বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » নানা-নাতিনের ভয়ংকর ফাঁদে নিঃস্ব দুই লন্ডনী!
নানা-নাতিনের ভয়ংকর ফাঁদে নিঃস্ব দুই লন্ডনী!
বজ্রকণ্ঠ অনলাইন নিউজঃ
যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য প্রেমের জালে ফেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও চিত্র ধারণের পর ব্লাকমেইল করে বিয়ে। তবে যুক্তরাজ্যে গিয়েও শেষ হয়নি তার এ প্রতারণা! ফাঁদে ফেলে একাধিক বিয়ে করে সর্বস্ব লুটে নিয়ে লন্ডনী যুবকদের নিঃস্ব করাই যেনও সুনামগঞ্জের এ যুবতীর নেশা।
জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার গিরিশনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়া মেয়ে শারমিন আক্তার সীমা নামের এ যুবতীর ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন একাধিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবক ও তাঁদের পরিবার।
সম্প্রতি ওই যুবতী সীমার বিরুদ্ধে তালাক না দিয়ে একাধিক বিয়ের নামে যুবকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ-সম্পদ লুট, প্রতারণা-জালিয়াতি ও নিরীহ লোকদের মামলায় ফেলে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে যুক্তরাজ্যের হোম অফিসে পৃথক দুটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী দুই যুবক।
তাঁরা হলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান।
তাঁদের দাবি সীমার এ সকল অপকর্মের মুলহোতা তার কথিত নানা যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিক মিয়া এবং জড়িত রয়েছেন সীমার মা বাবাও।
জানা গেছে, গত ৪ বছর আগে ফেসবুকে সীমার সঙ্গে পরিচয় হয়ে প্রেমে সম্পর্ক তৈরি হয়। কিছুদিন পর বিয়ের জন্য সাইফুর তাঁর পরিবারের লোকদের সীমা বাড়িতে পাঠান। কিন্তু সীমার দেওয়া তথ্যে সাথে কোন মিল না পাওয়ায় সাইফুর ও তাঁর পরিবার বিয়েতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। তখন সীমা আত্মহত্যার হুমকিসহ ভিডিও কলে ধারন করা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখান। এতে ভয় পেয়ে সাইফুর সীমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন এবং ২০২১ সালের জুন মাসে দেশে এসে সীমাকে বিয়ে করেন। পরে আট মাসের মধ্যে সীমা যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানে যাওয়ার পর সীমার ভয়ংকর রূপ সামনে আসে!
ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুর রহমান বলেন, বিয়েসহ সীমাকে যুক্তরাজ্যে আনতে আমার প্রায় ৬০ লাখ টাকা খরছ হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্যে আসার পর সীমা পুরোদমে বদলে যায়। সে আমাদের বাসার মালিক ব্রিটিশ এক নাগরিকের সঙ্গে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে দামি দামি উপহার লুটে নিতে থাকে। বিষয়টি আমার কাছে ধরা পরায় আমাদের মধ্যে কলহর দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে আমার বাসার সকল দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। মানসম্মানের ভয়ে সাইফুল তখন আর মামলামকদ্দমায় জড়াননি।
এদিকে, সাইফুলের বাসা থেকে নিয়ে আসা জিনিসপত্র বিক্রি করে সীমা তার ছোট ভাইকে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসেন এবং কথিত নানা শফিকের বাসায় বসবাস শুরু করেন। ততদিনে সীমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরে যুক্তরাজ্যে স্থায়ী ভিসা পেতে অপর যুবক যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুরকে প্রতারণার ফাঁদে পেলে বিয়ে করেন সীমা। বিয়ের পরেই কৌশলে ভিসা জটিলতার কথা বলে হাবিবুরের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ওই যুবতি।
বিয়ের এক বছর পর ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে সীমার পূর্বের বিয়ে ও সকল প্রতারণা বিষয়ে জানতে পারেন হাবিবুর। এতে তাদের মধ্যে মনমালিন্য শুরু হয়। এরপর ওই একইভাবে হাবিবুরের ঘর থেকে দামি সব জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায় সীমা। তবে এবার শুধু পালিয়ে গিয়েই কান্ত হয়নি সে! চলতি বছরের ১৯ মার্চ লন্ডনের বেথনাল গ্রীন পুলিশের কাছে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে সীমা যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের বৈধতা লাভ করে।
ভুক্তভোগী যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাবিবুর রহমান বলেন, সীমা দেশে থাকাকালীন তার রূপ যৌবন দেখিয়ে যুবকদের নিঃস্ব করে এসেছে। অনেকের সঙ্গে তার বিয়েও দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি এবং সাইফুর সীমার প্রতারণায় সর্বস্ব হারিয়ে এখন পুরোই নিঃস্ব। তাই আমরা হোম অফিসে সীমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। আমরা এর বিচার চাই। সীমার সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শফিক জড়িত। আমরা চাই আমাদের মতো আর যেনও কেউ নিঃস্ব না হয়।
এ ব্যাপারে একাধিক বার সীমার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সীমার বাবা শাহজাহান মিয়া মুঠোফোনে বলেন, সাইফুরের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তার সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সাইফুর সীমাকে লন্ডনে নিয়ে যায়। লন্ডনে কি হয়েছে তা আমরা জানি না! সীমা এখন আমার মামা শ্বশুর শফিক মিয়া বাসায় রয়েছে।
এদিকে সীমার কথিত নানা শফিক মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়েই এ প্রতিনিধি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। সেই সাথে সীমাকে নিয়ে কোন প্রতিবেদন না করতে হুমকি দেন।
সূত্রঃ দৈনিক সিলেট
বিষয়: #দুই #নাতিন #নানা #নিঃস্ব #ফাঁদ #ভয়ংকর #লন্ডনী