সোমবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ধোপাজান নদীতে সেনা বাহিনীর নজরদারীর পরও ৮৭টি স্টিলবডি নৌকায় বালি চুরির মহোৎসব
ধোপাজান নদীতে সেনা বাহিনীর নজরদারীর পরও ৮৭টি স্টিলবডি নৌকায় বালি চুরির মহোৎসব
আল হেলাল :
সুনামগঞ্জের ইজারাবিহিন ধোপাজান চলতি নদীতে সেনাবাহিনীর নজরদারীর পরও ৮৭টি স্টিলবডি ও ৩০/৪০টি পঙ্গপাল নৌকায় রাতের বেলা বালিচুরি সংগঠিত হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই দুলাল আহমদসহ একদল পুলিশ ধোপাজান নদীতে নিয়মিত টহলের দায়িত্বে থাকার পরও বন্ধ করা সম্ভব হয়নি সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পত্তি ডাকাতির মহোৎসব। রাত সাড়ে ৩টায় একসাথে ৮৭টি ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডি নৌকা ও ৩০/৪০টি পঙ্গপাল নৌকায় ড্রেজার ও বোমা মেশিন দ্বারা ধোপাজান নদীর তীর কেটে ও নদীর তলদেশ হতে বালি বুঝাই করে মুহুর্তের মধ্যে অবৈধ বালিবাহী স্টিলবডি ও পঙ্গপাল নামের নৌযান ও নৌকাগুলো বলতে গেলে অনেকটা বিনাবাধায় পুলিশের সামনে দিয়ে অতি দ্রুতবেগে বের হয়ে যায়। ধোপাজান নদীতে চোরাকারবারী প্রতিরোধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্বপালনরত প্রত্যক্ষদর্শী যুবদল নেতা রাসেল মিয়া,ফকির মিয়া,তানভীর আহমদ,নেহার উদ্দিন,আক্তার হোসেন ও মিছির আলীসহ ইব্রাহিমপুর ও পূর্ব সদরগড়ের বাসিন্দারা জানান,আমরা গত কয়েকদিন যাবৎ নদীতে টহলরত চেকপোস্টের পুলিশ দলের সহায়তায় নদীর পাড়ে অবস্থান করি। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার পরে ধোপাজান চলতি নদীতে সেনাবাহিনীর নজরদারীর পরও ৮৭টি স্টিলবডি ও ৩০/৪০টি পঙ্গপাল নৌকায় রাতের বেলা বালিচুরির এমন মহোৎসব এই প্রথম দেখেছি। পুলিশের হুইসেল ও হাকডাক কোন কিছুই শুনেনি মানেনি চোরাকারবারীরা। তারা পুলিশের স্পিডবোটটি ভারী ষ্টিলবডি নৌকার দ্বারা সজোরে ধাক্কা মেরে একযোগে চোরাই করা বালি সহকারে নিজ নিজ ষ্টিলবডি ও ইঞ্জিন নৌকা এবং পঙ্গপাল নৌকাগুলো নিয়ে দ্রুতবেগে বের হয়ে গেছে। তারা বলেন,এর আগের দিন সেনাবাহিনী,গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ প্রশাসনের যৌথ অভিযানে ১১টি বালিভর্তি স্টিলবডি নৌকা আটক করা হয়েছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে এসব অবৈধ বালিবাহী ষ্টিলবডি ইঞ্জিন নৌকা আটক করে পুলিশ ফাড়িতে নেয়া হয়। তবে অধিকাংশ বালিবুঝাই করা ইঞ্জিন নৌকা ও বাল্কহেড যৌথবাহিনীর কড়া নজরদারীর পরও ভোরবেলা অক্ষয়নগর থেকে সুকৌশলে জিনারপুর,সাহেবনগর ও কাইয়ারগাঁও গ্রামের দিকে উজানে চলে যায় এবং প্রশাসনের ধরপাকড় অভিযান থেকে নিজেদেরকে আত্মরক্ষা করে। তারা বলেন, শনিবার রাত ৩টার পরের ঘটনা শুধু আমরা দেখেছি তা নয় বরং নদীর পাড়ে থেকে দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি হাসান চৌধুরী,তেঘরিয়া ঘাটে অবস্থান করে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ প্রতিনিধি আশিকুর রহমান পীর,মাইটিভি প্রতিনিধি আবু হানিফ,এখন টেলিভিশন প্রতিনিধি লিপসন আহমদ,গাজী আফজাল হোসেন,সজিব আহমদ ভ’ইয়া,কে এম শহীদুল ইসলামসহ প্রায় ১৫ জন সাংবাদিক সরজমিনে প্রত্যক্ষ করেন। অভিযোগ উঠে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার দিবাগত রাতে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার একজন এসআই ৪৭ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে ১৫টি বালিবুঝাই করা ইঞ্জিন নৌকা ছেড়ে দেন। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে এসআই হামিদ দায়িত্ব পালন করলেও কোন নৌকা বের হতে দেননি। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ডিবি পুলিশের অভিযানেও নৌকাযুগে বালি পাথর চুরি মোটামোটি বন্ধ থাকে। তবে ধোপাজান নদীর পাড়ে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত সদর মডেল থানা পুলিশের টহলের মধ্যেও শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ৩টির্ বালিবুঝাই করা ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায় কয়েকজন চোরাকারবারী। