বুধবার ● ২৩ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সুনামগঞ্জে ধোপাজান নদী সংরক্ষণে হার্ডলাইনে পুলিশ প্রশাসন…পুলিশ সুপার
সুনামগঞ্জে ধোপাজান নদী সংরক্ষণে হার্ডলাইনে পুলিশ প্রশাসন…পুলিশ সুপার
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম বলেছেন,ধোপাজান নদী হতে বালি পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে একটি মহল পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে গুজব ও উস্কানী ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পায়তারায় লিপ্ত হয়েছে। বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা সংবাদ ও অপপ্রচার চালিয়ে ঐ মহলটি উদ্দেশ্যমূলক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। কিন্তু ঐ নদী মহালটিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। তারপরও সরকার ও জনস্বার্থে ধোপাজান নদীতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে যাচ্ছে পুলিশ। যদি নদীতে পুলিশ না থাকে তাহলে সেখানে চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাস মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে। অতীত্ওে এই নদীতে চাঁদাবাজী ও খুন খারাবী হয়েছে। গত কয়েকদিন আগে সৈয়দপুর গ্রামের এক বৃদ্ধ খুন হয়েছেন। অথচ খুনের ঘটনায় থানায় কেউ কোন মামলা দেননি। যারা খুন করেছে এবং যারা খুন হয়েছে তারা নিজেরাই রফাদফা করে আপোস নিস্পত্তিতে মিলিত হয়েছে। তাই কোন মহলের চাঁদাবাজী আর খুনখারাবী পুলিশ প্রশাসন বরদাশত করতে পারেনা। আমরা চাই যেকোন মূল্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রাখতে। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একইদিন দৈনিক সুনামগঞ্জ প্রতিদিন পত্রিকায় “ধোপাজানে ঠেকানো যাচ্ছে না বালু লুট” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এ প্রতিবেদককে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রকাশিত ঐ সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়,চলতি নদীতে বাল্কহেড ও বিভিন্ন প্রকারের নৌযান প্রবেশ করিয়ে ড্রেজারের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছে একাধিক সিন্ডিকেট চক্র। নদীর প্রবেশমুখে বেড়া দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না বালু লুটের এই অবৈধ কর্মকান্ড। বালু লুট বন্ধে প্রশাসন হার্ডলাইনে থাকলেও নেতিবাচক কাজে পুলিশের আশকারা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন বক্তব্যের সাথে ভিন্নমত পোষন করে জেলা পুলিশ সুপার বলেন,
নদীকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রশাসন কেন নেতিবাচক কর্মকান্ডে আশকারা দেবে। এমন অভিযোগটি কেবা কারা কোথায় করেছে সংবাদে সেই সূত্রের কোন উল্লেখ নেই। কারণ পুলিশ প্রশাসন কোন চক্রের সাথে জড়িত নেই। জেলা প্রশাসনের সাথে থেকে নদীর প্রবেশমুখে বেড়া দেয়ার কাজটি বাস্তবায়ন করেছে পুলিশ প্রশাসন। শুনেছি কোন একসময় পর্যটনের দুটি ইঞ্জিন নৌকা সেই বেড়াটি ভেঙ্গে নদীর মাঝপথ দিয়ে সুরমা নদীতে বের হয়েছে। ফলে বেড়াটি ভেঙ্গে গেলেও কেউ পুলিশে খবর না দেয়ায় ঐ দুটি পর্যটকবাহী নৌকা আটকানো সম্ভব হয়নি।
সংবাদের আরেকাংশে বলা হয়, “নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পুলিশের সামনে শত শত নৌকা খালি ঢুকে নদী থেকে বালু ভর্তি করে ফিরে আসছে। এখানে ‘চোর পুলিশ’ খেলা চলছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার বালু লুট হয়ে যাচ্ছে। অথচ কেউ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না”। এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হক বলেন,বালি লোড আনলোডের ব্যাপারে সিদ্বান্ত নেয়ার এখতিয়ার জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগন যখনই নদীতে পুলিশ প্রশাসন কে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন তখনই পুলিশ তাদের সাথে থেকে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করে। তিনি বলেন, প্রতিদিন পুলিশ প্রশাসন খালি অথবা বালিবুঝাই করা নৌকা নিয়মিত আটক করে এবং মামলা দায়েরসহ মোবাইল কোর্টের হাতে আটককৃত নৌকা ও মালামাল জব্দ করে প্রশাসনকে আইন প্রয়োগে সার্বিক সহায়তা করে থাকে। সুতরাং এখানে কোন চোরাকারবারীকে