শুক্রবার ● ৪ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » বিশেষ » মাঠে মাঠে আমন ধানের সবুজ-সম্মিলন # আশায় উদ্ভাসিত কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কৃষক।
মাঠে মাঠে আমন ধানের সবুজ-সম্মিলন # আশায় উদ্ভাসিত কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কৃষক।
রিপন শান #
ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত । দিগন্তজোড়া সবুজের সমারোহ। ঝির ঝিরে বাতাসে সবুজের ঢেউ । কৃষকের সোনালী স্বপ্ন লুকিয়ে আছে সবুজ ধানক্ষেতে। চারিদিকে নয়নাভিরাম সুন্দর । শরতের রোদ-বৃষ্টির খেলায় সবুজের আভা চারিদিকে। ফসলের মাঠের কোথাও ফাঁকা নেই । যতদূর দৃষ্টি পড়ে সবুজ আর সবুজ । নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা । সবুজের গাঢ় রঙে একাকার হয়ে পড়েছে যেন।
বলছিলাম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কথা । মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা । আর আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। সবুজ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। নতুন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন লাগাতে কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝিতে আমন ধান চাষ করার নিয়ম থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় তা পারেননি কৃষকরা। ধান রোপন নিয়ে কৃষক পড়ে বিপাকে। দেরীতে বৃষ্টি হলেও ইতিমধ্যে আমন রোপন লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
কটিয়াদী উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে- এ বছর কটিয়াদী উপজেলায় ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও, চাষ বেশি হয়েছে। এ পর্যন্ত উপজেলায় ধান চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৫শ ৫০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হজার ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এবারও রোপা আমনের কোন রোগ বালাই না হলে বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন। সরেজমিন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেত প্রকৃতির খেয়ালে গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ ভাল রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, সার ও বালাইনাশক ঔষধ প্রয়োগ ও পার্চিংসহ সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। মাঝে মধ্যে হচ্ছে বৃষ্টি, আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা। ধানের চারাগুলো থেকে কয়েকদিন পর বের হবে থোর। আর কিছুদিন পরই কৃষকদের আমন ক্ষেতে বের হবে মৌ মৌ গন্ধ। এর পরই সকলের নজর কাড়বে সোনালি ধান। সোনালী স্বপ্নে সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। গৃহিণীর মুখে ফুটবে হাঁসি।
কটিয়াদির কৃষক ইউনুস মিয়া জানিয়েছে- পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় প্রথমদিকেই শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিয়ে আমন চারা রোপণ করেছি। এতে রোপণে খরচ বেড়েছে। আবার সারের দাম বেড়েছে। ডিজেলের দাম বেড়েছে। চিন্তা হচ্ছে ধানের খরচ উঠাতে পারবো কিনা। মুগদিয়া গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন জানান- এবার তীব্র খরার কারণে দেরীতে রোপা আমন লাগাইছি। কিন্তু আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া ভালো থাহায় ফসল এহন অনেক ভালো অইছে।
বোয়ালিয়া গ্রামের কৃষক তাইজ উদ্দিন বলেন- কয়েকদিনেই আমরার ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর অইছে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ দেহা যায়। জালালপুর ইউনিয়নের দায়িত্বশীল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন জানান- বর্তমানে রোপা আমন ধানের ক্ষেত সবুজে ভরে উঠেছে। কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। কৃষি অফিসার স্যারের নির্দেশে মাঠপর্যায়ে আমরা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের সময়মত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, এবার আমন ক্ষেতে এবার রোগবালাই কম। তাই এবারও ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। কটিয়াদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান- ইতিমধ্যে কটিয়াদী উপজেলায় শতভাগ রোপা আমন রোপণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলার ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল যা লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে চাষ বেশি হয়েছে। এ পর্যন্ত কটিয়াদীতে ধান চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৫শ ৫০ হেক্টর জমিতে।
কৃষি কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন আরো যোগ করেন- ফলন যাতে ভালো হয়, এই জন্য মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
কাজেই সুফল তো আসবেই ইনশাআল্লাহ।
বিষয়: #কৃষক