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে নদীতে দায়িত্ব পালন করেন সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই সবুর। তার চোখ ফাকি দিয়ে সদর উপজেলার হুরারকান্দা,কাইয়ারগাঁও,ইব্রাহিমপুর,সৈয়দপুর এবং বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভাদেরটেক মনিপুরিহাটি গ্রামের কতিপয় চোরাকারবারী প্রায় ৭০টি বালিবাহী ইঞ্জিননৌকা অক্ষয়নগর গ্রামের পশ্চিমে ধোপাজান নদীতে রাখে। তারা পরিকল্পনা করে ভোররাত ফজরের নামাজের সময় পূর্ব সদরগড় ও পশ্চিম সদরগড় গ্রামের কতিপয় লোককে নিয়ে জোর করে বালিবাহী নৌকা বের করার পরিকল্পনা নেয়। এজন্য তারা ধোপাজান নদীর দুইপাড়ে গোপনীয় মিটিং এর আয়োজন করে থাকে। কিন্তু চোরাকারবারীদের সকল পরিকল্পনা প্রশাসনকে তাৎক্ষনিকভাবে জানান দেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে জেলা প্রশাসক ইজারাবিহীন ধোপাজান নদীর বালি পাথরসহ মূল্যবান খনিজ সম্পদ রক্ষায় সেনা ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে তাৎক্ষনিকভাবে টহল ব্যবস্থা জোরদার করেন। এসআই সবুর ঐ রাতে কোন বালিবাহী নৌকা বের হতে দেননি। এলাকাবাসী বলেন,সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে শনিবার বাদ আছর আগাম মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই ঐ বালিভর্তি স্টিলবডি,ইঞ্জিন নৌকা ও কাটবডির নৌকাগুলো দ্রুতবেগে বালি চুরি করে বেরিয়ে যায়। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে নদীতে ঐ রাতে টহলরত এসআই দুলাল আহমদ বলেন,আমি প্রথমবারের মত ঐ রাতে ধোপাজান নদীতে ডিউটিতে যাই। এখানে দায়িত্ব পালনের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার ছিলনা। আমি যখন সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম তখন আমার ঊর্ধতন কর্মকর্তার কাছে আমি জানতে চাই স্যার আমরা করণীয়টা কি ? তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন যাতে নদীতে কোন বালিবাহি নৌকা ইন আউট হতে না পারে। আমি তখন কোন খালি ষ্টিলবডি নৌকা যেমন নদীতে প্রবেশ করতে দেইনি তেমনি বের হতেও দেইনি। কিন্তু রাত ৩টার পরে হঠাৎ করে একসাথে কতগুলো ষ্টিলবডি,ইঞ্জিন নৌকা ও কাটবডি বের হয়ে যায়। তারা আমার বাঁশীও শুনেনি এবং নিষেধবাধা কোনটাই আমলে নেয়নি। তারপরও এতগুলো নৌকার পিছনে মাত্র একটি স্পিডবোট নিয়ে ধাওয়া করে আমরা ৫টি নৌকা আটক করতে পেরেছি। সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ওয়ালী আশরাফ খান বলেন,চোরকারবারীরা কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে আগাম ঘুষ দিয়ে নৌকা বের করেছে তা আমি জানিনা। আমার কর্তব্যরত কর্মকর্তা যখন নিরুপায় হয়ে আমাকে জানিয়েছে তখন আমি সাথে সাথে কন্ট্রোলরুমে উর্ধতন কর্মকর্তাদেরকে তাৎক্ষনিক অবস্থার কথা জানিয়েছি। তিনি বলেন,আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলনা। এসআই রাব্বি বলেন,প্রতিরাতে একজন ইজারাদার ধোপাজান নদীর মুখে জাল ফেলে মাছ ধরতেন। ফলে বালিবাহি ইঞ্জিন নৌকা আটকাতে আমাদের সুবিধা হত। কিন্তু শনিবার দিবাগত রাতে পূর্ব সদরগড় নিবাসী নুরুজ আলী হঠাৎ করে নদীতে জাল ফেলা থেকে বিরত থাকেন। এ সুযোগে চোরাকারবারীরা নদীতে কোন ফাকফোকর বা বাধা না পেয়ে সোজা দ্রুতবেগে বের হয়ে যায়। সদর মডেল থানার নবাগত ওসি নাজমুল হোসাইন বলেন,আমি আজকেই যোগদান করেছি। কে কত টাকা নিয়ে কিভাবে নদী হতে নৌকা বের করে সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পত্তি লুটতরাজ করে তা বের করার চেষ্টা করবো। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,একজন অজ্ঞাত দরবেশধারী ব্যক্তি পুলিশ প্রশাসনের কোন এক বড় কর্মকর্তার বন্ধু পরিচয় দিয়ে সেনাবাহিনীর প্রবল নজরদারীর পরও পর্দার আড়ালে থেকে কাইয়ারগাঁও,হুরারকান্দা,ইব্রাহিমপুর,বালাকান্দা বাজার,সৈয়দপুর,ভাদেরটেক মনিপুরিহাটিসহ ধোপাজান নদীর দুই পাড়ের চিহ্নিত ও অস্থানীয় চোরাকারবারীদেরকে সংগঠিত করে বড় স্টিলবডি ৩০ হাজার টাকা,বড় ইঞ্জিনচালিত নৌকা ২০ হাজার টাকা ও পঙ্গপাল কাডবডি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা রেটে ঘুষ ভাগিয়ে নিয়ে ধোপাজান চলতি নদীর বালি লুটতরাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রশাসন এসব গডফাদার ও চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বিষয়: #ধোপাজান #নদী