অবৈধ সহায়তা দিয়ে চোরপুলিশ খেলার সুযোগ পুলিশ প্রশাসনের নেই। সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) ওয়ালী আশরাফ খান বলেন,নদীর শৃঙ্খলার ব্যাপারে দিনরাত নদীতে পড়ে থাকতে হয়। জনবল সংকটের কারণে আমাদের সকল দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তারপরও বালু লুট বন্ধে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার বলেন,পুলিশ প্রতিদিন নৌকা আটক করে মামলা দায়ের করছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগন বিভিন্ন সময় আটককৃত নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জেল জরিমানা দিচ্ছেন এসব ভালো সংবাদ পত্রিকায় কম আসে। কিন্তু পুলিশের বদনাম ফলাও করে পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। অথচ আমাদের ভালো কাজের কোন মূল্যায়ন কেউ করছেনা। তিনি নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন,ধোপাজান নদীতে ব্যবসায় জড়িত প্রতিটি বারকী নৌকা,পঙ্গপাল,ইঞ্জিন নৌকা ও বাল্কহেড এর সাথে কেবলমাত্র ৫/১০টি পরিবারই নয় বরং হাজার হাজার পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। প্রশাসন তাদের উপর কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করলেও থামানো যাচ্ছেনা বালি পাথর উত্তোলন। এ অবস্থায় এই নদীটিকে এভাবে চলতে দেয়া যায়না সেটি আমরাও বুঝি। তারপরও এখানে থার্ড পার্টিসহ একাধিক পার্টির স্বার্থ জড়িত রয়েছে। একদিকে কেউ কেউ বলছে নদীটি ইজারাবিহীন অন্যদিকে সরকারকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে আরেকটি পক্ষ বলছে আমরা বিআইডাব্লিউটি,উপজেলা পরিষদ হতে টোল ট্যাক্স গ্রহনকারী ইজারাদার ও পৌরট্যাক্স আদায়কারী ইজারাদার। তারা সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে বিধায় টাকা তুলতে মরিয়া। অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ আছে যারা নিজেদের বাড়ীর সামনের পতিত জায়গায় আসা বালি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। আবার বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরা রয়েছে যারা টাকা বিনিয়োগ করে বালি পাথর উত্তোলনপূর্বক ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৯০ ভাগের বেশি লোক এই নদীকে কেন্দ্র করে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছে। গত ৪/৫ বছর ধরে এইভাবে চললেও ধোপাজান নদীর বালি কমছেনা। এছাড়া গত ২ বছর আগে সরকার মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে বিশাল বিশাল ড্রেজারের মাধ্যমে ধোপাজান নদীর তলদেশ খনন করেছে। কিন্তু ৩ মাসের ব্যবধানেই খননকৃত জায়গা প্রাকৃতিকভাবেই ভরাট হয়ে সেখানে জেগে উঠেছে একাধিক চর। এখন যদি বালি বের করে এইসব চরের সংস্কারসহ খনন না করা হয় তাহলে বর্ষামৌসুমে এখানে আবারও ২০২২ সালের মত ভয়াবহ বন্যায় মানুষ ও গবাদিপশু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই উৎসবের মত বালু উত্তোলন ও উত্তোলনকৃত বালু লুট করছে সুবিধাভোগীরা। বালু লুট বন্ধে পরিপত্র জারি করে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করলেই চলবেনা। এখানে মানুষের মনের কথা বুঝতে হবে। মানুষ কি চায় ? তা জানতে ও দেখতে হবে। যেহেতু জেলা প্রশাসক হচ্ছেন জেলার বালুমহাল মহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সেহেতু এ ব্যাপারে সকল দায়দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। আমরা জেলা প্রশাসনের সকল কার্যক্রমের সাথে আছি এবং থাকবো। পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম বলেন,অবিলম্বে জেলার সকল তালিকাভূক্ত বালি ব্যবসায়ী,নদীর দুই তীরের বাসিন্দা,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,মসজিদের ইমাম মুযাযযিনসহ সকল শ্রেণিপেশার প্রতিনিধি সমন্বয়ে বিশেষ সভা ডেকে সকলের উপস্থিতি ও মতামতের ভিত্তিতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ধোপাজান নদী বালি পাথর মহালটি হয় ইজারা প্রদান করুন না হয় খাস কালেকশন প্রদান করুন। তবে যতক্ষণ না মহালটি ইজারা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ধোপাজান নদী সংরক্ষণে পুলিশ প্রশাসন হার্ডলাইনেই থাকবে।
বিষয়: #ধোপাজান #নদী #পুলিশ #প্রশাসন #সংরক্ষণ #সুনামগঞ্জ #হার্ডলাইন