প্রতি সাংবাদিকদের তৎপরতায় নাসির উদ্দিন নামে এক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বেরি-বাঁধের বরাদ্দের দেড় লাখ টাকা উপজেলা সরকারি দপ্তরে জমাও দিয়েছিলেন।উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের ছৈলা গ্রামের কোনাবাড়ি থেকে মঈনপুর কলেজ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণে ১২ মে:টন ও একই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে স্কুলগামী রাস্তা নির্মাণে ৭ মে:টন কাবিখা (চাল) প্রকল্প তালিকা ২ পর্যায়ে বরাদ্দ হয়েছিল। প্রথম প্রকল্পটি গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল খালিক ও দ্বিতীয়টি একই গ্রামের ওয়াড আওয়ামীলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। ছৈলা গ্রামের মুরব্বি আলফু মিয়া, রাহেল আহমদ, যুবক সুজাদ আহমদ ও আরফাত আহমদ রাহাতসহ গ্রামের একাধিক লোকজনরা অভিযোগ করে বলেন, প্রকল্পের ১২ মে:টনের দেড় কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার মধ্যে আধা কিলোমিটারের চেয়ে কম অংশে মাটির লেপন করা হয়। বাকী এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় এক মুঠোও মাটি ফেলা হয়নি। প্রায় দেড় লাখ টাকার মাটি ফেলে প্রকল্পের পুরো টাকা আত্মসাত করেছেন গ্রামের ওয়াড আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল খালিক। অপর প্রকল্পের ৭ মে:টনের মধ্যে আওয়ামীলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন পুরো টাকার কাজ না করে প্রকল্পের বাকি টাকা নিজের পকেটস্থ করেছেন। এখানে আবদুল খালিকের প্রকল্পের মাটির ঠিকাদারি করেন গ্রামের আফতাব আলী। তিনি যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেন কোনাপাড়া থেকে ছাব্বিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় ১৯হাজার মাটি ফেলা হয়। এর বিনিময়ে তিনি প্রতি হাজার মাটির দর নিয়েছেন ৭ হাজার টাকা করে। ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান মকদ্দুছ, বলেন কোনা বাড়ি থেকে মঈনপুর কলেজ পর্যন্ত রাস্তার কাজের বিষয়ে তাকে জানানো হয়নি। তবে কাজ শুরুর দিন তাকে বলা হয়। এ বিষয়ে আবদুল খালিক বলেন, কোনা বাড়ি থেকে মঈনপুর কলেজ পর্যন্ত পুরো রাস্তার কাজ করা হয়নি, যতটুকু করার কথা ছিল তিনি ততটুকু রাস্তা নির্মাণের কাজ করেছেন। এ প্রকল্পে তিনি কোন অনিয়ম করেননি। তিনি বলেন, প্রতি হাজার মাটি ১২ হাজার টাকা মূল্যে অনেক দূর থেকে এই রাস্তায় ফেলা হচ্ছে স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য। এ কাজের আফতাব উদ্দিন নামে যিনি ওই মাটির ঠিকাদারি করেছিলেন তিনি জানান, আবদুল খালিকের কাছ থেকে প্রতি হাজার মাটি ৭ হাজার টাকা মূল্যে মোট ১৯হাজার মাটি এখানে ফেলেছে। সেই হিসেবে ১লাখ ৫৪ হাজার টাকা গ্রহণ করেছেন। এ হিসেবে কয়েক লাখ টাকার গাফলা রয়েছে আবদুল খালিকের। দেলোয়ার হোসেন জানান, তার কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। এই কথা তিনি হলফ করে বলতে পারবেন। এখন তার মান-সম্মান ক্ষুন্ন করতে রাজনৈতিক ভাবে প্রতি হিংসার শিকার হচ্ছেন। এব্যাপাওে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কে এম মাহবুবুর রহমানকে বার বার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন। তার কার্যালয়ে সরকার পতনের পর থেকে তালা ঝুলানো থাকায় সরাসরি বক্তব্য নেওয়া ও সম্ভব হয়নি।
বিষয়: #অভিযোগ #অর্থ #আত্মসাত #কাবিখা #ছাতক #প্রকল্প #সিংহভাগ