শুক্রবার ● ৪ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ১৫বছরের ও শ’শ’কোটি টাকার মালিক সিলেটের নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল গ্রেপ্তার!
১৫বছরের ও শ’শ’কোটি টাকার মালিক সিলেটের নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল গ্রেপ্তার!
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ ৫ আসনে সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান বোমা মানিকের চাচাতো ভাই ছাতক উপজেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ও উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে সিলেটের র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব ৯) বিশেষ অভিযান চালিয়ে নাশকতার মামলায় পলাতক আসামী সিলেট নয়া সড়ক এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ৯। সে উপজেলার উত্তর খুরমা ইউপির আমেলতল গ্রামের খায়রুল ইসলামের ছেলে বিল্লাল আহমদ।
সিলেটের আওয়ামীলীগের সাবেক কেন্দ্রিয় কমিটির সাংগঠনিক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ কে প্রধান আসামী করে ছাতকে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরন,ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদসহ ৭২জনকে নামে গত ২৫ আগষ্ট সিলেটের শাহ পরান থানার একটি মামলা দায়ের করা হয়। সিলেটের শাহ পরান থানার উপ শহর এ ব্লকের মফিজুর রহমানের ছেলে আল আমিন রাজা বাদী এ নাশকতা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার ১৭ নম্বার এজাহারভুক্ত আসামী ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহসদ। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব ৯),সুনামগঞ্জের গোয়েন্দা (ডিবি) থানা পুলিশ জানান,চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের বিরুদ্ধে রয়েছে মানবপাচার, আওয়ামৗলীগ নেতা ফাকরুআহমদকে গলা কেটে হত্যা মামলার প্রধান আসামী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, বনদস্যু,জলদস্যু,ভুমিখেকো,হাওরখেকোসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তার বিরদ্ধে নাশকতা চাদাবাজি,হামলা, মারামারি ও আওয়ামীলীগ নেতা ফাকরু হত্যা,দুনীতি সহ একডজন মামলা রয়েছে দুনীতিবাজ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। গত ১৫ বছরে বিল্লাল চেয়ারম্যানের নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন কয়েক শত শত কোটি টাকার সম্পদ। থানার দালালি,নিয়োগ ও টেন্ডার-বাণিজ্য, সরকারি বরাদ্দ লুট, জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে তিনি এসব সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। ১৫ বছরে ব্যবধানে শূন্য থেকে শত শত কোটি টাকার সম্পদে মালিক বনেছেন।
উপজেলার উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল আহমদের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ১৯ জানুয়ারি তার দুনীতি লুটপাটের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে সুনামগঞ্জ জেলা ডিসি জেনারেল শরিফুল আলম এ তদন্ত শুরু করলে ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তদন্তের বিপোটটি গায়েব করা হয়।
তার বিরুদ্ধে টিআর, কাবিখা, বিশেষ প্রকল্প,নামে বেনামে ভুয়া বিল জমা দিয়ে এলজিএসপি ইত্যাদি প্রকল্পের কাগজপত্র যাচাই-বাচাই পর সত্যতা রেরিয়ে আসলে ও এসব তদন্ত রিপোট আজ ও যাযনি। অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী, ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন কালে টিআর, কাবিখা, এলজিএসপি ইত্যাদি প্রকল্পের সরকারি বরাদ্দের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন বিল্লাল আহমদ। তার বিরুদ্ধে বেশী ভাগ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি লাখ টাকার অর্থ লুটপাট করেছে। তার ভুয়া প্রকল্প হচ্ছে ধারণ বাজার থেকে আমেরতল রাস্তায় প্রতি বছর একাধিক প্রজেক্ট, মানিকগঞ্জ থেকে ফুরকাননগর, ছাতক-জাউয়াবাজার রাস্তা থেকে ডুবির ভাঙা, বৈঠাখালী, পলিরটুক রাস্তার ও এমপির বিশেষ বরাদ্দের চাল, গম উত্তোলন করে নামে-বেনামে লাখ লাখ টাকার প্রকল্প কাগজে আছে বাস্তবে নেই এসব প্রকল্পের হদিস রয়েছে। এ ছাড়া ২০১১ ও ১২ সালে অর্থবছর ও ২০১৯ ও ২০ সালে অর্থ বছরে এমপির বিশেষ বরাদ্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফাইল আছে, কাজ না করে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে টাকা হজম করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঢাকা-মোট্রো-ঘ ১৩-১৮৫৫ গাড়ি নিয়ে উপজেলাবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। এদিকে উপজেলার জাউয়াবাজার ইউপির গনিপুর হাইস্কুল গেট নির্মাণের নামে ২৭ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। জানা গেছে, উত্তর খুরমা ইউনিয়নের আমেরতল গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারে বিল্লাল আহমদের জন্ম। ২০১১ সালে প্রথম চেয়ারম্যান ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ২০১৫ সালে তিনি উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এর পর দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে তিনি ২০১৬ সালে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি। দলীয় প্রভাব আর চেয়ারম্যানের ক্ষমতার দাপটে অর্জিত টাকায় তিনি এখন বিলাসবহুল বাড়ি, উন্নতমানের গাড়ি, জায়গা-জমির মালিকসহ শত শত কোটি টাকার সম্পদে পাহাড় তিনি। তার নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারপিট ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন নিজ দলের অনেক নেতাকর্মীরা। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় সুনামগঞ্জ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে সচেতন উত্তর খুরমা ইউনিয়নবাসী ২০২০ সালে ৩০ জানুয়ারি অভিযোগের সূত্রধরে দুদক ঢাকা প্রধান কার্যালয় চেয়ারম্যানের সম্পদের হিসাব অনুসন্ধানে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় সুনামগঞ্জকে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক তাকে তলব করা হলে ও রহস্যজনক কারনে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ সময়ের সুনামগঞ্জ জেলা ডিসি জেনারেল শরিফুল আলম তদন্তকারি কর্মকতা ছিলেন। তিনি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নির্দেশে তার বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্প টিআর, কাবিখা, এলজিএসপি বিশেষ বরাদ্দের কাজ না করে আত্মসাৎ লুটপাটের অভিযোগের ঘটনার তদন্ত চলছে। এছাড়া ও ২২সালে ভয়াবহ বন্যায় ত্রানসামগ্রী আতœসাত,গরীবের নলকুপ কোটিপতিদের কাছে ৬০-৭০হাজার টাকা ঘুস নিয়ে বিত্রিু করার অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ র্যারের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেয়ে তার প্রধান সহযোগিরা এখনো আতœগোপনে চলে গেছেন। সরকার পতনের পর বোমা মানিকের গোটা পরিবার লাপাত্তা,কে কোথায় জানে না ঘনিষ্টরা কেউ। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব ৯) রাতে মিডিয়া অফিসার সহকারি পুলিশ সুপার মশিহুর রহমান সোহেল ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদকে গ্রেপ্তারের এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,রাতে সিলেটের শাহ পরান থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিষয়: #নাশকতা #সিলেট