মঙ্গলবার ● ১৯ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ‘কথায় কথায়’ ঘুষ নেন বিদ্যুতের প্রকৌশলী, টাকা ছাড়া এখানে সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা
‘কথায় কথায়’ ঘুষ নেন বিদ্যুতের প্রকৌশলী, টাকা ছাড়া এখানে সেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা
আনোয়ার হোসেন রনি, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি ::
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ছাতক বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে আব্দুল মজিদ গত ২০২২ সালের ২৯ মার্চ ছাতকে যোগদানের পর থেকে ঘুস বানিজ্যে ওপেন সিন্ডিকেটের পরিনত হয়েছে। ঘুস ছাড়া এখানে গ্রাহকরা কোন সেবা পাচ্ছেন না বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এখানে আগে টাকা পরে কাজ এভাবে চলছে ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ বিভাগের অফিসের কর্মকান্ড। তবে তার বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের অন্ত নেই। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের এমন কোনো খাত নেই, যেখানে তিনি স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা অনিয়ম দুনীতি করেন না। পোস্ট-পেইড মিটারে ভূতুড়ে বিল, প্রি-পেইড সংযোগ দিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, বিদ্যুৎ অফিসেরই একজন কর্মচারী দিয়ে করেন মিটারের ব্যবসা। বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারণে খুঁটি প্রতি তিনি নেন ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, আর প্রতি কিলোওয়াট লোড বৃদ্ধিতে গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করেন অতিরিক্ত ১০ গুণ অর্থ। অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদার কে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘ ধরে চলছে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ-এসডি সহকারি প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান দুনীতি অনিয়মের এই কান্ড-কারখানা। অভিযোগের সূত্র ধরে সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক হিসেবে প্রথমেই মোবাইল ফোন দেওয়া হয় সাধারন কর্মচারি আল আমিনকে সে জানান, আবাসিক প্রি-পেইড সংযোগের এক কিলোওয়াট লোড বৃদ্ধিতে করণীয় জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতি কিলোওয়াট লোড বাড়াতে খরচ লাগবে আড়াই হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার টাকা সরকারি ফি এবং বাকি ৫০০ টাকা অফিসের আনুষঙ্গিক খরচ। এ অফিসে ‘এসডি স্যার (উপ-সহকারী প্রকৌশলী) এবং এক্সিয়েন স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ) নির্দেশেই আমি এই টাকা নিয়ে থাকি। আপনি তাদের সঙ্গে কথা বলুন।’এরপর গ্রাহক পরিচয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান ও সুমন চৌধুরী বলেন, অফিশিয়াল নিয়ম যদি ফলো করেন, আবাসিক সংযোগের লোড বাড়াতে হলে ১০০ ওয়াটের একটা সোলার প্যানেল বসিয়ে কাগজ জমা দিতে হবে। তবে সোলার প্যানেলের কাগজ দিতে না পারলে আমাদের লোকজন ম্যানেজ করে দেয়। আর সেজন্য তারা আড়াই হাজার টাকা নেয়।’শুধু লোড বৃদ্ধিতেই নয়, নতুন প্রি-পেইড সংযোগ পেতেও হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।
এসব অনিয়ম দুনীতি ও ঘুস কেলেংকারি ঘটনায় গত বৃম্পতিবার বিকালে মহরম আলী সুমন বাদী হয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ছাতক বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ,সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান, সুমন চৌধুরী ও ঠিকাদার আজিজুর রহমানসহ কর্মকতা ও কমচারিদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলা হয় একই সঙ্গে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিতে হচ্ছে নির্বাহী প্রকৌশলীকে। মিটারও কিনতে হয় নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছ থেকেই। মিটার বিক্রির জন্য প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ দায়িত্ব দিয়েছেন ”আল আমিন”‘ নামে একজন মিটার পাঠককে। আল-আমিনকে দিয়ে অফিসেই মিটারের রমরমা বাণিজ্য চলছে এ অফিসে। বাজারের স্বাভাবিক দরে নয়, তিনি গ্রাহকদের কাছে মিটার বিক্রি করেন বাড়তি দামে। গ্রাহকরাও হয়রানি এড়াতে বাধ্য হন তার কাছ থেকে মিটার কিনতে। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের সাত দিনের মধ্যে প্রি-পেইড সংযোগ পাওয়ার কথা গ্রাহকদের। কেউ যদি আল-আমিনের কাছ থেকে মিটার না কিনে বাজার থেকে কেনেন, তবে সেই গ্রাহকের ফাইল আটকে থাকে এক থেকে দুই মাস পযর্ন্ত। অনুসন্ধানে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া মিলছে। ছাতক বর্তমানে ৫৫০০ প্রি-পেইড মিটার রয়েছে। যার মধ্যে প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ দায়িত্বে থাকার সময়ে তিনি ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভাসহ ৫শ’৮টি গ্রামে ১২ হাজারের বেশী মিটার স্থাপন করেন। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি সব গ্রাহককে মিটার কিনতে বাধ্য করা হয়েছে বিদ্যুৎ অফিস থেকেই। রেজিষ্টার ফিস ৬শ’টাকা করে প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। উপজেলার লক্ষীপুর ইউপির কুলাউরা এলাকার বাসিন্দা মিল্লাদ মিয়া বলেন, ‘অস্বাভাবিক বিলের কারণে পোস্ট-পেইড মিটারের পরিবর্তে প্রি-পেইড সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট লাইনম্যানদের জানাই। তারা এর জন্য ১২ হাজার টাকা চেয়েছেন, বলেছেন এর কমে সংযোগ দেওয়া যাবে না। এটা নাকি অফিসের নিয়ম।’
অভিযোগ থেকে জানা যায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ছাতক বিতরণ বিভাগের পিডিবি ও সিলেটের বিদুৎ বিভাগীয় অফিস ও ক্ষুব্ধ মন্ত্রণালয়। বিদুৎ বিভাগ বলছে, দুর্নীতির কারণে ছাতকে একাধিক নিবাহী প্রকৌশলী ও সহকারি প্রকৌশলীকে বদলী করা হয়। সাবেক নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুনকে নানা অনিয়ম লুটপাটের ও বিভাগীয় শান্তিমূলক বদলী করেছেন ছাতক পিডিবি থেকে হবিগঞ্জে। হবিগঞ্জের দুনীতিবাজ নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদকে ছাতক পদায়ন করা হয়। নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ এখানে যোগদান করে দুনীতির মাত্র তিনগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের হিসাব তদন্ত করছেন দুদক । এসব লুটপাটের ঘটনার ধামাচাপা দিতে নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদের পক্ষে আওয়ামীলীগের দুনীতিবাজ ঠিকাদার আব্দুল আজিজ কোমড় বেধে বিভিন্ন দপ্তরে ধনা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদার আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে রয়েছে, সিলেট আদালতে লেবা্ের কাজ করিয়ে টাকা পয়সা আতœসাতসহ পুরাতন লাইন সংস্কারের কাজ না করেই ভুয়া বিল জমা দিয়ে প্রায় তিনকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিদুৎ গ্রাহকদের বিভিন্ন ব্যাংকের নাম ব্যবহার করে ব্যাংকের ভুয়া সিল মেরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ছাতক বিদুৎ বিতরন বিভাগের নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ। তার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট চত্রু গড়ে উঠেছে এ পিডিবি অফিসের মধ্যে। এ চত্রেুর মাধ্যমে ভুয়া বিল,বিদুৎ সংযোগ,,ট্রান্সফরমার বিকল, মিটার সংযোগ,ঝুকিপুন লাইন সংস্কারের নামে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে কাজ না করে তিন কোটি টাকা ভুয়া বিল জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। এসব বরাদ্ধের টাকা-গুলোর সংস্কারের কাজ না করে নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ আব্দুল আজিজ মিলে এসব টাকা গুলো ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। ছাতক-দোয়ারাবাজার ও শান্তিগঞ্জ এলাকায় ৪২হাজার বিদুৎ গ্রাহক রয়েছে। এসব বিদুৎ গ্রাহকদের ঝুকিপুন খাম্মা,এলটি লাইন সংস্কার না করেই ভুয়া বিল জমা দিয়ে বরাদ্ধের টাকাগুলো ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আতœসাত করেছে। এসব দুনীতির ঘটনার রহস্য বের হয়ে আসছে। গত ২৮ আগষ্ট ছাতক অগ্রণী ব্যাংক শাখায় বিদুৎ বিভাগের কর্মচারি আল-আমিনকে অগ্রণী ব্যাংক শাখা আটক করলে ও আব্দুল আজিজের মাধ্যমে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিদৎুতের হাজার হাজার গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা ভুয়া বিলের দায়-কে নেবে ? গ্রাহকরা জানায়, জনতা, অগ্রণী, পূবালী ও সহ ১০-১৫টি ব্যাংকের ভুয়া সিল বানিয়ে আল-আমিন নামে কর্মচারি দিয়ে পিডিবি নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ ও অবসরপ্রাপ্ত লাইন-ম্যান মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত এ প্রতারিত হচ্ছে। এ প্রতারক চত্রুরা ছাতক উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংক শাখাগুলোতে সিল ও বিল পরিশোধের ব্যাংক স্বাক্ষর দেয়ার একাধিক বিলের কপি এপ্রতিনিধির হাতে রয়েছে। আর এ পুরো বিষয়টিই ছিল প্রতারকের ফাঁদ। এমন অভিনব প্রতারণার ছক তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করেছে পিডিবি আব্দুল আজিজ, নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ, কমচারি আল আমিন ও অরসরপ্রাপ্ত লাইনম্যান মুজিবুর রহমান। এছাড়া বিদুৎ সংযোগের রেজিষ্টারে নামে লাখ লাখ টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়ার প্রতিনিয়ত ঘটনা ঘটছে এখানে। এব্যাপারে পিডিব নিবাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদকে তার অফিসে গিয়ে ও তাকে না পেয়ে তার মোবাইল নম্বার রিং দিলে রিং হচ্ছে কিন্ত কেউ রিসিভ করেনি।